অকুতোভয়: ব্যস্ত বাজারের মধ্যেও মাস্ক না পরে ঘোরাফেরা। শনিবার, পোস্তায়। ছবি: সুমন বল্লভ
দৃশ্য এক: হাতিবাগান বাজার। সকাল সাড়ে ৮টা। গমগম করছে চারপাশ। ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়, সেই সঙ্গে চিৎকার। তবে অধিকাংশের মুখেই মাস্কের বালাই নেই। আচমকাই বাজারে ঢুকলেন দুই পুলিশকর্মী। তাঁদের ধমকে থুতনির মাস্ক মুখে তুলতে শুরু করলেন সকলে।
দৃশ্য দুই: কসবা বাজার। সকাল ৯টা। গায়ে শীতের জামা চাপিয়ে, হাতে দু’-তিনটে ব্যাগ ঝুলিয়ে বাজারে ঢুকছেন এক ব্যক্তি। মুখে মাস্ক নেই। বাজারের সামনে দাঁড়ানো পুলিশকর্মী তাঁকে থামিয়ে মাস্কের কথা জিজ্ঞাসা করতেই উত্তর এল, ‘‘একদম ভুলে গিয়েছি।’’
দৃশ্য তিন: মানিকতলা বাজার। সকাল সাড়ে ৯টা। ‘রুই আড়াইশো’ বলে চিৎকার জুড়েছেন মাছ বিক্রেতা। সামনে দাঁড়িয়েই প্রবল দরাদরি করছেন মাঝবয়সি ক্রেতা। পাশে ভিড় করে আরও কয়েক জন। কারও মুখেই মাস্কের বালাই নেই।
পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে এসেছে রাস্তায় করোনা-বিধি ভাঙার প্রবণতা। এমনকি, কমেছে ভিড়ও। রাস্তায় ভিড় কমলেও শহরের বিভিন্ন বাজারের ভিড়ে অবশ্য লাগাম পরানো যাচ্ছে না। প্রতিদিনই সকাল থেকে ভিড় উপচে পড়ছে শহরের বিভিন্ন বাজারে। এবং মাস্ক পরা থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা— করোনা-বিধির প্রায় কিছুই মানা হচ্ছে না সেখানে। যা চিন্তা বাড়িয়েছে
লালবাজারের পুলিশকর্তাদের। ইতিমধ্যেই বাজারের ভিড় কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে লালবাজারের তরফে। শুধু তা-ই নয়, এই কাজে নজরদারি বাড়াতে বিভিন্ন বাজার কমিটির সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলতে বলা হয়েছে পুলিশকে। পুলিশ নজরদারি বাড়ালেও বাজার-জনতাকে সামলানো যাচ্ছে না কোনও ভাবেই।
শনিবারও শহরের একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেল, অসচেতনতার সেই চেনা ছবি। বাজার কমিটির প্রচার থেকে পুলিশের নজরদারি— কোনও কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না বিধি ভাঙার প্রবণতা। পুরসভা ও পুলিশের তরফে ‘নো মাস্ক, নো বিক্রি’র কথা বলা হলেও কার্যক্ষেত্রে বহু জায়গায় দেখা গেল এর উল্টো ছবি। এ দিন বাঘা যতীন বাজারে গিয়ে দেখা গেল, মাস্ক না পরেই ভিড় করেছেন অনেকে। চলছে দেদার বিকিকিনি। মাছ কিনতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা অমিয় হালদারকে জিজ্ঞাসা করা গেল, মাস্ক নেই কেন? তিনি উত্তর দিলেন, ‘‘সকালে শারীরচর্চা করতে বেরিয়েছিলাম। বাড়ি থেকে বলল, বাজার করে একেবারে ফিরতে। সকালবেলা তো, তাই মাস্ক পরে আর বেরোনো হয়নি।’’
এ দিন একই ছবি দেখা গেল উল্টোডাঙা, পোস্তা, মানিকতলা, কোলে মার্কেট, হাতিবাগান-সহ শহরের একাধিক বাজারে। এমনকি, দুপুর থেকে নিউ মার্কেট ও গড়িয়াহাট বাজারেও একই ছবি দেখা গিয়েছে। পুলিশ দেখলে মাস্ক মুখে উঠছে বটে, কিন্তু পুলিশ দূরে গেলেই তা ফিরে যাচ্ছে পুরনো জায়গায়। যদিও বাজার কমিটিগুলির একটি অংশের দাবি, আগের চেয়ে মানুষ কিছুটা সচেতন হয়েছেন। ‘হাতিবাগান বাজার মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি রঞ্জন রায় বললেন, ‘‘আমরা বাজার কমিটির তরফে প্রচার করছি। এমনকি, প্রতিদিন পুলিশও প্রচার করছে। যাঁরা মাস্ক ছাড়া বাজারে আসছেন, তাঁদের কোনও জিনিসপত্র বিক্রি করতে আমরা সংগঠনের তরফে ব্যবসায়ীদের বারণ করেছি।’’
লালবাজারের এক পুলিশকর্তা বললেন, ‘‘প্রতিটি থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাজারের ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য। পাশাপাশি, প্রতিটি ডিভিশনকেও শহরের বাজারগুলির উপরে নজরদারি বাড়াতে এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর হতে বলা হয়েছে।’’ এ দিন বিভিন্ন বাজার সাময়িক ভাবে বন্ধ করে জীবাণুনাশের কাজ করা হয় বলে জানানো হয়েছে।
এ শহরে করোনার দৈনিক সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তাতে প্রতিদিন বাজারে ভিড় জমানোটা কি বিপদ আরও বাড়িয়ে তুলবে না? কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘এ তো জেনেশুনে আগুনে ঝাঁপ দেওয়া। এত বলা, এত বোঝানোর পরেও যদি হুঁশ না ফেরে, তা হলে আরও কঠিন পরিস্থিতির জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy