বিশ-এর সমাপ্তিতে কি আদৌ বিষ-ক্ষয় হবে? বর্তমান সময়ে আলোচ্য বিষয়ের এক নম্বরে অবশ্যই কোভিড টিকা নিয়ে আগ্রহ। তার পরের প্রশ্নই, করোনা কবে বিদায় নেবে?
স্বাস্থ্য কর্তারা বলছেন, বিষ-ক্ষয় সম্ভব কোভিডের যাবতীয় সতর্কতা মেনে চললেই। করোনা সংক্রমিতের হার কিছুটা নিম্নমুখী ঠিকই, সুস্থতার হারও আক্রান্তের তুলনায় বেশি। তবে এই তথ্যের ভিত্তিতে সামান্য ঢিলেমি যাবতীয় প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দিতে পারে। এখন কলকাতা এবং পড়শি দুই ২৪ পরগনায় যত অ্যাক্টিভ রোগী রয়েছেন, গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি সেই সংখ্যাটা এর কাছাকাছি ছিল। মনে রাখতে হবে, তার পর থেকে আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে শুরু করে। যার মূল কারণ, মানুষের অসতর্কতা।
বছরের প্রথম দিন কলকাতায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৬০৫। সে দিনই শহরে আক্রান্ত হয়েছেন ২৮০ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩৫১ জন। অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ২৬৯০। ওই দিন উত্তর ২৪ পরগনায় অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ১৯৯০। আর দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সেই সংখ্যা ২৫৩। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে তিন জেলাতেই সুস্থতার সংখ্যা আক্রান্তের তুলনায় বেশিই। এতেই আশা দেখছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গত এক মাসে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা যে ভাবে কমেছে, তাতে আগামী এক মাসে এই জেলায় করোনা আক্রান্ত আরও কমবে বলে মনে করছেন তাঁরা। যদিও সবটাই নির্ভর করছে জনসাধারণের উপরে।
গত বছর মে-র মাঝামাঝি কলকাতায় করোনার বাড়াবাড়ি শুরু হয়। ১ জুন, যে দিন থেকে আনলক-১ পর্বের শুরু, সে দিন কলকাতায় ৫৪ জন আক্রান্ত হন। সে দিন জেলায় অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ১০৪০। ওই দিন উত্তর ২৪ পরগনায় ১৮ জনের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ১০৮।
আরও পড়ুন: শোভন-বৈশাখীর সোমবারের বাইক র্যালিতে অনুমতি নয়, জানাল লালবাজার
জুলাই থেকে শুধুই আক্রান্তের রেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী হতে দেখা গিয়েছে। সেই সময়ে স্বাস্থ্য কর্তাদের চিন্তার বিষয় ছিল সুস্থতার হার। আক্রান্তের তুলনায় সুস্থতার হার এতটাই কম ছিল যে, অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১ জুলাই কলকাতায় আক্রান্ত হন ২৩৮ জন। উত্তর ২৪ পরগনায় আক্রান্ত হন ১৫৩ জন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সেই সংখ্যা ছিল ৪১। সে দিন তিন জেলায় অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৯৫৮, ১২৩২ এবং ৫৭০।
এক মাসে অ্যাক্টিভ রোগীর বৃদ্ধির হার কার্যত আতঙ্ক তৈরি করে রাজ্যে। ১ অগস্ট কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনায় আক্রান্ত হন ৭১৪ এবং ৬০৮ জন। সে দিন কলকাতায় অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৪৮৫, উত্তর ২৪ পরগনায় ছিল ৪৯৯৪। ওই দিন কলকাতায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। উত্তর ২৪ পরগনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১৬ হাজার। এই সময়ে অবস্থা এমন হয় যে, দুই ২৪ পরগনার শহরতলি এলাকায় নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করে স্থানীয় প্রশাসন।
মাস্ক ছাড়া চিড়িয়াখানা ঘুরতে আসা দর্শকদের নাম-ঠিকানা লিখে রাখছেন এক পুলিশকর্মী। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
সেপ্টেম্বর থেকে সংক্রমিতের সঙ্গে সুস্থতার হার কিছুটা বাড়তে থাকে। ফলে কমে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যাও। অক্টোবর থেকে ফের সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও বাড়তে থাকে সংক্রমিতের সংখ্যা। ১ অক্টোবর কলকাতা উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৬৬৯, ৬৪৬ এবং ২৩১।
অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ ছিল নভেম্বরের প্রথমে। ১ নভেম্বর কলকাতায় অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৯৭১। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সেই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৬৬৮৯ ও ২৭৮১। নভেম্বরে কলকাতার মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। উত্তর ২৪ পরগনায় সে দিন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৭ হাজার ছোঁয়।
নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকেই আক্রান্তের হার কমতে শুরু করে। সঙ্গে বাড়তে থাকে সুস্থতার হার। ফলে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করে। ১ ডিসেম্বর কলকাতায় আক্রান্ত হন ৮০৭ জন। সুস্থ হন ৯৪৬ জন। ওই তারিখে উত্তর ২৪ পরগনায় আক্রান্ত হন ৭৯৬ জন। সুস্থ হন ৯৫২ জন। পুরো ডিসেম্বরেই এই ধারা বজায় ছিল। শনিবার, ২ জানুয়ারি কলকাতায় আক্রান্ত হন ২১১ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩৪৪ জন। অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ২৫৪৯। উত্তর ২৪ পরগনায় শনিবার অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ১৯৩৮।
আরও পড়ুন: বাংলায় কত ভোট পাবে তৃণমূল? অভ্যন্তরীণ হিসেবে স্বস্তিতে ঘাসফুল
উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, “এখন আক্রান্তের সংখ্যা কমছে। এই সময়ে আরও সাবধান হতে হবে। এখনও অনেকে মাস্ক পরছেন না। এই সময়ে ঢিলে দেওয়া মানেই ফের করোনায় আক্রান্তের রেখচিত্র উঠতে থাকবে। সচেতন থাকলে এক-দু’মাসের মধ্যেই সংক্রমণ আরও কমবে।”