প্রতীকী ছবি।
‘দিগ্ভ্রান্ত’ পুর-অ্যাপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ শুধু পুরকর্তারাই। কিন্তু নাগরিকদের ব্যালান্স শিটে ওই অ্যাপের স্কোর শূন্য! বরং একাংশের তীব্র সমালোচনার মুখেই পড়েছে বছর তিনেক আগে চালু হওয়া কলকাতা পুরসভার অ্যাপটি।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে চারটি মাধ্যমে নাগরিকদের থেকে পরিষেবা সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ করে পুরসভা। এর মধ্যে পুরসভার নিজস্ব পোর্টাল, কল সেন্টার যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে মোবাইল অ্যাপ ও হোয়াট্সঅ্যাপ। কিন্তু মোবাইল অ্যাপটির অবস্থা রীতিমতো শোচনীয়! অন্য অ্যাপের মতো সেটিও গুগ্ল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে হয়। প্লে স্টোরের তথ্য বলছে, এখনও পর্যন্ত মাত্র ১০ হাজার বার ডাউনলোড হয়েছে অ্যাপটি। কলকাতার মোট জনসংখ্যার কথা নয় বাদই দেওয়া গেল, কিন্তু পুরসভার নথি অনুযায়ী যেখানে প্রায় আট লক্ষ করদাতা রয়েছেন, সেখানেও ওই সংখ্যা নগণ্য! যাঁরা এখনও পর্যন্ত ডাউনলোড করেছেন, তাঁরাও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ওই অ্যাপের বিরুদ্ধে।
অ্যাপটির রেটিংয়ের নীচে মন্তব্যে করার জায়গায় জনৈক এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘ওয়ার্থলেস অ্যাপ!’ তাঁর অভিযোগ, অ্যাপে অভিযোগ দায়ের করলেও তা দেখার কেউ নেই। শুধুমাত্র এ রকম ‘ফ্যান্সি অ্যাপ’ রাখার অর্থ কী, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। আর এক ব্যক্তির অভিযোগ, যদুনাথ দে রোড চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠেছে ক্রমশ। বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। কিন্তু পুলিশ-পুর প্রশাসনে অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা হয়নি। তাঁর পরামর্শ, ‘প্লিজ কেউ অ্যাপটি ডাউনলোড করবেন না।’! অন্য এক জন জানাচ্ছেন, অ্যাপের ‘পারফরম্যান্স’ খুবই খারাপ। ওই ব্যক্তি আবার পুরসভার ওয়েবসাইট সম্পর্কে প্রশংসা করেছেন। অনেকে অভিযোগে জানান, অ্যাপ থেকে জন্ম ও মৃত্যুর শংসাপত্র দেখা যাচ্ছে না। মন্তব্যের বিভাগে গেলে দেখা যাবে, দীর্ঘতর হচ্ছে অভিযোগের তালিকা। কিন্তু নাগরিকেরা সমালোচনা করলে কী হবে, অ্যাপের প্রশংসা করেছেন পুরকর্তাদের একাংশ। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের আপ্ত-সহায়ক অম্লান লাহিড়ী যেমন প্রশংসা করেছেন অ্যাপটির। কমেন্ট বিভাগে তাঁর মন্তব্য, ‘অসাধারণ উদ্যোগ’! প্রশংসার কারণ ব্যাখ্যা করে অম্লানবাবু বলেন, ‘‘উদ্যোগটা ভাল। ভাল চলছেও।’’ কিন্তু পুরকর্তারা যতই শংসাপত্র দিন না কেন, অ্যাপটির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেই গিয়েছে। যে অভিযোগগুলি অ্যাপের মাধ্যমে দায়ের হয়, সেগুলি সম্পর্কে কোনও পদক্ষেপ করা হয় কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে।
যদিও পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, শুধু মোবাইল অ্যাপই নয়, হোয়াট্সঅ্যাপ-সহ অনলাইনের অন্য মাধ্যমে নাগরিকেরা নিজেদের অভিযোগ যাতে জানাতে পারেন, সে সম্পর্কে ক্রমাগত পরিকাঠামোয় উন্নয়ন করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, দিন দশেক আগেই পুর আইটি বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল পদে যিনি ছিলেন, তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন। পরবর্তী ডিজি দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন। বৈঠকও হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘পোর্টালে যেমন ভাবে অভিযোগ করা হয়, অ্যাপের মাধ্যমেও তা সম্ভব। তাতে তো কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বরং সারা দিনে প্রচুর অভিযোগ পাচ্ছি। সেগুলি সমাধানেরও চেষ্টা করা হচ্ছে। নাগরিকেরা তার প্রশংসাও করছেন।’’ কর্তৃপক্ষ আরও জানাচ্ছেন, সংশ্লিষ্ট মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে দেওয়া পুর পরিষেবার পরিধি যথেষ্ট বিস্তৃত। কোথায় কোথায় পে অ্যান্ড ইউজ টয়লেট রয়েছে, তা যেমন অ্যাপের মাধ্যমে দেখা যাবে, তেমনই বিল্ডিংয়ের নকশা অনুমোদন, মিউটেশন, সম্পত্তিকর সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে তার হিয়ারিং কবে, তাও জানার সুবিধা আছে। নাগরিকদের একাংশের অভিযোগ প্রসঙ্গে পুরসভার আইটি উপদেষ্টা সন্দীপন সাহা বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব। আমাদের তরফে নিয়মিত মনিটরিং হয়। তা সত্ত্বেও যদি কারও অভিযোগ থাকে ওই অ্যাপ নিয়ে, তা সমাধানের চেষ্টা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy