Advertisement
E-Paper

এত বড় প্রতারণা যারা করে, তারা খুনও করতে পারে

শুনেছি, বর্ধমান থেকেও মানুষ বাসে করে এসে কসবার এই শিবির থেকে প্রতিষেধক নিয়ে গিয়েছেন।

গৌরাঙ্গ শীল

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২১ ০৫:৫৩
চিন্তিত: ভুয়ো শিবিরে প্রতিষেধক নিয়েছিলেন যাঁরা, চলছে তাঁদের ডাক্তারি পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার, কসবায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

চিন্তিত: ভুয়ো শিবিরে প্রতিষেধক নিয়েছিলেন যাঁরা, চলছে তাঁদের ডাক্তারি পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার, কসবায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

আমার বাড়ির কাছেই বিনামূল্যে করোনার প্রতিষেধক দেওয়ার শিবির হবে। আর তার উদ্যোক্তা নাকি পুরসভার যুগ্ম কমিশনার দেবাঞ্জন দেব। জানতে পেরে খুব খুশি হয়েছিলাম। প্রতিষেধক নিতে কত মানুষকে কত দূরে যেতে হচ্ছে। আর এ যেন একেবারে দুয়ারে প্রতিষেধক। তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম যে, বাড়ির এত কাছে যখন শিবির হচ্ছে, তখন সেখান থেকেই আমি ও আমার স্ত্রী প্রতিষেধক নিয়ে নেব।

কিন্তু নেব বললেই কি নেওয়া যায়? আমি কসবা নিউ মার্কেটে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করি। আমাদের মার্কেটের কাছেই শিবিরটা হচ্ছিল। নীল বাতিওয়ালা গাড়িতে যিনি আসতেন, তিনিই পুরসভার যুগ্ম কমিশনার বলে শুনেছিলাম। প্রথমে দেখেছিলাম বাসে করে এলাকার বাইরের লোক এসে প্রতিষেধক নিচ্ছেন। সোনারপুর, গড়িয়া থেকে কত মানুষ এসেছিলেন। এমনকি, শুনেছি, বর্ধমান থেকেও মানুষ বাসে করে এসে কসবার এই শিবির থেকে প্রতিষেধক নিয়ে গিয়েছেন। কিছু দিন পরে শুনলাম, শুধু বাইরের লোক নয়, এলাকার বাসিন্দাদেরও দেওয়া হবে। কসবা নিউ মার্কেটের হকারদেরও প্রতিষেধক দেওয়া হবে শুনতে পেয়েই আমিও তালিকায় নাম তুলেছিলাম।

নির্দিষ্ট দিনে শিবিরে গিয়ে দেখি, যেখানে প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে সেখানে পুরসভার ব্যানার টাঙানো। প্রতিষেধক কেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে ঢোকা যাবে না বলে দিয়েছিল। কেন ঢোকা যাবে না? প্রতিষেধক কেন্দ্রে মোবাইলে কোনও ছবি তোলা বারণ বলে জানানো হয়েছিল আমাদের। যাঁরা প্রতিষেধক দিচ্ছিলেন, তাঁরা শিবিরে একটা রুল টানা কাগজে আমার নাম, ফোন নম্বর ও আধার নম্বর লিখতে বলেছিলেন। আধার কার্ডের ফোটোকপিও নেওয়া হয়েছিল। তার পরে প্রতিষেধক নিতে যেতে বলেছিলেন ওঁরা। যিনি প্রতিষেধক দিচ্ছিলেন, তিনি যে শিশি থেকে প্রতিষেধক নেন, তার গায়ে কোভিশিল্ড লেখা ছিল। প্রতিষেধক নেওয়া হয়ে গেলে আধ ঘণ্টা শিবিরেই বসব কি না, জিজ্ঞাসা করেছিলাম এক জনকে। আমাকে বলা হয়েছিল, কোনও বিশ্রাম নেওয়ার দরকার নেই, বাড়ি চলে যেতে পারি। যাওয়ার আগে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, প্রতিষেধক নেওয়ার মেসেজ এল না কেন? প্রতিষেধক নেওয়ার পরে সকলেরই তো মেসেজ আসে শুনেছিলাম। ওঁরা জানিয়েছিলেন, চিন্তা করার কিছু নেই। মেসেজ
তিন-চার দিনের মধ্যে এসে যাবে। শিবির থেকে বেরোনোর সময়ে আমাকে স্যানিটাইজ়ার ও মাস্ক দেওয়া হল। স্যানিটাইজ়ারে পুরসভার ছাপ, মাস্কে জয় বাংলা লেখা। কিছু মাস্কে আবার বিশ্ব বাংলা ছাপও দেওয়া ছিল।

তিন দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও মেসেজ না ঢোকায় ওঁদের কাছে আবার জানতে চেয়েছিলাম এই নিয়ে। তখন বলা হল, ওই শিবিরে যত মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে, তাঁদের সবার মেসেজ একসঙ্গে ঢুকবে। এই করতে করতে শুনলাম আরও ১০৫ জনকে প্রতিষেধক দেওয়া হবে। আমার স্ত্রীর নামও ওখানে লিখিয়ে দিলাম। স্ত্রী প্রতিষেধক নেওয়ার পরেও কোনও মেসেজ আসেনি। আমার স্ত্রীকেও প্রতিষেধক দেওয়ার পরে জয় বাংলা লেখা মাস্ক ও পুরসভার স্যানিটাইজ়ার দিয়েছে।

নীল বাতির গাড়িতে করে যুগ্ম কমিশনারের যাতায়াত, প্রতিষেধক কেন্দ্রে পুরসভার পোস্টার, ক্যালেন্ডার-মাস্ক-স্যানিটাইজ়ারে জয় বাংলা বা বিশ্ব বাংলা লেখা দেখে সন্দেহ হওয়ার কোনও জায়গাই ছিল না। কী মারাত্মক প্রতারণা হয়েছে জানতে পেরে এখন খুব ভয় করছে। প্রতিষেধক দেওয়ার নামে আমাদের কী দিয়েছে কে জানে? প্রতিষেধক দিল না জল দিল, না কোনও বিষ দিল কে বলবে? এখন অবশ্য কোনও শারীরিক অসুবিধা নেই। কিন্তু ভবিষ্যতে যে কিছু হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? যারা মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে এত বড় প্রতারণা করতে পারে, তারা মানুষ খুনও করতে পারে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলছি।

লেখক- ভুয়ো শিবির থেকে প্রতিষেধক গ্রহীতা

Fraud Coronavirus in Kolkata Covid 19 Vaccine
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy