E-Paper

পুজোর বাকি দু’সপ্তাহ, কুমোরটুলিতে এখনও ভিড় কম, মার খাচ্ছেন সাজ শিল্পীরা

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন যখন পুরোদমে চলেছে, সেই সময়ে পুজোর আগের কুমোরটুলির চেনা ছবিটা প্রায় দেখাই যায়নি। প্রতিমা তৈরির কাজ পুরোদমে চললেও সে সময়ে পটুয়াপাড়ায় ভিড় প্রায় ছিল না বললেই চলে।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৩৭
আগমন: পুজোর সপ্তাহ দুয়েক আগে মণ্ডপের পথে দুর্গা প্রতিমা। সোমবার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে।

আগমন: পুজোর সপ্তাহ দুয়েক আগে মণ্ডপের পথে দুর্গা প্রতিমা। সোমবার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

আর জি কর-কাণ্ডের জেরে গত মাসের শুরুর দিকে খানিক তাল কেটেছিল পটুয়াপাড়ার চেনা ছন্দের। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন যখন পুরোদমে চলেছে, সেই সময়ে পুজোর আগের কুমোরটুলির চেনা ছবিটা প্রায় দেখাই যায়নি। প্রতিমা তৈরির কাজ পুরোদমে চললেও সে সময়ে পটুয়াপাড়ায় ভিড় প্রায় ছিল না বললেই চলে। দুর্গাপুজোর মাত্র দু’সপ্তাহ আগেও সেই ছবির খুব একটা বদল ঘটেনি। বিশ্বকর্মা পুজোর পরে পটুয়াপাড়ায় আসা তরুণ-তরুণীদের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও তা অন্যান্য বছরের তুলনায় নগণ্য বলে দাবি করছেন মৃৎশিল্পীরা।

পুজোর মাসখানেক আগে থেকেই সাধারণত কুমোরটুলিতে আনাগোনা বাড়ে তরুণ-তরুণী ও চিত্রগ্রাহকদের। কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতির যুগ্ম সম্পাদক রণজিৎ সরকার সোমবার নিজের দোকানে বসে বললেন, ‘‘পুজোর দু’সপ্তাহ আগে কুমোরটুলিতে এত কম ভিড় আগে কবে দেখেছি, মনে পড়ছে না। মৃৎশিল্পীদের স্টুডিয়োয় ছবি তোলার জন্য নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে কুপন কাটতে হয় সকলকে। সেই টাকা এলাকার মানুষদের স্বাস্থ্য পরিষেবায় খরচ করা হয়। রবিবার ছবি তোলার ভিড়টাও সাধারণত বেশি থাকে। গত বছর প্রতি রবিবার কুপন কেটে গড়ে ১০-১২ হাজার টাকা করে সংগ্রহ করা হয়েছিল। গত রবিবার সেই টাকার পরিমাণ ছিল মাত্র চার হাজার।’’

কিন্তু কেন? মৃৎশিল্পী মিন্টু পালের দাবি, ‘‘আর জি করের নৃশংস ঘটনা সকলকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। তাই ঘটনার পরে বিচারের দাবিতে প্রথম তিন সপ্তাহ কলকাতা-সহ শহরতলির বিভিন্ন জায়গায় লাগাতার মিছিল, বিক্ষোভ হয়েছে। সেই সময়ে কুমোরটুলিতে কলেজপড়ুয়াদের আনাগোনা তেমন চোখে পড়েনি। বিশ্বকর্মা পুজোর পরে তরুণ-তরুণীরা পটুয়াপাড়ার দিকে মুখ ফেরালেও সংখ্যাটা এখনও বেশ কম।’’ এ দিন কাঁচরাপাড়া থেকে কুমোরটুলিতে ঘুরতে এসেছিলেন কলেজপড়ুয়া স্নেহা নন্দী, সুলগ্না রায়, দিঠি শূর। তাঁদের কথায়, ‘‘আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদ থেমে থাকবে না। আমরা নিজেরা এলাকায় রাতে মিছিলে হেঁটেছি। কিন্তু পুজোও তো থেমে থাকতে পারে না। তাই এ বার পুজোয় আমরা অসুর নিধনের সঙ্কল্প নেব।’’

মৃৎশিল্পীরা জানাচ্ছেন, পুজোর এক মাস আগে থেকেই উৎসবের মেজাজ দেখা যায়। প্রতিমা তৈরি দেখতে, ছবি তুলতে ভিড় জমান অনেকেই। রণজিতের কথায়, ‘‘আর জি করের ঘটনার আগেই অধিকাংশ মৃৎশিল্পীর কাছে বায়না হয়ে গিয়েছিল। তাই প্রতিমার বায়নার উপরে তেমন প্রভাব পড়েনি। বায়না বাতিল হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেনি। কিন্তু কোপ পড়েছে সাজ শিল্পীদের বিক্রিবাটার উপরে।’’ সাজ শিল্পী কমল পাল, বিনয় পালেরা জানালেন, মৃন্ময়ী প্রতিমাকে সাজানোর জন্য কুমোরটুলিতে প্রায় ৩০টি সাজ শিল্পের ছোট-বড় দোকান রয়েছে। আর জি কর-কাণ্ডের পরে উদ্যোক্তারা জৌলুসহীন পুজোর দিকে ঝুঁকে পড়ায় মার খাচ্ছে সাজ শিল্পের বিকিকিনি। রণজিতের সাজ শিল্পের দোকান রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আর জি কর-কাণ্ডের পরে ছোট-মাঝারি পুজোর উদ্যোক্তারা সাজের বায়না কমিয়ে দিয়েছেন। অনেকে বাতিল করেছেন। এতে মার খাচ্ছেন সাজ শিল্পের ব্যবসায়ীরা।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja 2024 Kumortuli Durga idol Artists

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy