Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তরুণী খুনের দু’মাস পর ফোনের সূত্রে ধৃত রাজমিস্ত্রি

পলাশিপাড়া থানা সূত্রের খবর, লক্ষ্মী হালদারের মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তারা তদন্তে নেমেছিল। দেখা যায়, জলঙ্গিতে মহিলার দেহ মেলাকর আগের দিন অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর একটি নির্দিষ্ট নম্বর থেকে ওই ফোনে ছ’বার ফোন করা হয়েছিল।

ধৃত বিনয়। নিজস্ব চিত্র

ধৃত বিনয়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পলাশিপাড়া  শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৫৬
Share: Save:

এক তরুণীকে খুনের প্রায় দু’মাস পরে মোবাইলের সূত্র ধরে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের নাম বিনয় বিশ্বাস। পেশায় রাজমিস্ত্রি, বাড়ি তেহট্টের রামচন্দ্রপুরে। পুলিশের দাবি, কাজ দেবে বলে নিয়ে গিয়ে সহবাসের পরে তরুণীকে সে খুন করেছিল।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার নাম লক্ষ্মী হালদার (৩০)। গত ১ নভেম্বর পলাশিপাড়ায় জলঙ্গি নদী থেকে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু তখন তাঁর পরিচয় কারও জানা ছিল না। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠায়। অন্য দিকে, চাপড়ার দৈয়েরবাজার এলাকার ভজন হালদার পুলিশে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীকে কাজ দেওয়ার নাম করে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল ‘বিনয়’ নামে এক জন। তার পর থেকে আর তাঁর খোঁজ নেই।

পলাশিপাড়া থানা সূত্রের খবর, লক্ষ্মী হালদারের মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তারা তদন্তে নেমেছিল। দেখা যায়, জলঙ্গিতে মহিলার দেহ মেলাকর আগের দিন অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর একটি নির্দিষ্ট নম্বর থেকে ওই ফোনে ছ’বার ফোন করা হয়েছিল। প্রতি বারই উভয়ের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়। সেই নম্বরের তথ্য ঘেঁটে জানা যায়, সেটি মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা জুলু শেখের। অথচ গত কয়েক মাস তাঁর ‘টাওয়ার লোকেশন’ মুর্শিদাবাদে নয়, বেশির ভাগ সময়ে পলাশিপাড়ার আশপাশের গ্রামে দেখাচ্ছে। মৃতদেহ মেলার আগের দিন লোকেশন ছিল কখনও চাপড়া, কৃষ্ণনগর, ধুবুলিয়া, আবার কখনও নাকাশিপাড়ায়। সন্ধ্যায় পলাশিপাড়া ও রাতে পাশের গোপীনাথপুরে ছিল ‘লোকেশন’। নাকাশিপাড়া থানার ওসি সুজয় মণ্ডল বলেন, ‘‘এতেই আমাদের সন্দেহ বাড়তে থাকে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, একটি অ্যাপ ব্যবহার করে জানা যায়, ওই নম্বরটি ‘বিনয়’ নামে কেউ ব্যবহার করেন। ভজনের অভিযোগেও বিনয়ের নাম থাকায় পুলিশ আরও নিশ্চিত হয়। ওই এলাকার কয়েক জন বিনয়কে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তেহট্ট থানার রামচন্দ্রপুরের বছর সাতচল্লিশের বিনয় বিশ্বাসের কথায় অসংলগ্নতা ধরা পড়ে। এক সন্তানের মা লক্ষ্মীকে খুন করা হয়েছে বলে পলাশিপাড়া থানায় সোমবার অভিযোগ জানান ভজন। ওই রাতেই বিনয়কে গ্রেফতার করা হয়। তার নিজের সংসার রয়েছে, এক মেয়ের বিয়েও হয়ে গিয়েছে। ‘জুলু শেখ’ নামে জাল সিম তুলে ব্যবহার করছিল সে।

পুলিশের দাবি, বিনয় খুনের কথা কবুল করেছে। জেরায় সে জানিয়েছে: লক্ষ্মী তাদের পাড়ায় এক জনের বাড়িতে এসেছিলেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে তার আলাপ। ফোনে তাঁদের যোগাযোগ ছিল। ঘটনার দিন কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে লক্ষ্মীকে সে কৃষ্ণনগর স্টেশনে ডাকে। তার পর তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেনে পলাশি যায়। টোটোয় চেপে সন্ধ্যায় পলাশিপাড়ায় পৌঁছে রামচন্দ্রপুরে জলঙ্গির চরে তারা সহবাস করে। তার পরে লক্ষ্মী তার কাছে দু’হাজার টাকা চাইলে গলায় কাপড়ের ফাঁস দিয়ে তাকে খুন করে সে। তাঁর মোবাইল থেকে সিম ফেলে দিয়ে ফোনটি নিয়ে বাড়ি ফিরে যায় বিনয়। তার পরেও দিব্যি স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিল সে। মঙ্গলবার তেহট্ট আদালতে হাজির করানো হলে তাকে ছ’দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Crime Arrest Tehatta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE