Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

মেজাজ হারাচ্ছে গৃহবন্দি সন্তান, চিন্তায় মা-বাবারা

বছর পনেরোর এক কিশোরী আবার মা যা-ই বলছেন, তাতেই রেগে যাচ্ছে।

আটক: সারাদিনই এখন বাড়িতে কাটছে শিশুদের। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

আটক: সারাদিনই এখন বাড়িতে কাটছে শিশুদের। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২০ ০১:২২
Share: Save:

বছর চোদ্দোর কিশোরটি হঠাৎ-ই রেগে গিয়ে বাবা-মায়ের উপরে চিৎকার শুরু করল। শুধু চিৎকার নয়, রীতিমতো বিদ্বেষমূলক আচরণ। মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ ছেলের রেগে গিয়ে হঠাৎ এমন আচরণে ঘাবড়েই গিয়েছিলেন বাবা-মা। লকডাউনের সময়ে কোনও চিকিৎসকের কাছে যাওয়াও সম্ভব নয়। তাই তাঁরা ফোন করেছিলেন রাজ্যের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের হেল্পলাইনে। সেখানে কাউন্সেলিং করানোর পরে সমস্যা কিছুটা কম হয় ওই কিশোরের।

বছর পনেরোর এক কিশোরী আবার মা যা-ই বলছেন, তাতেই রেগে যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা আর তার জেরে লকডাউন— সব মিলিয়ে বড়দের পাশাপাশি ছোটদের মনের উপরেও তৈরি হচ্ছে প্রবল চাপ। যা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কেউ কেউ রেগে যাচ্ছে। অথচ, বাবা-মায়েরা বুঝতে পারছেন না, হঠাৎ কী হল! এমন পরিস্থিতিতে ছেলেমেয়েদের কী ভাবে সামলাবেন, তা-ও বুঝতে পারছেন না অনেকেই। আর সেই কারণেই গত কয়েক দিন ধরে ক্রমাগত ফোন এসে চলেছে রাজ্য শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের হেল্পলাইনে। বাবা-মায়েদের করণীয় কী, ফোনেই তা বুঝিয়ে দিচ্ছেন কমিশনের মনোরোগ চিকিৎসক ও মনোবিদেরা। কিন্তু পরিস্থিতি এমনই যে, কমিশনও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে লকডাউনে ছোটদের মানসিক স্বাস্থ্যের হাল নিয়ে। সংখ্যাটা বাড়তে পারে বলেই তাদের ধারণা।

সেই কারণেই বিষয়টিকে হাল্কা ভাবে নিতে রাজি নন কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বা সেখানকার সদস্য তথা কাউন্সেলর যশোবন্তী শ্রীমানী। যশোবন্তীর কথায়, ‘‘এখনকার বয়ঃসন্ধির কিশোর-কিশোরীরা কেউ হয়তো নিজের ঘরে কিছুটা সময় একা কাটাতে চায়। কেউ আবার বন্ধুদের সঙ্গে হইচই করে গল্পগুজবে মেতে থাকতে পছন্দ করে। অন্য সময়ে তা সম্ভব হলেও লকডাউনের জেরে মা-বাবারা সারা দিনই বাড়িতে থাকায় কিশোর-কিশোরীরা সেই সময়টুকুও পাচ্ছে না। অনেক বাবা-মা আবার কারণে-অকারণে বারবার ঘরে ঢুকে ছেলে-মেয়ে কী করছে, তাতে নজর রাখতে শুরু করেছেন। ফলে নিজের মতো করে সময় কাটাতে না-পারায় মনের উপরে চাপ বাড়ছে কিশোর-কিশোরীদের। এক-এক সময়ে সেই চাপ সীমা ছাড়িয়ে গেলে প্রচণ্ড রেগে যাচ্ছে তারা।

কর্মরত বাবা-মায়েদের অনেকে আবার এই সময়ে ঘরে বসে বাড়ির পাশাপাশি অফিসের কাজও সামলাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রেই দুটো কাজের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে না পেরে তাঁরা নিজেরা চাপে থাকছেন। যা সরাসরি প্রভাব ফেলছে সন্তানের উপরেও। যদিও পুরো বিষয়টির জন্য বাবা-মায়েদের দোষ দিতে পারছেন না যশোবন্তী। তাঁর কথায়, ‘‘করোনার জেরে শুধু ঘরে বন্দি থাকাই নয়, ভবিষ্যৎ ভাবনাও তাঁদের উপরে চেপে বসেছে। এই অতিমারির শেষে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিও যে বদলে যাবে, সেটা এখন থেকেই সকলে বুঝতে পারছেন। সেই চাপও নিতে হচ্ছে বাবা-মায়েদেরই।’’

যশোবন্তীর মতে, বাবা-মা যখন বাড়ির কাজ করছেন, তখন ছেলেমেয়েকে তাতে একটু যুক্ত করে নিলে তারাও বুঝতে পারে, তাদের গুরুত্ব দিচ্ছেন বাবা-মা। আর বাকি সময়ে নজরে রাখলেও বাড়াবাড়ি না করলেই ছেলেমেয়েরা ভাল থাকবে। যশোবন্তীর বক্তব্যকে সমর্থন করে কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা বলেন, ‘‘পরিস্থিতি খুবই কঠিন। করোনার সঙ্গে মোকাবিলার পাশাপাশি লকডাউনে ছেলেমেয়ের আচরণ যে বদলাবে, তা আগে থেকেই কমিশন আঁচ করেছিল। তাই হেল্পলাইন চালু করে মনোরোগ চিকিৎসক, মনোবিদ ও শিশুরোগ চিকিৎসকদের সঙ্গে বাবা-মা ও সন্তানদের ভিডিয়ো কনফারেন্স করানো হচ্ছে বা ফোনে কথা বলানো হচ্ছে। প্রয়োজনে কাউন্সেলিংও করানো হচ্ছে।’’

তবে এ থেকে বেরোনোর রাস্তাও বলে দিয়েছেন মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুল বন্ধ থাকলেও ছেলেমেয়েকে নিয়ম করে পড়তে বসানো উচিত। পাশাপাশি তাদের পছন্দের সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দেওয়া এবং সেই কাজে নিজেদেরও অংশ নেওয়া দরকার। সর্বোপরি, এই সময়টা নিয়ে ওরা যাতে অযথা চিন্তা না করে, সেটাও বাবা-মায়েদের দেখতে হবে। খোলাখুলি কথা বলে বোঝাতে হবে যে, এই সময়টা কেটে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Covid-19 Parents Children
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE