Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in Kolkata

Coronavirus in Kolkata: ‘যদি ভাবেন করোনা নেই, তা হলে বড় ভুল করবেন’

পুরসভা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ অগস্ট কলকাতা শহরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮০ জন। ১১ অগস্ট সংখ্যাটা ছিল ৭৮।

বেহুঁশ: করোনার ভয় রয়েছে এখনও। তবু মাস্ক ছাড়াই পথে। কারও মাস্ক নেমেছে থুতনিতে। সোমবার, ধর্মতলায়।

বেহুঁশ: করোনার ভয় রয়েছে এখনও। তবু মাস্ক ছাড়াই পথে। কারও মাস্ক নেমেছে থুতনিতে। সোমবার, ধর্মতলায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২১ ০৬:৩০
Share: Save:

কয়েক সপ্তাহ আগেও কলকাতা পুরসভা এলাকায় করোনায় আক্রান্তের দৈনিক সংখ্যাটা চল্লিশ-পঞ্চাশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। কিন্তু গত ১০ অগস্ট থেকে সেই সংখ্যা ক্রমে বাড়তে থাকায় বর্তমানে তা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, টানা কয়েক দিন সংক্রমণের হার একই থাকাটা ভাল লক্ষণ নয়। এই পরিস্থিতিতে করোনা-বিধি মেনে চলায় শিথিলতা দেখা দিলে সংক্রমণের প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

পুরসভা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ অগস্ট কলকাতা শহরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮০ জন। ১১ অগস্ট সংখ্যাটা ছিল ৭৮। ১২ তারিখে আবার ৮০। ১৩ অগস্ট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯০। ১৪ ও ১৫ অগস্ট তা ছিল যথাক্রমে ৮৫ এবং ৭৮।

পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জুলাই পর্যন্ত এ শহরে করোনা সংক্রমণের দৈনিক সংখ্যা নিম্নমুখী ছিল। ১২ জুলাই কলকাতায় মোট ৩৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেটাই সর্বনিম্ন। অগস্টের শুরু থেকেই তা বাড়তে শুরু করেছে।

সংক্রমণ বৃদ্ধির এই হার এখনও পর্যন্ত খুব বেশি না হলেও চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞেরা কিন্তু এর মধ্যেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। এই সময়ে বিধি পালনের ক্ষেত্রে ঢিলেমি দিলেই বড় বিপদ এসে উপস্থিত হতে পারে বলে মনে করছেন বক্ষরোগ চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়। ধীমানবাবু বললেন, ‘‘বেশ কয়েক দিন ধরেই বাজারে ও রাস্তায় মাস্কহীন প্রচুর লোকজন দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মাস্ক থুতনিতে ঝুলিয়ে রাখছেন। এই শিথিলতাই কিন্তু করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। শহরবাসী যদি ভাবেন করোনা নেই, তা হলে বড় ভুল করবেন। ভাইরাস সদা জাগ্রত। আমাদের ভুলের সুযোগ নিয়ে সে ফের আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে।’’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, ‘‘লকডাউন উঠে যাওয়ার ফলেই রোজ করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। বৃদ্ধির সংখ্যাটা এখনও তাৎপর্যপূর্ণ নয়। তবে বৃদ্ধির এই হারটা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা মানেই বিপদ। আমাদের সকলকেই করোনা-বিধি কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবে।’’

টানা কয়েক দিন ধরে সংক্রমণের হার একই রকম থাকাটা আসন্ন তৃতীয় ঢেউয়ের দিকেই ইঙ্গিত করছে বলে মনে করেন দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের বক্ষরোগ চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগী। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘ভাইরাসের সংক্রমণ এক বার বাড়তে থাকলে তা ঘোর চিন্তার বিষয়। এই সময়ে করোনা-বিধি মানার ক্ষেত্রে কোনও রকম অবহেলা চলবে না। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগেও আমরা ভীষণ ঢিলেমি দিয়েছিলাম। যখন সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছিল, তখন আমাদের কারও কিছু করার ছিল না। তাই অতীতের কথা মাথায় রেখে আমাদের চলতে হবে।’’
অনির্বাণবাবুর কথায়, ‘‘অধিকাংশ মানুষই রাস্তায় মাস্ক না পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বাজারে যাচ্ছেন। এটা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কিন্তু বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। এখনই চটজলদি সবাইকে প্রতিষেধক নিয়ে নিতে হবে।’’

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন, গত ২৬ মে শহরে এক দিনে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৫৩৪ জন। সেটাই সর্বাধিক। এর পরে গত ৫ জুন সেই সংখ্যাটা কমে হয় ৫৭৯। পরে ধীরে ধীরে তা আরও কমতে থাকে। ১২ জুলাই সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৩৪-এ। আবার ৩ অগস্ট তা বেড়ে হয় ৫৫।

দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে কলকাতার ১০ নম্বর বরো এলাকা বরাবরই সংক্রমণের শীর্ষে ছিল। দশের পাশাপাশি দ্বিতীয় স্থানে থাকা ১২ নম্বর বরো এলাকাও প্রশাসনের চিন্তার বড় কারণ ছিল। যদিও ওই দু’টি বরোয় করোনা সংক্রমণের হার বর্তমানে অনেকটাই কমেছে।

এই পরিস্থিতিতে সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিমের আবেদন, ‘‘দয়া করে সকলে করোনা-বিধি মেনে চলুন। মাস্ক পরুন। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন। অযথা ভিড় করবেন না। কোনও রকম সংস্কারে না ভুগে নিকটবর্তী প্রতিষেধক কেন্দ্র থেকে করোনার প্রতিষেধক নিয়ে নিন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE