লক্ষ্মীপুজোর বিসর্জনে এ বার বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে কলকাতা পুরসভা।—ফাইল চিত্র
‘বিরোধ’ আগেই প্রকাশ্যে এসেছিল। তবে তা সরাসরি নয়। এ বার শহরের ঐতিহ্যরক্ষায় কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ কমিটির উপরে ‘ভরসা’ না রেখে সরাসরি সক্রিয় হতে চলেছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। কমিশনের বক্তব্য, শহরে হেরিটেজ সংরক্ষণে নজর নেই পুরসভার হেরিটেজ কমিটির!
শহরে কোনও ভবন অথবা অন্য কোনও স্থানকে চিহ্নিতকরণ ও তাকে হেরিটেজ মর্যাদা ঘোষণার যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেয় পুরসভার হেরিটেজ কমিটি। কমিশনের দায়িত্ব মূলত জেলার হেরিটেজের বিষয়টি দেখভাল করা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ওল্ড কেনিলওয়ার্থ হোটেল-সহ শহরের একের পর এক ঐতিহ্যশালী বাড়ি বা ভবনের হেরিটেজ মর্যাদার অবনমন ঘটিয়ে সেগুলো ভাঙার অভিযোগ উঠেছে। এর পরেই পুরসভার হেরিটেজ কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হেরিটেজ বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কমিশনের দ্বারস্থ হয়ে তাঁদের প্রশ্ন, পুর কমিটি হেরিটেজ রক্ষায় ‘সদর্থক’ ভূমিকা না-নিলে কেন কমিশন হস্তক্ষেপ করবে না?
রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান, শিল্পী শুভাপ্রসন্নের কথায়, ‘‘কলকাতার হেরিটেজ ঘোষণার বিষয়টি পুরসভার হাতে থাকলেও তারা খুব একটা সক্রিয় নয়। কলকাতার দায়িত্ব আনুষ্ঠানিক ভাবে আমাদের না-হলেও বাড়িমালিকদের আবেদনের ভিত্তিতে সীমিত আইনি ক্ষমতায় শহরের হেরিটেজ রক্ষার চেষ্টা করছি।’’
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, লেক প্লেসে প্রয়াত এক সঙ্গীতকারের বাড়ি-সহ শহরের কয়েকটি বাড়িকে হেরিটেজ মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি ইতিমধ্যেই কমিশনের বিবেচনাধীন। তবে হেরিটেজ আইনের ধোঁয়াশার দিকটিও মনে করাচ্ছেন হেরিটেজ বিশেষজ্ঞেরা। প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘কলকাতার হেরিটেজ ঘোষণার দায়িত্ব কমিশন না কমিটির, তা স্পষ্ট নয়। যদিও কমিশন ‘মাদার-বডি’ হিসেবে কাজ করতেই পারে।’’
প্রসঙ্গত, হেরিটেজ ভবন সংক্রান্ত পুরসভার বর্তমান তালিকাটি পূর্ণাঙ্গ ভাবে প্রকাশ করা হয়েছিল ২০০৯ সালে। যদিও হেরিটেজ ভবনকে চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৯৯৭-’৯৮ সাল থেকেই।
পুরসভার তালিকার একটি ভাগে ‘গ্রেডেশন’-এর বিচারে শহরের বাড়ি, প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, পার্ক-সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানকে হেরিটেজ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আর একটি ভাগের ক্ষেত্রে (যার নাম ‘গ্রেডেশন পেন্ডিং’) স্থির হয়েছিল, পরবর্তী কালে ওই বাড়িগুলির ঐতিহাসিক, স্থাপত্য শৈলী-সহ অন্য গুরুত্ব বিচার করে নির্দিষ্ট ‘গ্রেড’ দেওয়া হবে। কিন্তু এখনও সে কাজ অসম্পূর্ণ!
যদিও পুর হেরিটেজ কমিটির সদস্যদের একাংশ জানাচ্ছেন, হেরিটেজ সংক্রান্ত বিষয়কে গুরুত্ব দিতে সাম্প্রতিক মেয়র পরিষদের বৈঠকে প্রায় ৫০টি হেরিটেজ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাশ হয়েছে। তা ছাড়া, এর আগে খিদিরপুরে ফ্যান্সি মার্কেট সংলগ্ন কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ির ক্ষেত্রে আদালত রাজ্য হেরিটেজ কমিশনকে মতামত দিতে বলেছিল। পুর হেরিটেজ কমিটির দাবি, মতামত দিলেও ওই বাড়ির গ্রেডেশন সংক্রান্ত ব্যাপারে কমিটির কোর্টেই বল ঠেলে দেয় কমিশন। ওই পুর কমিটির সদস্য প্রণব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিয়ম মতো কলকাতার হেরিটেজ ঘোষণার ক্ষেত্রে কমিশন সিদ্ধান্তই নিতে পারে না। কারণ, কমিশন হয়েছে অনেক পরে। পুর হেরিটেজ কমিটি আগে তৈরি হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy