পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে রুফটপ রেস্তরাঁ। কিন্তু ছাদ দখল করে এই ধরনের রেস্তরাঁ চালানোয় বাড়ির বাসিন্দাদের জীবনযাত্রায় ঝুঁকি বাড়ছিল। সেই বিষয়ে সুরাহা করতে কঠোর পদক্ষেপ করল রাজ্য সরকার। উত্তর কলকাতার মেছুয়ায় এক রুফটপ রেস্তরাঁয় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনার পরেই বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয় রাজ্য। ঘটনার পর রাজ্যে সাময়িক ভাবে রুফটপ রেস্তরাঁর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পরে আলোচনার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট শর্তে কলকাতা পুরসভা ফের ছাড়পত্র দেয়।
এ বার রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর আরও কড়া পদক্ষেপ করছে। শুক্রবার জারি হওয়া এক নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, রাজ্য সরকারের তরফে তৈরি করা ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ (এসওপি) না-মানলে আর কোনও রুফটপ রেস্তরাঁ চালানোর অনুমতি মিলবে না। প্রতিটি রেস্তরাঁমালিককে বন্ড সই করে অঙ্গীকার করতে হবে যে, তাঁরা ওই এসওপি পুরোপুরি মেনে চলবেন।
আরও পড়ুন:
মেছুয়া অগ্নিকাণ্ডের পর মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের নেতৃত্বাধীন ‘স্টেট লেভেল কমিটি ফর ফায়ার সেফটি অ্যান্ড রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স’ যে ‘এসওপি’ তৈরি করেছিল, তাতেই একাধিক কড়া নিয়ম নির্দিষ্ট রয়েছে। যেমন, ছাদের মোট আয়তনের অন্তত ৫০ শতাংশ খোলা রাখতে হবে এবং যাতায়াতের জন্য আলাদা ছাড়পথের ব্যবস্থা করতে হবে। এলপিজি বা কোনও দাহ্য জ্বালানি ব্যবহার করে রান্না করা যাবে না। শুধুমাত্র ইলেকট্রিক ওভেন ও মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করা যাবে।
রাজ্যের প্রতিটি পুরসভা এলাকাতেই এই নিয়ম কার্যকর হবে। সেই সঙ্গে, এসওপি অনুযায়ী ছাদে নতুন করে কোনও স্থায়ী নির্মাণ করা চলবে না। রেস্তরাঁ বা ক্যাফের জন্য নির্ধারিত ছাদের ১০ মিটারের মধ্যে কোনও আবাসিক বাড়ি থাকতে পারবে না। এছাড়া বাড়ির ছাদ সকল বাসিন্দার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। ছাদকে নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে মিউটেশন বা রেজিস্ট্রেশন করার অনুমতিও দেওয়া হবে না। রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে— নিরাপত্তা নিয়ে আর কোনও শিথিলতা চলবে না। রুফটপ রেস্তরাঁ চালাতে হলে আগুন, স্থাপত্য ও আবাসিক নিরাপত্তার সব শর্ত পূরণ করতেই হবে। ফলে এক দিকে যেমন ব্যবসায়ীরা নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য হবেন, অন্য দিকে, বাসিন্দাদের জন্যও ঝুঁকি অনেকটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।