Advertisement
E-Paper

পুরভোটে হার-জিত বড় নয়, মনে করেন বিজেপির রূপা

প্রশস্ত ড্রয়িংরুমের দেওয়ালে ফ্রেমে বাঁধানো একটি ছবি। সাদা-কালো আর গাঢ় সবুজ রঙের আঁচড়ে এক নারীর অবয়ব। পাশে লেখা কয়েক ছত্র— ‘জন্মান্ধ মেয়েকে আমি জ্যোৎস্নার ধারণা দেব বলে এখনও রাত্রির এই মরুভূমি জাগিয়ে রেখেছি।’ ছবিটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে ঈষৎ ভারী গলায় তিনি স্বগতোক্তি করলেন, ‘‘কাল রাতেই ওরা (তৃণমূল) বারুইপুর থেকে বাইকে পঞ্চাশটা ছেলে ঢুকিয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৫ ০০:১৮
নিজের বাড়িতে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। শনিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

নিজের বাড়িতে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। শনিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

প্রশস্ত ড্রয়িংরুমের দেওয়ালে ফ্রেমে বাঁধানো একটি ছবি। সাদা-কালো আর গাঢ় সবুজ রঙের আঁচড়ে এক নারীর অবয়ব। পাশে লেখা কয়েক ছত্র— ‘জন্মান্ধ মেয়েকে আমি জ্যোৎস্নার ধারণা দেব বলে এখনও রাত্রির এই মরুভূমি জাগিয়ে রেখেছি।’ ছবিটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে ঈষৎ ভারী গলায় তিনি স্বগতোক্তি করলেন, ‘‘কাল রাতেই ওরা (তৃণমূল) বারুইপুর থেকে বাইকে পঞ্চাশটা ছেলে ঢুকিয়েছিল। কোথায় কোন গেস্ট হাউসে উঠেছে সব জানি। আমার আশঙ্কা সত্যি হল। রাতেই ওরা হাতে-হাতে তিন হাজার করে টাকা, মদের বোতল গুঁজে দিয়েছে। এর পরেও রাজি না হলে শাসিয়ে বলেছে, ওদের ভোট না দিলে ইলেকট্রিকের লাইন, জলের লাইন কেটে দেবে। মা-বোনেদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে। সাজানো কেসে ফাঁসিয়ে দেবে।’’

বলেই ঘুরে দাঁড়িয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে মন্তব্য, ‘‘আসলে উনি (পড়ুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) এ রাজ্যে বিজেপি-র মাথাচাড়া দিয়ে ওঠাকে ভয় পাচ্ছেন। তাই ওঁর মতো পোড়খাওয়া রাজনীতিককে আমার মতো আনকোরার প্রচার নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। অ্যারেস্টের কথা বলতে হচ্ছে। শুধু নামটুকু নেননি। তবে বলব ‘শি হ্যাড ডান আ ব্লান্ডার।’ আমার সুবিধা করে সেমসাইড গোল দিয়ে বসেছেন।’’

তিনি রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। এ বারের পুর-নির্বাচনে বিজেপি-র তারকা প্রচারকারী। নিজে কলকাতা পুর-এলাকার ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় মেয়র পদে বিজেপি-র বাছাই হয়েও প্রার্থী হতে পারেননি।

শনিবার, পুরভোটের দিন সকালে প্রিন্স গোলাম মহম্মদ শাহ রোডে এক হাতে লিকার চায়ের কাপ আর অন্য হাতে কানে ফোন নিয়ে অস্থির ভাবে পায়চারি করছেন। রূপা উত্তেজিত। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে বুথের কাছে যেতে পারবেন না। এ দিকে, সকাল থেকে একের পর এক ফোন দলীয় নেতা-কর্মীদের। কপাল কুঁচকে যাচ্ছে, মুখ লাল হচ্ছে, চোয়াল শক্ত করছেন বারবার। এক সময়ে ধপাস করে মেঝেতেই বসে পড়লেন। বুকের কাছে জড়ো করা দু’হাঁটু, বিচলিত মুখ।

কয়েক দিনের প্রচারেই ঝড় তুলেছিলেন, হেঁটে-দৌড়ে-বাইকে চড়ে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। ভোটের দিন সকাল থেকে বেরোতে না পেরে বিজেপি-র ‘রোড কি রানি’ কি হতাশ? রূপার উত্তর, ‘‘আমার আজ বাড়ি থেকে বেরোনো বারণ। কমিশনের নির্দেশ। আমি নিয়ম ভাঙার বিরুদ্ধে। কিন্তু ছটফটানি তো হচ্ছে। ওরা যথেচ্ছ সায়েন্টিফিক রিগিং করছে। ভোটারদের বাড়ি থেকে বেরোতে দিচ্ছে না। মেয়েদেরও মারবে বলছে।
৯৪ নম্বর ওয়ার্ডে কোনও বুথে
আমাদের ছেলেদের বসতে দেয়নি। জুবিলি পার্ক, রাজেন্দ্রপ্রসাদ কলোনি, কলাবাগান- সব জায়গায় এক অবস্থা। অসহায় লাগছে।’’

দুপুর ১২টা নাগাদ বিজেপি অফিস থেকে ফের ফোন। যেতে হবে। স্নান করে, শাড়ি বদলে আধ ঘণ্টায় তৈরি হয়ে নিলেন। গাড়িটা নিজেই চালাবেন ঠিক করেছিলেন। পরে সিদ্ধান্ত বদলাল। টালিগঞ্জ এলাকায় দলের চারটি ক্যাম্প ঘুরে অভাব-অভিযোগ শুনে সোজা মধ্য কলকাতায় দলীয় কার্যালয়। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার আগে একটু থমকালেন। ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে গেলেন, ‘‘সন্ত্রাসের মেকানিজমে তৃণমূল ভোট বার করে নেবে বুঝতে পেরেই ছেলেরা বলেছিল, ‘দিদি আপনি বৌ-বাচ্চাদের দেখে নেবেন, আমরা জান লড়িয়ে দেব।’ আমি বারণ করেছি। প্রাণ বাজি
রাখার মতো বড় ব্যাপার এটা নয়। আমাদের সব শক্তি জমিয়ে রাখতে হবে ২০১৬-র জন্য।’’

kmc poll 2015 result roopa ganguly kmc poll roopa kmc vote rigging
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy