Advertisement
E-Paper

Coronavirus: ‘প্রুফ রিডার’-এর জোরে টিকে থাকতে চাইছে করোনাভাইরাস

উন্নততর প্রাণীর মতো করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও এই ‘বিশেষ বৈশিষ্ট’ লক্ষ করা যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানী-গবেষকেরা।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:৩৪
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

‘প্রুফ রিডার’ সঙ্গে নিয়ে বসে রয়েছে। তাই ভুলভ্রান্তি হবে কী করে? আর এই বৈশিষ্টই করোনাভাইরাসের সংক্রামক হয়ে ওঠার নেপথ্যে একটি কারণ বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

বিষয়টির ব্যাখ্যা করে তাঁরা জানাচ্ছেন, ডিএনএ জিনের ‘রেপ্লিকেশন’ বা অনুকৃতির ক্ষেত্রে নতুন জিন, আদি জিনের অনুরূপ হয়েছে কি না, তা জিনের নিজস্ব ‘মেশিনারি’ এক বার মিলিয়ে দেখে নেয়। মানে যে নতুন পাতাটি ছাপা হল, তার প্রতিটি লাইন, শব্দ, বানান মূল পাতার সঙ্গে মিলছে কি না, তা যেন বুঝেশুনে দেখে নিচ্ছেন এক জন ‘প্রুফ রিডার’। না হলে নতুন পাতায় কোনও ভুল থেকে যেতে পারে। এবং সেই ভুল নিয়েই পরের পর পাতা ছাপা হতে পারে, অর্থাৎ তা বংশানুক্রমে চলতে থাকবে। উন্নততর প্রাণীর জিনের ক্ষেত্রে এই ‘প্রুফ রিডিং’-এর বৈশিষ্ট দিয়েছে প্রকৃতি।

কিন্তু উন্নততর প্রাণীর মতো করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও এই ‘বিশেষ বৈশিষ্ট’ লক্ষ করা যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানী-গবেষকেরা। এমনিতে করোনাভাইরাসের গঠন আরএনএ-র। রোগীর শরীরে বা ‘হোস্ট সেল’-এ ঢুকে এই ভাইরাস নিজেকে ‘রেপ্লিকেট’ শুরু করলে ভ্যারিয়েন্টগুলি আদি ভাইরাসের চিহ্ন বহন করছে কি না, তা খতিয়ে দেখে নিচ্ছে ওই ‘প্রুফ রিডিং’ বৈশিষ্ট। কোনও রকম ত্রুটি থাকলে তা দ্রুত সংশোধন করে নিচ্ছে ভাইরাস। আর এর ফলেই ক্রমাগত মিউটেট হলেও টিকে থাকতে পারছে করোনাভাইরাস। এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

মাইক্রোবায়োলজিস্ট সুখেন্দু মণ্ডলের বক্তব্য, সব ভাইরাসের ‘প্রুফ রিডিং’-এর বৈশিষ্ট থাকে না। কিন্তু সার্স-কোভ-২-এর তা রয়েছে। এই বৈশিষ্ট না থাকলে হয়তো ক্রমাগত মিউটেশনের কারণে এত দিনে বিলুপ্ত হয়ে যেত বা নির্দিষ্ট বাহকের পরিবর্তন করত করোনাভাইরাস। এক ‘হোস্ট’ ছেড়ে অন্য ‘হোস্ট’, অর্থাৎ মানুষের পরিবর্তে অন্য প্রাণীকে বেছে নিত টিকে থাকার জন্য। কারণ, প্রতি বার ‘রেপ্লিকেশন’-এর পরেই সৃষ্ট অগুনতি ভ্যারিয়েন্টের অনেকগুলিই পরিবেশের সঙ্গে খাপ না খাওয়াতে পেরে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। প্রতিটি ভ্যারিয়েন্টকেই টিকে থাকার জন্য একটি ‘ফিটনেস কস্ট’ দিতে হয়। যারা এই ‘ফিটনেস’ মূল্য দিতে পারে, তারা টিকে থাকে। বাকিরা অবলুপ্ত হয়ে যায়। সুখেন্দুবাবুর কথায়, ‘‘করোনাভাইরাসের ‘প্রুফ রিডিং’ বৈশিষ্টের জন্য অগুনতি ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হলেও তা যথাসম্ভব আদি কোষের অনুরূপ হওয়ার চেষ্টা করছে। যাতে তারা টিকে থাকতে পারে। অর্থাৎ, মানুষকে সংক্রমিত করার মাধ্যমে নিজস্ব সাম্রাজ্য বিস্তার করতে পারে।’’ ‘মাইক্রোবায়োলজিস্ট সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’-র প্রেসিডেন্ট অরবিন্দ এম দেশমুখ আবার জানাচ্ছেন, ‘প্রুফ রিডিং’ বৈশিষ্ট থাকা সত্ত্বেও এমন অনেক এলোমেলো (র‌্যান্ডম) মিউটেশন হয়, যার ফলে নতুন ভ্যারিয়েন্ট সৃষ্টি হয়। সেই নতুন ভ্যারিয়েন্ট সে ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পেতে পারে। অর্থাৎ, তা বেশি সংক্রামক হয়ে উঠতে পারে। অরবিন্দবাবুর কথায়, ‘‘মোদ্দা কথা হল, করোনা টিকে থাকতে চাইছে। এবং অন্য যে কোনও ভাইরাসের মতোই নিজের বংশবিস্তার করতে চাইছে। তার জন্য নিজেকে যতটা পরিবর্তন করা দরকার, তা করছে। এমন নয় যে সব ভ্যারিয়েন্টই টিকে থাকতে পারছে। যে ভ্যারিয়েন্টগুলি শুধুমাত্র পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করতে পারছে, সেগুলিই থাকছে।’’ মাইক্রোবায়োলজিস্ট বিশ্বরূপ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘যে হেতু করোনাভাইরাসের ক্রমবিবর্তন ঘটে চলেছে, তাই ওমিক্রনের পরে অন্য স্ট্রেনও আসতে পারে।’’

COVID19 Coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy