Advertisement
E-Paper

দ্বিতীয় বারও থাবা বসাতে পারে কোভিড

অনেকেই ভাবছেন, দ্বিতীয় বার করোনা হলেও তার তীব্রতা বেশি হবে না।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২১ ০৬:২৬
মানব না: বাড়ছে কোভিড। তবু প্রায় কারও মুখেই মাস্ক নেই। বুধবার, চাঁদনি চক এলাকায়।

মানব না: বাড়ছে কোভিড। তবু প্রায় কারও মুখেই মাস্ক নেই। বুধবার, চাঁদনি চক এলাকায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

‘আমার তো এক বার করোনা হয়ে গিয়েছে। আর কিছু হবে না!’—কিছু মানুষের এ হেন ‘ভ্রান্ত’ ধারণাই নতুন করে বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসক থেকে সংক্রামক রোগ চিকিৎসকদের একাংশ।

তাঁরা বলছেন, ‘‘এক সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা কমায় এক শ্রেণির মানুষের অতি উচ্ছ্বাস যেমন বিপদ ডেকে এনেছে, তেমনি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসও বিপজ্জনক।’’ সম্প্রতি সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীও জানিয়েছেন, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস যেন বিপদ ডেকে না আনে। কিন্তু শহরবাসীদের একাংশ যে ভাবে করোনা বিধি শিকেয় তুলেছেন, তাতে বড়সড় সংশয় দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘দ্বিতীয় বার কত জন আক্রান্ত হলেন, তার আলাদা পরিসংখ্যান নেই ঠিকই। তবে সকলেই আক্রান্ত হচ্ছেন সেটা যেমন নয়, তেমনই দ্বিতীয় বার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তা-ও ঘটেছে।’’

অনেকেই ভাবছেন, দ্বিতীয় বার করোনা হলেও তার তীব্রতা বেশি হবে না। কিন্তু এই ধারণা ভুল বলেই মত এসএসকেএম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান সৌমিত্র ঘোষের। বললেন, ‘‘দ্বিতীয় বার করোনা হলে হালকা হবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। যেমন, এক বার ডেঙ্গির পরে দ্বিতীয় বার হলে তা মারাত্মক হতে পারে।’’ আবার ভারতের নিরিখে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসে গিয়েছে বলেই জানাচ্ছেন সংক্রামক রোগ চিকিৎসক যোগীরাজ রায়। তাঁর কথায়, ‘‘দ্বিতীয় বারেও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেটা কী মাত্রায় হবে, তা-ও আগাম বলা সম্ভব নয়।’’

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, হংকংয়ের ৩৩ বছরের এক যুবক প্রথম বার আক্রান্ত হওয়ার চার মাস পরে দ্বিতীয় বার করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেটিই প্রথম ঘটনা, যা থেকে দ্বিতীয় বার সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলছেন, ‘‘এক বার করোনা হলে দ্বিতীয় বার আক্রান্ত হওয়ার উদাহরণ সব দেশেই আছে। বহু ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, এক বার আক্রান্ত হওয়ার পরে মানুষ এতটাই নির্লিপ্ত হয়ে পড়ছেন যে, আবার সংক্রমিত হচ্ছেন। এক বার করোনা হওয়া মানেই যে তিনি সারা জীবন সুরক্ষিত থাকবেন, তা কখনওই নয়। তাই সতর্কতা মেনে চলা জরুরি।’’

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি (আইআইসিবি)-র ইমিউনোলজিস্ট দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায় জানান, আপাতত বলা যাচ্ছে, এক বার করোনা হয়ে যাওয়ার পরে মোটামুটি এক বছর সুরক্ষিত থাকা যায়। কারণ বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, এক বার করোনা হওয়ার পরে ৬-৭ মাস অ্যান্টিবডি থাকছে। আবার টি-সেল ইমিউনিটি থাকছে ৯-১০ মাস। তবে এক বছর পরে এই সুরক্ষা কবচ থাকবে, না চলে যাবে, তা জানতে আরও সময় দিতে হবে। কারণ এক বছর পরে ফের কেউ যদি পুরনো একই স্ট্রেনে আক্রান্ত হন, তা হলে বুঝতে হবে তিনি এক বছর সুরক্ষিত ছিলেন।

দীপ্যমানবাবু বলেন, ‘‘আরও চারটি করোনাভাইরাস রয়েছে। সেগুলির পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে অনুমান, বর্তমান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরে এই ইমিউমিটি তৈরি এবং তার সুরক্ষা দীর্ঘমেয়াদি নয়।’’

চিকিৎসকেরা আরও জানাচ্ছেন, ‘এক বছর সুরক্ষিত থাকতে পারেন’—তার অর্থ এই নয় যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মাস্ক পরবেন না। কারণ তাঁর আক্রান্ত না হওয়া কখনওই এটা সাব্যস্ত করে না, স্বল্প সময়ের জন্য হলেও ভাইরাস তাঁর দেহে থাকতে পারবে না। দীপ্যমানবাবুর কথায়, ‘‘সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি স্বল্প সময়ের জন্য হলেও অন্যকে সংক্রমিত করতে পারেন। এরই সঙ্গে রয়েছে, পুরনো স্ট্রেনের জন্য তৈরি হওয়া ইমিউনিটি নতুন স্ট্রেনের ক্ষেত্রে কাজ না করার সম্ভাবনাও। যেটা নিয়ে সারা বিশ্ব দোলাচলে।’’

Corona COVID-19 Coronavirus in Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy