নামমাত্র যাত্রী সংখ্যার যুক্তি দেখিয়ে নিউ গড়িয়া-বেলেঘাটা এবং জোকা-মাঝেরহাট মেট্রোপথের একাধিক স্টেশনে আগেই বুকিং কাউন্টার তুলে দিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। এ বার সেই পথে হাঁটতে চলেছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোও। আগামী কাল, ১৬ নভেম্বর থেকে প্রতি রবিবার দিনের কম ব্যস্ত সময়ে (সকালে ও দুপুরে) ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সেন্ট্রাল পার্ক, সিটি সেন্টার, এসপ্লানেড এবং মহাকরণ— এই চার স্টেশনে বুকিং কাউন্টার খোলা থাকবে না। পরিবর্তে, প্রতি রবিবার ব্যস্ত সময়ে সেখানে একটি করে বুকিং কাউন্টার খোলা রাখার কথা জানিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
তাঁদের দাবি, বুকিং কাউন্টারের পরিবর্তে ওই সময়ে স্টেশনে যন্ত্র নির্ভর ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় ভেন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে টিকিট এবং স্মার্ট কার্ড কেনার ব্যবস্থা চালু থাকবে। আপাতত পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
তবে, এই সিদ্ধান্তের মধ্যে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর বিভিন্ন স্টেশনে ভবিষ্যতে বুকিং কাউন্টার পুরোপুরি ভাবে তুলে দেওয়ার আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা। শীতের মরসুমেসেন্ট্রাল পার্ক এবং সিটি সেন্টার স্টেশনে ছুটির দিনে যাত্রীদের আনাগোনা লেগে থাকে। বিভিন্ন মেলা, উৎসব ঘিরে ওই ভিড় হয়। ওই যাত্রীদের সকলে ডিজিটাল ব্যবস্থায় সড়গড় নন। এসপ্লানেড এবং মহাকরণ স্টেশনেও আগামী রবিবার থেকে সকাল ও দুপুরের সময়ে খোলা থাকবে না বুকিং কাউন্টার। অন্য দিকে, সপ্তাহের কাজের দিনগুলিতে এই চারটি মেট্রো স্টেশনে সকাল এবং সন্ধ্যার শিফটে মাত্র একটি করে বুকিং কাউন্টার খোলা থাকে। তাই ন্যূনতম ওই সংখ্যাতেও এ ভাবে কাটছাঁট করা কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই প্রশ্ন তুলছেন যাত্রীরা।
মেট্রোয় ট্র্যাফিক বিভাগে ৪০ শতাংশেরও বেশি পদ ফাঁকা। একক ভাবে ব্লু লাইনের হিসাবে ওই পদ শূন্য রয়েছে বলে মেট্রোর বিভিন্ন কর্মী সংগঠন সূত্রের খবর। তার মধ্যে মেট্রোর একাধিক নতুন পথে পরিষেবা সম্প্রসারণের ফলে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার নিচ্ছে। মেট্রোর দৈনিক যাত্রীদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ স্মার্ট কার্ড বা কিউআর কোডের টিকিট কেটে সফর করেন। সেই সংখ্যা দেশের অন্যান্য মেট্রোর তুলনায় কম নয়। দেশের অন্যান্য মেট্রোর তুলনায় কলকাতা মেট্রোয় কিলোমিটারপিছু যাত্রীর সংখ্যাও বেশি। অতিরিক্ত যাত্রী-সংখ্যার কারণেইদেশের মধ্যে একমাত্র কলকাতাতেই ব্রডগেজ লাইনে আট কোচের রেক ছোটাতে হয়। অথচ সেখানেই এ ভাবে কর্মী সঙ্কোচন মেট্রোর জনপ্রিয়তা কমাবে বলে মনে করছেন নিত্যযাত্রীদের একাংশ। এখনই বহু মেট্রো স্টেশনে প্রয়োজনের সময়ে কর্মীদের দেখা মেলে না।এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে নতুন যাত্রীদের কাছে মেট্রো নিয়ে আগ্রহ কমবে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে।
একই সঙ্গে ট্র্যাফিক বিভাগে কর্মী নিয়োগ না করে মেট্রো প্রশাসনের মাথায় আধিকারিকের সংখ্যা কেন বাড়ছে, সেই প্রশ্নও উঠছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য যন্ত্র ব্যবহার করে বিকল্প খোঁজার যুক্তি দিচ্ছেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)