Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

জেলে বসেই খুনের ছক

লালবাজার সূত্রের খবর, এ ক্ষেত্রে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বসে এক দুষ্কৃতী খুনের ছক কষেছিল দক্ষিণ কলকাতার লেক এলাকার এক প্রোমোটারকে। সেই মতো গত সপ্তাহে ‘সুপারি’ দিয়ে ভাড়াটে খুনিদেরও পাঠানো হয়েছিল ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে। ঠিক ছিল, ব্যবসায়ী বাড়ি থেকে বেরোলেই তাঁকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে যাবে দুষ্কৃতীরা।

সুরবেক বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৭ ০০:২৪
Share: Save:

ফের জেলে বসে তোলা চেয়ে না পেয়ে প্রোমোটারকে খুনের ছক। তবে লালবাজারের গোয়েন্দারা আগেভাগে টের পেয়ে যাওয়ায় একটুর জন্য বেঁচে গেলেন ওই ব্যবসায়ী। মূল ষড়যন্ত্রী এক জন ও তার শাগরেদ সন্দেহে এক ব্যক্তিকে গোয়েন্দারা হেফাজতে পেয়েছেন। খোঁজ চলছে বাকিদের।

লালবাজার সূত্রের খবর, এ ক্ষেত্রে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বসে এক দুষ্কৃতী খুনের ছক কষেছিল দক্ষিণ কলকাতার লেক এলাকার এক প্রোমোটারকে। সেই মতো গত সপ্তাহে ‘সুপারি’ দিয়ে ভাড়াটে খুনিদেরও পাঠানো হয়েছিল ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে। ঠিক ছিল, ব্যবসায়ী বাড়ি থেকে বেরোলেই তাঁকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে যাবে দুষ্কৃতীরা।

ওই ছক কলকাতা পুলিশের দুঁদে গোয়েন্দাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০০২ সালের ৭ এপ্রিল নিউ আলিপুরে প্রোমোটার মহেশ অগ্রবাল খুনের ঘটনাকে। প্রেসিডেন্সি জেলে বসে তখনকার কুখ্যাত তোলাবাজ যিশু জৈন পাঁচ লক্ষ টাকা তোলা চেয়েছিল ওই ব্যবসায়ীর কাছে। কিন্তু তিনি দেননি। যিশুর পাঠানো ‘শার্প শ্যুটার’-রা গিয়ে তাঁকে খুন করেছিল। পুরোটাই জেলে বসে পরিকল্পনা করেছিল যিশু জৈন, রাজা দত্তেরা।

কিন্তু লেক এলাকার প্রোমোটারের ক্ষেত্রে লালবাজারের গোয়েন্দারা দুষ্কৃতী দলের এক জনের মোবাইল ফোনে আড়ি পেতে গোটা ঘটনা জেনে ফেলে ওই পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছেন। তার দু’দিন পরেই, বৃহস্পতিবার দমদম সেন্ট্রাল জেল থেকে গোয়েন্দারা সনৎ মণ্ডল নামে ওই দাগী দুষ্কৃতীকে আদালতের নির্দেশে হেফাজতে পেয়েছেন। শনিবার সনতের এক শাগরেদ, প্রসেনজিৎ ওরফে টিঙ্কা অধিকারীকে লেক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

কারা দফতর সূত্রের খবর, সনতের বাড়িও লেক এলাকায়। বছর সাতেক আগে লেক এলাকার একটি খুনের মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে সনৎকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, এক ব্যক্তিকে সে ছুরি চালিয়ে খুন করে। তার পর থেকে সে জেলে ছিল বিচারাধীন বন্দি হিসেবে। প্রথমে প্রেসিডেন্সি জেলে থাকলেও সেখানে গণ্ডগোল বাঁধানোর অভিযোগ ওঠায় তাকে পাঠানো হয় দমদমে।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, লেক এলাকার ব্যবসায়ীকে খুনের ছকে প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি এক ব্যক্তির জড়িত থাকার কথাও জানা যাচ্ছে। তার বাড়িও লেক এলাকায়।

তবে ওই ব্যবসায়ীকে খুন করতে যে সব সুপারি কিলার গিয়েছিল, তাদের কাউকে এখনও ধরা যায়নি। একটি মোটরসাইকেলে করে অন্তত দু’জন পৌঁছেছিল, এখনও পর্যন্ত কেবল এটুকু জেনেছেন গোয়েন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েক জনের কাছ থেকে ওই মোটরবাইকের রেজিস্ট্রেশন নম্বরের শেষ দু’টি সংখ্যা জেনে সেটির খোঁজ চলছে। তদন্তকারীদের একাংশের মতে, শুধু ওই মোটরসাইকেলে করে নয়, দুষ্কৃতীদের আর একটি দল ‘ব্যাক-আপ টিম’ হিসেবে আশপাশে ছড়িয়ে ছিল। তাদের পাঠানোর পিছনে প্রেসিডেন্সি জেলে বর্তমানে বন্দি ব্যক্তির ভূমিকা রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের একাংশের অনুমান।

পুলিশ সূত্রের খবর, প্রোমোটারকে খুনের পরিকল্পনার কথা মোবাইলে আড়ি পেতে জানার পরে তৎক্ষণাৎ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, তিনি যেন কোনও ভাবেই বাড়ি থেকে না বেরোন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE