অবাধে: বিমানবন্দরের আড়াই নম্বর গেট পর্যন্ত বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের এই উড়ালপুলে চলছে ভারী গাড়ি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
এক জনের রোগটা ধরা পড়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। কিন্তু তার ঠিকঠাক চিকিৎসা হয়নি। একই পরিবারের আর এক জনের সেই অসুখ ধরা পড়েছে মাস কয়েক আগে। কিন্তু তার চিকিৎসা কে করবে, তা নিয়েই এখন চলছে টানাপড়েন। দু’জনেরই রোগ নির্মূলের ক্ষেত্রে স্থায়ী ব্যবস্থা কী হবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়!
একই পরিবারের ‘গুরুতর অসুস্থ’ এই দুই সদস্য হল দু’টি সংযোগকারী উড়ালপুল। একটি বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের এয়ারপোর্ট সিটি-র সামনে থেকে শুরু হয়ে নেমেছে বিমানবন্দরের আড়াই নম্বর গেটের কাছে। অন্যটি রয়েছে ঠিক তার গা ঘেঁষে। সেটি বিরাটির শরৎ কলোনি থেকে শুরু হয়ে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের খলিসাকোটার কাছে নেমেছে।
ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় দু’টি উড়ালপুলেরই বেহাল অবস্থা ধরা পড়েছে। কিন্তু তাদের ‘রোগের’ চিকিৎসা করবে কে, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে জটিলতা। আর তাই উল্টোডাঙা কিংবা মাঝেরহাটের মতো ঘটনা এখানেও কোনও দিন ঘটবে কি না, তা নিয়ে আতঙ্কে স্থানীয় লোকজন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০০০ সালে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের উপরে ওই উড়ালপুল দু’টি তৈরি হয়। ২০০৭ সালে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রাজ্য পূর্ত দফতরের কাছ থেকে যায় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের হাতে। কিন্তু ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় সড়ক মন্ত্রক গেজেট নোটিফিকেশন করে ফের সেই দায়িত্ব পূর্ত দফতরকে দিয়েছে বলেই দাবি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের। যদিও পূর্ত দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত আমাদের কিছু হস্তান্তর করেননি।’’
উল্টো দিকে, পূর্ত দফতরের অন্দরের খবর, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ যে এলাকার দায়িত্ব তাঁদের দিতে চাইছেন, সেটি দফতর নিতে রাজি নয়। কারণ, ওই এলাকাটি দু’নম্বর জাতীয় সড়কের শেষ প্রান্তের সামান্য অংশ। ফলে সংস্কারের কাজ কে করবে, তা নিয়েই শুরু হয়েছে টানাপড়েন।
বিরাটি থেকে যে উড়ালপুলটি উঠেছে, সেটিতে প্রায় ছ’বছর আগে বড়সড় ফাটল দেখা দেয়। বেশ কয়েক বছর তাতে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। পরে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ মেরামতি করায় হাল্কা, ছোট গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে ভারী গাড়ি ওঠা আজও বন্ধ রয়েছে। ওই উড়ালপুলের সার্বিক মেরামতির আগে তার পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছরের পর বছর ঘুরে গেলেও আজও তা হয়নি। যে কারণে যশোর রোডের দিক থেকে আসা ভারী লরিকে বিরাটির তিন নম্বর গেটের কাছে মোড় ঘুরে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে হয়। যার ফলে প্রায়ই রাতে যানজট লেগে থাকে।
এই পরিস্থিতিতে মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময়েই বেশ কয়েকটি ফাটল ধরা পড়ে আড়াই নম্বর গেটের কাছে নামা উড়ালপুলটিতে। পূর্ত দফতরের কাছ থেকে বিষয়টি জানার পরেই কয়েক মাস আগে ওই উড়ালপুলে ‘ভারী গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ’ বলে নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার পরেও রাতে মালবোঝাই ভারী লরি ওই উড়ালপুল দিয়ে চলাচল করে চলেছে। স্থানীয় বাসিন্দা সমীরবরণ সাহা বলেন, ‘‘উড়ালপুলটিতে উঠলেই বোঝা যায়, সেটি কাঁপছে। নোটিস ঝোলানোর পরেও রাতে ভারী লরি আটকানো যায়নি। রাতে পুলিশ না থাকায় ওই ভারী গাড়ি আটকানোরও উপায় নেই।’’
বিষয়টি জানিয়ে বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারকে চিঠিও দিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখছি। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy