Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Corona

কোভিডে মৃতের দেহ নিতে ডোম নিয়োগ হাসপাতালে

করোনায় মৃতদের দেহের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য রাজ্যের একাধিক হাসপাতালে ডোম নিয়োগ করছে স্বাস্থ্য দফতর।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২১ ০৫:০৬
Share: Save:

কোথাও মর্গ থেকে মৃতদেহ বার করে আনতে হবে। কোথাও আবার ওয়ার্ড থেকে মৃতদেহ শববাহী গাড়িতে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সেই মৃতদেহ নেওয়ার জন্য অনেক সময়েই কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ মৃতেরা সকলেই কোভিড পজ়িটিভ! পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশে সাম্প্রতিক সার্স কোভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য যে মৃত্যুমিছিল চলেছে, এ সবই তার খণ্ডচিত্র। এই পরিস্থিতিতে অবস্থা সামাল দিতে এবং করোনায় মৃতদের দেহের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য রাজ্যের একাধিক হাসপাতালে ডোম নিয়োগ করছে স্বাস্থ্য দফতর।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ডোমেদের আগামী ছ’মাসের জন্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই কলকাতার আর জি কর হাসপাতাল, নদিয়া জেলার হাসপাতালগুলির জন্য ডোম নিয়োগ করা হয়েছে। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে আবার অতিরিক্ত চার জন ডোমকে ছ’মাসের মেয়াদে নিয়োগ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, এ ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না। কারণ পরিবারের লোকেরাও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মৃতদেহের কাছে যেতে পারছেন না। সে কারণে এমন ঘটনাও হামেশাই ঘটছে যে মৃতদেহ পড়ে থাকছে, অথচ তা সৎকারে নিয়ে যাওয়ার কেউ নেই।

গত বছরের শেষের দিকে পরিস্থিতি তুলনামূলক ভাবে কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সব কিছু ফের তালগোল পাকিয়ে দিয়েছে। সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘মৃত্যু যে এতটা নিঃসঙ্গ হতে পারে, তা করোনা সংক্রমণের আগে বোঝা যায়নি। ওয়ার্ড বা মর্গ থেকে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময়েই লোকের অভাব পড়ছে। করোনা-বিধির কারণে পরিবার-পরিজনেরাও কাছে আসার সুযোগ পাচ্ছেন না।’’

তবে এই পরিস্থিতি তৈরির পিছনে জনগোষ্ঠীর একাংশ এবং রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচনী প্রচারের ‘উৎসব’-কে দায়ী করছেন অনেকে। এক জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘আমাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে অন্যের পরিবারে কী বিপর্যয় আসতে পারে, তা আমরা একবারও ভাবলাম না!’’ আর এক সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘যাঁরা এই পরিস্থিতিতে প্রিয়জনদের হারাচ্ছেন, একমাত্র তাঁরাই বুঝতে পারছেন কী নির্মম পরিস্থিতি! দূর থেকে দেখতে হচ্ছে প্লাস্টিকে মোড়া প্রিয়জনের দেহের চলে যাওয়া! আমরা কি এর পরেও সংবেদনশীল হব?’’ গত ছ’মাসের পরিসংখ্যান দিয়ে বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, কী ভাবে শুধুমাত্র দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা একটা সময়ে কম থাকলেও ফের তা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। যেমন ২০২০ সালের ১, ১০, ২০ ও ৩০ নভেম্বর দৈনিক মৃতের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫৯, ৫৩, ৫০ ও ৪৮ জন। ১, ১০, ২০ ও ৩১ ডিসেম্বর দৈনিক মৃতের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫২, ৪৯, ৪০ এবং ২৯ জন। চলতি বছরের ১, ১০, ২০ ও ৩১ জানুয়ারি মৃতের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২৬, ১৯, ৬ এবং ৯ জন। ১, ১০, ২০ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক মৃতের সংখ্যা কমে আসে যথাক্রমে ৬, ৫, ৪ এবং ২ জনে। তার পরের মাসে, অর্থাৎ, গত ১, ১০, ২০ এবং ৩১ মার্চ তা আরও কমে দাঁড়ায় দৈনিক যথাক্রমে ০, ২, ২ এবং ২ জনে। চলতি মাসের ১, ১০ ও ২০ এপ্রিল মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২, ১২, ৪৬ জন। শনিবার সেই সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৯ জনে!

স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ অবশ্য ডোম-নিয়োগ নিয়ে কোনও বিতর্কে যেতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, প্রয়োজনের ভিত্তিতে ডোমেদের নিয়োগ করা হচ্ছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানাচ্ছেন, করোনা সংক্রমিত মৃতদেহের ব্যবস্থাপনা ‘স্পেশ্যালাইজ়ড জব’। তাঁর কথায়, ‘‘কারণ এ ক্ষেত্রে পরিবার-পরিজনেরা অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। তাই প্রয়োজনের ভিত্তিতে ডোমেদের নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona coronavirus COVID19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE