Advertisement
E-Paper

শয্যার অভাবে অবস্থার অবনতি, মৃত্যু শিক্ষকের

স্কুল সূত্রের খবর, বজবজের বাড়ি থেকে রোজ বুড়ুল হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতে যেতেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৩১
সন্দীপ মণ্ডল ।

সন্দীপ মণ্ডল ।

হাসপাতালে শয্যার জন্য সারা রাত ঘুরে কোভিড উপসর্গযুক্ত এক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠল।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বুড়ুল হাইস্কুলের ৪১ বছরের ওই ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সন্দীপ মণ্ডল ভোটের ডিউটি থেকে মিড-ডে মিলের খাবার বিতরণ― সবই এপ্রিল মাসে করেছেন। সহকর্মীদের একাংশের দাবি, ভোটের ডিউটি করতে গিয়ে ডিসিআরসি সেন্টারের ভিড় থেকে অথবা মিড-ডে মিলের সামগ্রী বিতরণ করতে গিয়েই তিনি সংক্রমিত হয়েছেন।

স্কুল সূত্রের খবর, বজবজের বাড়ি থেকে রোজ বুড়ুল হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতে যেতেন তিনি। ৬ এপ্রিল ভোটের ডিউটি করতেও গিয়েছিলেন। ২১ ও ২২ এপ্রিল স্কুলের মিড-ডে মিলের সামগ্রী বিতরণের কাজ করেন। পরদিন সকাল থেকে জ্বর ও করোনার কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। স্থানীয় চিকিৎসক তাঁকে ওষুধ দেন এবং করোনা পরীক্ষা করতে বলেন।

সহকর্মীরা জানিয়েছেন, করোনা পরীক্ষার ফল আসার আগেই তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। সহকর্মী চন্দন রায় বলেন, “বুধবার ২৮
এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে অক্সিজেন কমতে থাকে। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিই। অ্যাম্বুল্যান্সে রাখা অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকেই ওঁকে অক্সিজেন দেওয়া শুরু হয়। সারা রাত ঘুরেও কলকাতার কোনও বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা মেলেনি। চন্দনবাবু আরও বলেন, “পালস অক্সিমিটারে মেপে দেখা যায়, রক্তে অক্সিজেন ৩৮-এ নেমে গিয়েছে। একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক প্রাথমিক ভাবে তাঁকে দেখে ভেন্টিলেটরে দেওয়ার কথা বলেন। ওই হাসপাতালে কোনও ভেন্টিলেটর খালি ছিল না।” কোথাও শয্যা না পেয়ে শম্ভুনাথ পণ্ডিতে যান তাঁরা। চন্দনবাবু বলেন, “সেখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ফোন করে রোগীর নাম রেজিস্ট্রেশন না করালে ভর্তি নেওয়া যাবে না।”

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কোভিড ব্যবস্থাপনার নির্দেশিকাতেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে কোনও রোগী যেন সরাসরি হাসপাতালে না যান। কারণ, গিয়ে শয্যা নাও পেতে পারেন। তাই যে কোনও রোগীকে আসার আগে স্বাস্থ্য ভবনের ইন্টিগ্রেটেড নম্বরে ফোন করে অ্যাডমিশন সেলের মাধ্যমে আসতে বলা হয়েছে।

ওই শিক্ষকের পরিজনদের প্রশ্ন, তাঁরা আগে থেকে কী ভাবে জানবেন যে রোগীর অবস্থা খারাপ হবে? তা হলে জরুরি চিকিৎসা কি কিছুই
মিলবে না?

চন্দনবাবু জানান, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ তাঁরা দক্ষিণ কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষককে নিয়ে গেলে সেখানে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়।
কিন্তু তার আধ ঘণ্টার মধ্যেই মারা
যান তিনি।

মৃত শিক্ষকের স্ত্রী বীথিকা মণ্ডল এ দিন জানান, সন্দীপবাবু আগেই প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “সংসারের একমাত্র রোজগেরে ছিল। ১১ বছর আর পাঁচ বছরের দুটো ছেলেমেয়ে আছে আমাদের। জানি না ওদের কী ভাবে মানুষ করব।”

শিক্ষকদের অভিযোগ, “ডিসিআরসি সেন্টারে ভিড়ে গিয়ে ভোটের সামগ্রী নিতে বাধ্য হয়েছি আমরা। আগেও ভোটের ডিউটি থেকে ফিরে শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মিড-ডে মিলের সামগ্রী বিতরণ করতে গেলেও শিক্ষক ও অভিভাবকদের জমায়েত হতে হচ্ছে।” অল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক চন্দন গড়াই বলেন, “নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারের কাছে ওই শিক্ষকের পরিবারকে ৩০ লক্ষ টাকার সহায়তা ও তাঁর স্ত্রীকে চাকরি দেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছে।”

স্কুলেরই অন্য শিক্ষক সমীরণ মণ্ডল বলেন, “উনি আমাদের ক্যাপ্টেন ছিলেন। মানুষটাই তো চলে গেলেন। ওঁর চলে যাওয়া শিক্ষক এবং পড়ুয়াদের মধ্যে শূন্যতা তৈরি করল।”

COVID-19 coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy