গোয়ার একটি রুফটপ রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৫ জনের মৃত্যুর আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তার সরাসরি প্রভাব পড়ল কলকাতায়। শহরের রুফটপ রেস্টুরেন্টগুলির নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে সতর্ক হল কলকাতা পুরসভা। মঙ্গলবার থেকেই শুরু হচ্ছে রুফটপ রেস্টুরেন্টে পুরসভার আধিকারিকদের আচমকা পরিদর্শন। চলবে আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিটি পরিদর্শনের ভিত্তিতে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করা হবে। এর পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, এর আগেও শহরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের দৃষ্টান্ত রয়েছে। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল বড়বাজারের একটি রুফটপ রেস্টুরেন্টে আগুন লেগে শিশু-সহ ১৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনার পরে নবান্নের নির্দেশে কলকাতা পুরসভা শহরের সমস্ত রুফটপ ক্যাফে ও রেস্তরাঁ বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। পরে আদালতের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি বদলায়। উৎসবের মরসুমে ব্যবসায়ীদের কথা মাথায় রেখে দুর্গাপুজোর আগে পুরসভা কিছু শর্তসাপেক্ষে রুফটপগুলি খুলে দেওয়ার অনুমতি দেয়। তবে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, নতুন কোনও রুফটপ রেস্টুরেন্ট চালু করা যাবে না। পুরনোগুলিকে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ‘মুচলেকা’ জমা দিতে হয়, যার পরই মিলেছিল রেস্টুরেন্ট খোলার অনুমোদন।
রুফটপ রেস্টুরেন্ট সংক্রান্ত পাঁচ সদস্যের মন্ত্রিগোষ্ঠী একটি এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর) প্রকাশ করেছিল। মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন, পুজোর আগে খুলতে হলে সমস্ত শর্ত তিন মাসের মধ্যে মানতেই হবে। তিন মাস পর পরিদর্শন হবে— এমনটাই ঘোষণা ছিল। চলতি সপ্তাহেই সেই ত্রৈমাসিক সময়সীমা শেষ হচ্ছে। এই সময়ে গোয়ার মর্মান্তিক দুর্ঘটনা প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়েছে। ফলে নতুন করে শুরু হল আচমকা নজরদারি।
এসওপিতে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, যে সব বহুতলে রুফটপ রেস্তরাঁ রয়েছে, সেখানে ছাদের রাস্তার দিকের অন্তত ৫০ শতাংশ খোলা রাখতে হবে বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য। রাখতে হবে আলাদা সিঁড়ি। বহুতলের সিঁড়ির দরজা সব সময় খোলা রাখতে হবে। নিরাপত্তার জন্য বাড়াতে হবে সিসিটিভি নজরদারি। গ্যাস সিলিন্ডার ও স্টোভ ব্যবহার নিষিদ্ধ। রান্না করতে হবে মাইক্রোঅভেন বা ইনডাকশনে। ঠিক তিন মাসের মধ্যে এ সব শর্ত না মানলে বাতিল হবে লাইসেন্স, বন্ধ করে দেওয়া হবে ব্যবসা।
পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ জানিয়েছে, শহরে মোট ৮৪টি রুফটপ রেস্তরাঁ নথিভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩০টি রেস্তোরাঁ লিখিত ভাবে জানিয়েছে যে, তারা সরকারের নির্ধারিত এসওপি মেনে চলবে। এখন পরিদর্শকদল দেখবে প্রতিষ্ঠানগুলি সত্যিই নিয়ম মেনে চলছে কি না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে কলকাতা পুরসভা।