E-Paper

জামিন পেয়েই বেপাত্তা অভিযুক্তেরা, থমকে বহু মাদক-মামলার বিচার

পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে যত মাদক পাচারকারী ধরা পড়ে, তাদের বেশির ভাগই মণিপুর বা ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বাসিন্দা। সেখান থেকে মাদক এনে এই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেয় তারা।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:৪০

—প্রতীকী চিত্র।

ঘটনা এক: ২০২১ সালের অগস্ট মাসে প্রায় তিন কেজি হেরোইন সমেত পাঁচ জনকে নিউ জলপাইগুড়ি রেল পুলিশ থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছিলেন রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা। ধৃতদের মধ্যে দু’জন ছিল মণিপুরের বাসিন্দা। হেফাজতে থাকা অবস্থাতেই তাদের বিরুদ্ধে জলপাইগুড়ির বিশেষ মাদক আদালতে শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। বিচার চলাকালীন বছর দুয়েক আগে জামিন পায় মণিপুরের ওই দুই বাসিন্দা, আজ়াদ খান এবং লালিজান বেগম। অভিযোগ, এর পর থেকেই তারা বেপাত্তা। আদালত ওই দু’জনের বিরুদ্ধে একাধিক বার সমন এবং নোটিস পাঠালেও হাজিরা দেয়নি তারা। যার ফলে মাঝপথে এসে বন্ধ হয়ে রয়েছে বিচার প্রক্রিয়া।

ঘটনা দুই: ২০২২ সালের অক্টোবরে একটি এসইউভি গাড়ির স্টেপনি থেকে প্রায় দু’কেজি হেরোইন উদ্ধার করে কাটোয়া থানা এবং রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। গ্রেফতার করা হয় মণিপুরের দুই বাসিন্দা-সহ চার জনকে। নির্দিষ্ট সময়ে গোয়েন্দারা চার্জশিট দেন। শুরু হয় মামলার বিচার। এরই মধ্যে বছরখানেক আগে কলকাতা হাই কোর্ট থেকে জামিন পায় ধৃত দুই মণিপুরি বিজয় মেতি এবং প্রেমচন্দ্র সিংহ। অভিযোগ, তার পর থেকে আর নিম্ন আদালতে হাজির হয়নি তারা। ফলে, বিচার প্রায় বন্ধ এই মামলাটিরও।

সূত্রের খবর, শুধু উপরোক্ত দু’টি ঘটনাই নয়। নিউ জলপাইগুড়ি, রায়গঞ্জ, বৈষ্ণবনগর, কোচবিহার, কাটোয়া-সহ রাজ্যের প্রায় ১৫টি থানায় দায়ের হওয়া বহু মাদক মামলার বিচার থমকে রয়েছে স্রেফ মণিপুরের অভিযুক্তেরা কলকাতা হাই কোর্ট থেকে জামিন পেয়ে বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার কারণে। এমন অভিযোগও উঠেছে যে, আদালতের তরফে মণিপুরের পুলিশকে নোটিসের প্রতিলিপি পাঠানো হলেও তারা সেই রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির কথা বলে অভিযুক্তদের খুঁজতে সাহায্য করছে না। এমনকি, রাজ্য পুলিশের তদন্তকারীদের ওই নোটিস বা সমন মণিপুরে অভিযুক্তদেরঠিকানায় পৌঁছে দিতে বলা হলেও সেখানকার স্থানীয় পুলিশের তরফে সাহায্য না মেলায় সেই প্রচেষ্টাও ফলপ্রসূ হচ্ছে না।

এক তদন্তকারী অফিসার জানান, এমনই একটি মামলায় ফেরার থাকা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে নিম্ন আদালত। কিন্তু অভিযোগ, সেই পরোয়ানা নিয়ে পাঁচ বার মণিপুরে যাওয়া হলেও সেখানকার পুলিশের তরফে সাহায্য না মেলায় সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী অফিসারকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে।

পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে যত মাদক পাচারকারী ধরা পড়ে, তাদের বেশির ভাগই মণিপুর বা ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বাসিন্দা। সেখান থেকে মাদক এনে এই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেয় তারা। গত কয়েক বছরে মাদক পাচারের অভিযোগে শুধু রাজ্য পুলিশের এসটিএফের হাতে যত জন ধরা পড়েছে, তাদের মধ্যে ২০ জনেরও বেশি মণিপুরের বাসিন্দা। ওই অভিযুক্তদের অধিকাংশ বিচার চলাকালীন জামিন পেয়ে বেপাত্তা হয়ে যাওয়ায় স্তব্ধ হয়ে রয়েছে সংশ্লিষ্ট মামলার বিচার। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, এতে যেমন এক দিকে অন্য অভিযুক্তেরাঅনায়াসে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তেমনই মণিপুরের মাদক পাচারকারীরা ফের নিজেদের রাজ্যে গিয়ে এই কারবার শুরু করছে।

রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, মাদক মামলায় ভিন্‌ রাজ্যের অভিযুক্তদের হাতে সমন বা নোটিস পৌঁছে দিয়ে কী ভাবে বিচার প্রক্রিয়ায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সেই বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা চলছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

drug case Verdict Law and Order

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy