একে সচেতনতার অভাব, তার উপরে করোনা পরিস্থিতি। দুইয়ে মিলে এই মুহূর্তে বড়সড় প্রশ্নের মুখে মরণোত্তর দেহ এবং অঙ্গদানের উদ্যোগ। চিকিৎসক থেকে শুরু করে দেহদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তেরা জানাচ্ছেন, গত পাঁচ মাসে পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, সচেতন পদক্ষেপ হিসেবে করে যাওয়া দেহদানের অঙ্গীকার বহু ক্ষেত্রেই হার মানছে করোনার কাছে।
শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মার্চের শেষ থেকে কোথাওই অঙ্গ বা দেহদানের ইচ্ছে প্রকাশ করে আবেদন জমা পড়েনি। একমাত্র কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া কোথাও শব ব্যবচ্ছেদ শেখানোর জন্য দেহ নেওয়া হয়নি। ওই হাসপাতালে গত পাঁচ মাসে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে পাঁচটি দেহ দান করানো গেলেও সেগুলি মর্গে পড়ে রয়েছে। শহরের বাইরে অন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলিরও একই অবস্থা বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের দাবি, কোথাও এই মুহূর্তে হাতেকলমে পড়ুয়াদের কাজ শেখানো হচ্ছে না। সেই সঙ্গে বন্ধ প্রায় সব জটিল অস্ত্রোপচার। থমকে অঙ্গদানের প্রক্রিয়াও।
রাজ্যের দেহদান আন্দোলনের অন্যতম কর্মী ব্রজ রায় বললেন, ‘‘দান করা দেহ এখন নিতেই চাইছে না হাসপাতালগুলি। পড়ুয়ারাই নাকি আসছেন না! এতে দেহদানের উদ্যোগ মারাত্মক ধাক্কা খাচ্ছে।’’ রাজ্য সরকারের সঙ্গে দেহদান সচেতনতা নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক শ্যামল চট্টোপাধ্যায়েরও দাবি, ‘‘কোনও ব্যক্তি করোনায় মারা গেলে এমনিই তাঁর দেহ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে তিনি দেহদান করে গিয়েছিলেন কি না, কেউ জানতেও চাইছেন না।’’ তিনি আরও জানান, এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে পাড়ার চিকিৎসকের একাংশের ডেথ সার্টিফিকেট দিতে রাজি না-হওয়া। পুলিশ নিয়ে যাওয়ায় দেহগুলির ময়না-তদন্ত হচ্ছে। যতই দান করা থাকুক, সেই দেহ কখনওই দানের কাজে লাগানো যায় না।