রেলের অফিসই যে প্রতারণার ঘুঘুর বাসা, সেটা অনেক দিন আগে থেকেই টের পাওয়া যাচ্ছিল। যদিও এ ব্যাপারে বিন্দুবিসর্গ জানতে পারেননি রেল কর্তারা। ফলত, সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকায় সেই চক্র ভাঙাও যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওই প্রতারণা-চক্র ভাঙা গিয়েছে। তবে দিল্লি থেকে খোদ রেলমন্ত্রী প্রমাণ পাঠানোর পরে!
রেলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে সক্রিয় ওই চক্রের পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের নাম বিমলকুমার মাটিয়া, সঞ্জয় রায়গুপ্ত, কমল সামন্ত, প্রলয় সামন্ত এবং প্রশান্ত বিশ্বাস। দলের বাকিদের খোঁজ চলছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বিমল প্রাক্তন রেলকর্মী। সে-ই চক্রের অন্যতম পাণ্ডা।
পুলিশের দাবি, শুধু ভুয়ো চাকরি নয়, এক জায়গা থেকে পছন্দের অন্য জায়গায় বদলি করিয়ে দেবার নাম করে এই প্রতারকেরা রেলকর্মীদের থেকে মোটা টাকা নিত।
পাশাপাশি, রেল ছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং সামরিক বাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নাম করে তারা বেকার যুবকদের থেকে মাথাপিছু ২ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আদায় করত বলেও জানা গিয়েছে।
কী ভাবে চলত এই চক্র? পুলিশ সূত্রের খবর, কয়লাঘাটায় রেল ভবনের একতলার একটি ঘর ছিল প্রতারকদের ‘অফিস’। ওই ঘরে বসিয়ে প্রথমে চাকরিপ্রার্থীদের রেলের বিভিন্ন কাজকর্ম দেখানো হতো। ঘুরিয়ে দেখানো হতো বিভিন্ন দফতরও। কার কোথায় পোস্টিং হবে, তা-ও চাকরিপ্রার্থীদের বলে দিত প্রতারকেরা। তদন্তকারীরা আরও দাবি করেছেন, সব কিছু হয়ে যাওয়ার পরে কোনও এক দিন এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের ভুয়ো ডাক্তারি পরীক্ষাও করা হতো। কয়লাঘাটায় যে ঘরে বসে এই পাঁচ জন কারবার চালাত, সেই ঘরটি সিল করে দিয়েছে পুলিশ।
রেলমন্ত্রী কী ভাবে জানতে পারলেন এই চক্রের কথা? পুলিশ সূত্রের খবর, দিল্লির মুস্তাক নগরের বাসিন্দা এক যুবক এই চক্রের খপ্পরে পড়েছিলেন। তিনিই রেলমন্ত্রীকে ই-মেল করে ঘটনার কথা জানান। রেলমন্ত্রী ওই অভিযোগপত্রটি পাঠিয়ে দেন কলকাতায় রেলের ভিজিল্যান্স এবং রেলরক্ষী বাহিনীর কাছে। তার পরেই তদন্তে নামেন রেলের ভিজিল্যান্স কর্তারা।
প্রতারণা-চক্রের হদিস রেলমন্ত্রী পেলেও কেন কয়লাঘাটার রেলকর্তারা তা জানতে পারলেন না, তা নিয়ে রেলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে। রেলেরই একটি অংশের দাবি, কয়লাঘাটের ওই অফিসে এখনও প্রায় পাঁচ-ছ’টি এমন প্রতারণা চক্র সক্রিয় রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy