Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

উদ্বেগে ভিড় কমল দুই মন্দিরে, নজর চরণামৃতেও

সুনসান: ফাঁকা দক্ষিণেশ্বর মন্দির চত্বর (বাঁ দিকে)। কালীঘাটে ঘুম দোকানির (ডান দিকে)। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

সুনসান: ফাঁকা দক্ষিণেশ্বর মন্দির চত্বর (বাঁ দিকে)। কালীঘাটে ঘুম দোকানির (ডান দিকে)। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস ঘটক ও শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২০ ০৩:১৪
Share: Save:

পুজোর পেঁড়ার দোকান ফাঁকা। বেলা ১১টাতেই দোকানের ভিতরে চাদর বিছিয়ে ঘুম দিচ্ছেন দোকানিরা। বেলা আরও গড়ালে রোদের তাপ থেকে বাঁচতে মন্দির চত্বরে কাপড় বিছিয়ে ঘুমে ঢলে পড়েছেন ভিক্ষুকের দল। সব মিলিয়ে খাঁ খাঁ করছে গোটা মন্দির চত্বর।

করোনা-আতঙ্কের জেরে সোমবার এমন ছবি দেখা গেল কালীঘাট মন্দিরে। সরকারি ভাবে এখনও পর্যন্ত ওই মন্দিরে দর্শন, পুজোর ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও সংক্রমণের আতঙ্কে কালীঘাটে পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের ভিড়ের পরিচিত ছবিটা আচমকাই বদলে গিয়েছে।

অনেকটা একই অবস্থা দক্ষিণেশ্বর মন্দিরেও। অন্য সময়ে রোজ সকাল ও বিকেলে মন্দির খুলতেই পুজো দেওয়ার লম্বা লাইন পড়ে যায় দক্ষিণেশ্বরে। এ দিন বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, কার্যত ফাঁকা মন্দির চত্বর। লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার বদলে অল্প সময়ের মধ্যেই পুজো সেরে বেরিয়ে আসছেন মুখে মাস্ক পরা দর্শনার্থীরা। দুর্গানগরের বাসিন্দা নন্দিতা গাইন বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যেই দক্ষিণেশ্বরে আসি। কিন্তু যা ভিড় হয় আজ তার দশ ভাগের এক ভাগও নেই। করোনা-আতঙ্কে ভিড় এড়াতেই বোধহয় এমন অবস্থা।’’

দক্ষিণেশ্বরে পাণ্ডার মাধ্যমে পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা না-থাকলেও কালীঘাটে প্রায় হাজার দুয়েক পাণ্ডা রয়েছেন। করোনা-উদ্বেগের জেরে কালীঘাটে বাজার মন্দা যাচ্ছে তাঁদেরও। এক পাণ্ডা মঙ্গল ঘোষাল বলেন, ‘‘মঙ্গল ও শনিবার হাজারখানেক টাকা আয় হয়। বাকি দিনে প্রায় ৩০০-৪০০ টাকা। সেখানে গত কয়েক দিনে ১০০ টাকাও আয় হয়নি।’’ কালীঘাট ও দক্ষিণেশ্বর, দুই জায়গাতেই আসা দর্শনার্থীরা এ দিন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুজো দিয়ে মন্দির ছেড়েছেন। দুই জায়গাতেই অহরহ শোনা যেত মন্দিরের ঘণ্টার শব্দ। সেখানে এখন আতঙ্কের জেরে হাতেগোনা কয়েক বার মাত্র শোনা যাচ্ছে সেই শব্দ।

কালীঘাট মন্দিরের এক সেবায়েত জানান, মঙ্গল ও শনিবার ছাড়া অন্য দিনে গড়ে হাজার পাঁচেক লোকের সমাগম হয় সেখানে। কিন্তু গত শনিবার থেকে সেই সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। রবিবার লোকজন ছিল কম। সোমবার তা তলানিতে ঠেকেছে। কালীঘাট মন্দির কমিটির সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুজোর চরণামৃতের বিষয়ে নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পানীয় জলের দিকটাও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

কালীঘাটে প্রায় ৪৫০-৫০০ পেঁড়ার দোকান রয়েছে। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকার বিক্রিবাটা হয়। সেখানে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ৫০০০ টাকারও বিক্রি হয়নি বলে দাবি দোকানিদের। একই হাল দক্ষিণেশ্বরের ডালা আর্কেডেও। সেখানকার ৫৮টি দোকানে প্রতিদিনই ঠাসা ভিড় থাকে দর্শনার্থীদের। বাসি পেঁড়ায় পুজো হয় না। আবার টাটকা পেঁড়াও পড়ে থাকছে। অগত্যা মঙ্গলবার থেকে পেঁড়া তৈরি এবং অর্ডার দেওয়া বন্ধ রাখছেন কালীঘাট ও দক্ষিণেশ্বরের দোকানিরা। দক্ষিণেশ্বর ডালা আর্কেডের দোকানি বিশ্বরঞ্জন বেরা বলেন, ‘‘পেঁড়া, ফুল সবই কম রাখছি। যাতে দিনেরটা দিনেই বিক্রি হয়ে যায়।’’

এ দিন ওই দুই জায়গায় দুপুরে ভোগের লাইনেও তেমন ভিড় ছিল না। কয়েক দিন পরেই অমাবস্যা। পাণ্ডা ও দোকানিদের আশা, তখন ফের দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Dakshineswar Adyapith
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE