Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Dengue Cases in Kolkata

দিল্লি অভিযানে ফিরহাদ, অতীন-সহ পুরকর্তারা, শহরে ডেঙ্গি-যুদ্ধে ব্যাঘাতের আশঙ্কা, বিতর্ক

রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী পদে থাকার পাশাপাশি কলকাতার মেয়র পদেও রয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। তাঁর সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেই রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যপাল।

An image of Firhad Hakim

কলকাতা মেয়র ফিরহাদ হাকিম। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৪৬
Share: Save:

পুজোর মুখে রাজ্যে ভয়াবহ দাপট বেড়েছে ডেঙ্গির। আক্রান্তের পাশাপাশি মৃতের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। অথচ, এমন সময়ে শহরে থেকে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার পরিবর্তে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দিল্লি-অভিযানে ব্যস্ত কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও ডেপুটি মেয়র তথা মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ। এমনকি, শাসকদলের অধিকাংশ পুরপ্রতিনিধি ও বরো চেয়ারম্যানও বর্তমানে দিল্লিতে রয়েছেন। কেউ কেউ আবার দীর্ঘদিন ধরে কলকাতার বাইরে শুটিংয়ে ব্যস্ত। রাজ্যে ডেঙ্গি পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ আকার নিয়েছে, তখন মেয়র ও মেয়র পারিষদের এই অনুপস্থিতি ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। মেয়রকে নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস স্বয়ং। বিরোধীদেরও অভিযোগ, ডেঙ্গি-ত্রাসের মধ্যে মেয়র, ডেপুটি মেয়র-সহ অধিকাংশ পুরপ্রতিনিধির দিল্লি-অভিযান অত্যন্ত বেমানান। এর ফলে শহরের ডেঙ্গি পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তাঁরা। যদিও মেয়রের দাবি, তিনি দিল্লিতে থাকলেও তাতে ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজে কোনও ব্যাঘাত ঘটবে না।

রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী পদে থাকার পাশাপাশি কলকাতার মেয়র পদেও রয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। তাঁর সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেই রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যপাল। তিনি লিখেছেন, ‘মন্ত্রী-মেয়র দুই পদে থেকে কি আর্থিক দিক থেকে লাভবান হচ্ছেন ফিরহাদ হাকিম?’ ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে এখন উত্তর ২৪ পরগনার পরেই রয়েছে কলকাতা। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের অভিযোগ, ‘‘ডেঙ্গিতে মৃতদের অনেকেরই পরিবার পুরসভায় ফোন করে মেয়রের খোঁজ পায়নি। পুরসভায় ফোন করলে বলা হচ্ছে, মেয়র নবান্নে আছেন। আবার নবান্নে খোঁজ নিলে বলা হচ্ছে, পুরমন্ত্রী পুরভবনে রয়েছেন। রাজভবনের শান্তিকক্ষে এ নিয়ে অনেক অভিযোগ এসেছে। ‘কলকাতার মেয়র নিখোঁজ’ বলে বিজ্ঞাপনও দিতে চাইছেন অনেকে।’’ এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী থেকে মেয়র, সকলেরই বক্তব্য, বিক্ষোভ দেখালেই কি ডেঙ্গি কমে যাবে? এমন অভিযোগেও রাজ্যপাল বিরক্ত বলে সূত্রের খবর।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক সপ্তাহে শহরে ৯৭৭ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। গত দু’দিন ধরে নাগাড়ে বৃষ্টি হওয়ায় ডেঙ্গির সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন পতঙ্গবিদেরা। এমতাবস্থায় শহরে ডেঙ্গি যখন প্রায় ‘মহামারি’র চেহারা নিয়েছে, তখন মেয়র ও ডেপুটি মেয়র-সহ অধিকাংশ পুরপ্রতিনিধির দিল্লি গমনের সমালোচনা করছেন বিজেপি পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাজ্যপাল ঠিকই বলেছেন। এই অবস্থায় মেয়র ও ডেপুটি মেয়রের কলকাতার বাইরে থাকার অর্থ, ডেঙ্গি আরও ভয়াবহ চেহারা নেবে। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) মশা মারতে ড্রোন ওড়াচ্ছেন। আর যখন তাঁর কলকাতায় বেশি করে থাকার কথা, তখনই তিনি উধাও!’’ কংগ্রেসের পুরপ্রতিনিধি সন্তোষ পাঠকের অভিযোগ, ‘‘ডেঙ্গি বৃদ্ধির কারণে রাজ্য তথা কলকাতা পুরসভা কর্মীদের ছুটি বাতিল করেছে। অথচ, মেয়র, ডেপুটি মেয়র দিল্লিতে ছুটি কাটাচ্ছেন! আমরা মেয়র, ডেপুটি মেয়রের পদত্যাগ দাবি করছি।’’

চলতি বছরে কলকাতা পুরসভার ১০ নম্বর বরো এলাকায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি সব চেয়ে বেশি খারাপ। গত ২২ জুলাই থেকে এখনও পর্যন্ত শহরে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর মোট সংখ্যা ১০। তার মধ্যে ৬ জনই ১০ নম্বর বরোর বাসিন্দা। অথচ, ওই বরোর চেয়ারপার্সন জুঁই বিশ্বাস এখন দলীয় কর্মসূচির কারণে দিল্লিতে। রাজধানীতে গিয়েছেন ওই বরোর ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধিও। আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে ১০ নম্বর বরোর পরেই ১২ নম্বর বরো। সেখানকার বরো চেয়ারম্যান-সহ আরও দু’জন পুরপ্রতিনিধিও দিল্লি গিয়েছেন। আবার ওই বরো এলাকার ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ১০ দিন ধরে কলকাতার বাইরে শুটিংয়ে ব্যস্ত। তাঁর ওয়ার্ডের কাজ সামলাচ্ছেন ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি অরিজিৎ দাসঠাকুর। সোমবার এ প্রসঙ্গে অরিজিৎ বলেন, ‘‘৮ অক্টোবর ফিরবেন অনন্যা। ওঁর ওয়ার্ডের বিভিন্ন মানুষকে শংসাপত্র দেওয়ার কাজে আমিই সইসাবুদ করছি।’’ যদিও ডেঙ্গির এই কঠিন সময়ে দীর্ঘদিন ধরে পুরপ্রতিনিধির অনুপস্থিতি ভাল চোখে দেখছেন না তাঁর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশ। এ নিয়ে অনন্যাকে ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ করা হলে উত্তর মেলেনি। পরে তাঁর ফোন থেকে এক জন ফোন করে বলেন, ‘‘দিদির খুব জ্বর। কথা বলার অবস্থায় নেই।’’

যদিও রাজ্যপালের অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র বলছেন, ‘‘রাজ্যপাল রাজনীতি করছেন। উনি মনোনীত, আমি নির্বাচিত প্রতিনিধি। কলকাতার মানুষের রায়ে আমরা বিগত পুর ভোটে ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩৩টিতে জিতেছি। বিজেপি মাত্র তিনটি ওয়ার্ডে জিতেছে। উনি যাদের হয়ে কথা বলছেন, তারা তিনে নেমে এসেছে। কলকাতার মানুষ ঠিক করবে, আমার কাজ ঠিক আছে কি না। ওঁকে দেখতে হবে না। আমার দিল্লিতে থাকার জেরে ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজে কোনও রকম ব্যাঘাত ঘটবে না।’’ এ বিষয়ে অতীনকে ফোন ও টেক্সট মেসেজ করা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE