Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

স্বচ্ছ তদন্তের দাবি উঠল স্মরণসভায়

দক্ষিণ দমদম পুরসভায় ছিল সঞ্চিতার স্মরণসভা। কাউন্সিলরেরাই সেখানে বক্তৃতা দেন। পুরপ্রধান ছাড়া সমস্ত কাউন্সিলরই হাজির ছিলেন। এসেছিলেন উপ-পুরপ্রধান সুজিত বসুও। সভায় সঞ্চিতা সম্পর্কে স্মৃতিচারণার পাশাপাশি তাঁর মৃত্যু-রহস্য ভেদে তদন্তের দাবিও ওঠে।

সঞ্চিতা দত্ত

সঞ্চিতা দত্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:০৬
Share: Save:

তাঁর মৃত্যু নিয়ে এ বার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুললেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার অন্য কাউন্সিলরেরাও। ওই পুরসভারই ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের কাউন্সিলর ছিলেন সঞ্চিতা দত্ত। তাঁর মৃত্যুর কারণ জানতে বুধবার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি তুলেছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও।

এ দিন দক্ষিণ দমদম পুরসভায় ছিল সঞ্চিতার স্মরণসভা। কাউন্সিলরেরাই সেখানে বক্তৃতা দেন। পুরপ্রধান ছাড়া সমস্ত কাউন্সিলরই হাজির ছিলেন। এসেছিলেন উপ-পুরপ্রধান সুজিত বসুও। সভায় সঞ্চিতা সম্পর্কে স্মৃতিচারণার পাশাপাশি তাঁর মৃত্যু-রহস্য ভেদে তদন্তের দাবিও ওঠে।

সঞ্চিতার পরিচিত ও সহকর্মীদের অনেকেই জানিয়েছেন, পুলিশি তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে তাঁরা সন্দিহান। কারণ, এই ঘটনায় এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। কেন কেউ অভিযোগ জানাতে এগিয়ে এলেন না, তা-ও রহস্যময়। যাঁরা অভিযোগ জানাতে পারতেন, তাঁরা সঞ্চিতার মা-বাবা। কিন্তু বুধবার ডানকুনিতে সঞ্চিতার বাপের বাড়িতে গিয়েও তাঁদের দেখা মেলেনি।

আরও পড়ুন: কর্মীরা তো ডিএ আশা করেনই, বলল হাইকোর্ট

এ দিন ডানকুনির সূর্য সেন নগরে সঞ্চিতার বাবা রামনছত্র গিরির খোঁজ করতে প্রতিবেশীরা জানালেন, তাঁরা কেউ বাড়িতে নেই। দমদমে মেয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছেন। বুধবার ছিল সঞ্চিতার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান।

প্রতিবেশীরা জানান, রামনছত্র বছর পাঁচেক আগে সেখানে বাড়ি করে এসেছেন। তাঁর দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। সঞ্চিতা ছোট। গিরি পরিবারের ছোট ছেলে ও বৌমা ডানকুনিতেই থাকেন। বড় ছেলে বিদেশে। তাঁর স্ত্রী-ও থাকেন ওই বা়ড়িতে।

সঞ্চিতার মৃত্যু নিয়ে শুধু সাধারণ মানুষ নন, ধন্দে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরাও। তবে এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে কেউই রাজি নন। খোলা মনে কথা বলার ক্ষেত্রেও তাঁরা অনেকটাই সাবধানী। গিরি পরিবারের প্রতিবেশীরা জানান, বাপের বাড়ির সঙ্গে সঞ্চিতার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। গত মাসেই ডানকুনি এসে টানা ২০ দিন ছিলেন তিনি। সেখান থেকেই দক্ষিণ দমদমে যাতায়াত করতেন।

পুরসভা সূত্রের খবর, এ দিনের স্মরণসভায় উপ-পুরপ্রধান তথা বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, ‘‘রাজনীতিতে সঞ্চিতা একেবারেই অনভিজ্ঞ ছিল। ওকে এক রকম হাতে ধরেই কাজকর্ম শিখিয়েছি। ওর মতো মেয়ের এ ভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নেওয়া যায় না।’’ তাঁর মতে, এর পিছনে কারণ যা-ই থাক, তার উন্মোচন হওয়াটা জরুরি।

কাউন্সিলরদের কথায়, ‘‘এলাকায় জল্পনা বাড়ছে। সংবাদপত্রে নানা কথা লেখা হচ্ছে। আসল সত্য আমাদেরও জানা দরকার। তার জন্য তদন্তের প্রয়োজন।’’ কাউন্সিলরদের একাংশের কথায়, ‘‘এটা আত্মহত্যা হলেও তার কারণটা জানতে হবে। আর যদি মৃত্যু অন্য কোনও কারণে হয়ে থাকে, তবে তা-ও সামনে আসা দরকার।’’ এক কাউন্সিলর বলেন, ‘‘যে মেয়েটি বেলা ১১টায় পুরসভার কর্মসূচিতে গেল, সে এক ঘণ্টার মধ্যে মরেই গেল? কী এমন ঘটল?’’ বিধাননগরের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘অভিযোগ না পেলে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করতেই পারে। সে ক্ষেত্রে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসা দরকার।’’

যত দিন যাচ্ছে, সঞ্চিতার মৃত্যু নিয়ে জল্পনা বেড়েই চলেছে। শোনা যাচ্ছে, সঞ্চিতার দেহ নামিয়ে আনতে চার যুবক ফ্ল্যাটে যান। তার পরে স্থানীয় এক যুবকের গাড়িতে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অথচ, এই খবরের সারবত্তা কতটুকু, তা কেউ জানে না।

পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। লেকটাউন থানার এক কর্তাকে আর জি কর হাসপাতালে দেখা গিয়েছিল। অথচ পুলিশ বলছে, তারা দেহ দেখতে পায়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি পুরসভার এক প্রবীণ কর্মী সঞ্চিতাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তাঁকে এত মনমরা লাগছে কেন? সঞ্চিতা নাকি বলেছিলেন, ‘‘কিছু ভাল লাগছে না। কত দিন আর টানতে পারব, জানি না।’’

কী বোঝাতে চেয়েছিলেন সঞ্চিতা? উত্তর জানা নেই সেই কর্মীরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE