Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

বন্দিশূন্য লালবাজার, তবু কপালে ভাঁজ পুলিশের

সাধারণত, লালবাজারের সেন্ট্রাল লক-আপে ১৫০-১৬০ জন বন্দিকে রাখা হয়।

লালবাজারে এক জনও বন্দি নেই।

লালবাজারে এক জনও বন্দি নেই।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৩০
Share: Save:

কারও ধারণা, ১৯৭১-এ পাকিস্তান-যুদ্ধের সময়ে এমনটা ঘটে থাকতে পারে। কিংবা উনিশ শতকের শেষে শহরে প্লেগ মহামারির সময়ে হয়তো এমনই পরিস্থিতি ছিল। তবে নিশ্চিত করে কেউই কিছু বলতে পারছেন না। গত ১০ দিন ধরে লালবাজারের সেন্ট্রাল লক-আপ রয়েছে বন্দিশূন্য।

লালবাজারের ১৬০ বছরের ইতিহাসে শেষ কবে দেখা গিয়েছে এমন পরিস্থিতি? স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী যুগে কলকাতার অপরাধ জগৎ তথা ‘গুন্ডাদের’ নিয়ে গবেষণার কাজ রয়েছে অধ্যাপক সুরঞ্জন দাসের। তিনিও বলছেন, ‘‘আগে কখনও এমন অবস্থার কথা শুনিনি!’’ কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের ধারণা, ‘‘আগের কোনও মহামারির সময়েও এমন হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু তখন মানুষ থেকে মানুষে জীবাণু সংক্রমণ নিয়ে লোকজনের ধারণা কতটা পোক্ত ছিল, তার উপরে বিষয়টি নির্ভর করছে।’’

সাধারণত, লালবাজারের সেন্ট্রাল লক-আপে ১৫০-১৬০ জন বন্দিকে রাখা হয়। আবার রাজনৈতিক গোলমালের সময়ে কম করে ৪০০ বন্দিকে রাখারও নজির রয়েছে। গোয়েন্দা বিভাগের বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত বা মহিলা বন্দিদেরও লালবাজারে রাখাটা দস্তুর।

মারাত্মক ছোঁয়াচে নোভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপের এই সময়ে খাতায়-কলমে অবশ্য গ্রেফতারি এড়াতে নির্দেশ জারি করেননি লালবাজারের কর্তারা। তবে লক-আপে বন্দিদের সামলানো থেকে নানা ধরনের সেবাকাজে ব্যবহারের জন্য পুলিশকর্মীদের ‘পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট’ (পিপিই) বা বর্মবস্ত্র সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘সুপ্রিম কোর্টও তো বলেছে, খুব বিপজ্জনক বন্দিরা ছাড়া বাকি বিচারাধীন বন্দিদের জামিন বা প্যারোল দিতে। লক-আপে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখতে আমরাও (পুলিশ) গ্রেফতারি খানিকটা এড়িয়ে চলছি।’’

লকডাউনে ট্রেন বন্ধ। তাই জেলা বা ভিন্ রাজ্য থেকে কলকাতায় দুষ্কৃতীদের আনাগোনাও বন্ধ। তাতেও অপরাধ কমছে বলে দাবি লালবাজারের কর্তাদের। খিদের জ্বালায় খুচখাচ চুরি, ছিনতাইয়ের ভয় রয়েছে। নিউ মার্কেটের একটি বন্ধ পোশাক বিপণি ভেঙে কয়েকটি জিন্‌স চুরি করা হয়েছিল। অভিযুক্ত দুই দুষ্কৃতীর কাছ থেকে ‘চুরির মাল’ উদ্ধার করে তাদের সটান জেলে পাঠিয়েছে পুলিশ। লালবাজারের দাবি, গত সপ্তাহ দেড়েকে বড়সড় অপরাধের নথি নেই।

তবে পরিসংখ্যান যা-ই বলুক, লকডাউনে কলকাতা অপরাধহীন শান্তির কোনও শহর হয়ে ওঠেনি মোটেই। ঘরবন্দি দম্পতিদের সংসারে গৃহ-হিংসা বাড়ছে বলেও অভিযোগ। রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মারফত জেনেছি, এ মাসেই কলকাতায় তিনটি বধূ-নিগ্রহের ঘটনায় নির্যাতিতারা লকডাউনের জেরে ফোনে ব্যালান্স না-থাকায় পুলিশে অভিযোগ জানাতে পারেননি। তবে সার্বিক ভাবে বধূ-নির্যাতন বাড়ল কি না, তা পরে বোঝা যাবে।’’

চাইল্ড লাইনেও বিপন্ন শিশুদের অসংখ্য ফোন আসছে। শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘কলকাতায় কিছু পকসো অভিযুক্ত প্যারোলে ছাড়া পেয়েছে। তারা অনেকেই নির্যাতিত শিশুদের বাড়ির কাছে থাকে। এটাও চিন্তার বিষয়।’’ পুলিশ তবু দাগি দুষ্কৃতী ছাড়া অন্য গ্রেফতারি এড়িয়ে চলছে। বেশির ভাগ থানার লক-আপও বন্দিশূন্য। পূর্ব কলকাতার একটি থানার ওসি বলছেন, ‘‘খুচখাচ মারপিটের ঘটনায় এক জনকে ধরে লক-আপে রাখলেও পারস্পরিক দূরত্ব বজায় থাকে। কিন্তু বেশি ভিড় হলে লক-আপেও দূরে দূরে বসাতে হবে। লক-আপে বারবার সাবান-জলে হাত ধোয়ানোটাও ঝক্কির কাজ। আবার দুষ্কৃতীরা জামিন পেয়ে কী ঘটায়, তা নিয়েও আতঙ্কে রয়েছি।’’ সব মিলিয়ে শূন্য লক-আপে দুষ্ট বন্দির অভাবেও শান্তিতে নেই পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Covid-19 Lalbazar Prisoner Anuj Sharma
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE