Advertisement
E-Paper

তালা ভেঙে মশা দমনে ‘না’ কাউন্সিলরদের

দীর্ঘদিন ধরে ওয়ার্ডের কোনও বাড়ি তালা বন্ধ অবস্থায় পড়ে থাকলে সেই তালা ভেঙে বাড়ির ভিতর ও আশপাশ পরিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে পুর স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, পুরসভার গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, বন্ধ অবস্থায় পড়ে থাকা বহু বাড়িই ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী এডিস ইজিপ্টাই মশার আঁতুড়। অথচ তালা বন্ধ থাকার কারণে তা পরিষ্কার করা যায় না। তাই চলতি বছরে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে কাউন্সিলরদের তালা ভাঙার নির্দেশ দিয়েছে পুরসভা।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০২:২৯
এমন অনেক পুরনো বাড়িতে তালা দেওয়া থাকায় ঢুকতে পারেন না পুরকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

এমন অনেক পুরনো বাড়িতে তালা দেওয়া থাকায় ঢুকতে পারেন না পুরকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

মশা মারতে বাড়ির তালা ভাঙা নিয়ে এ বার কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর ও কাউন্সিলরদের একাংশের মধ্যে মতবিরোধ সামনে এল!

দীর্ঘদিন ধরে ওয়ার্ডের কোনও বাড়ি তালা বন্ধ অবস্থায় পড়ে থাকলে সেই তালা ভেঙে বাড়ির ভিতর ও আশপাশ পরিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে পুর স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, পুরসভার গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, বন্ধ অবস্থায় পড়ে থাকা বহু বাড়িই ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী এডিস ইজিপ্টাই মশার আঁতুড়। অথচ তালা বন্ধ থাকার কারণে তা পরিষ্কার করা যায় না। তাই চলতি বছরে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে কাউন্সিলরদের তালা ভাঙার নির্দেশ দিয়েছে পুরসভা।

কিন্তু কাউন্সিলরদের একাংশ জানিয়ে দিয়েছেন, তালা ভাঙা কোনওমতেই সম্ভব নয়। তাঁদের বক্তব্য, অনেক নির্দেশ খাতায়-কলমে থাকলেও বাস্তব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। যতই পুলিশ বা স্থানীয় বাসিন্দারা সাক্ষী হিসেবে থাকুন না কেন! উত্তর কলকাতার এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘বাস্তব অসুবিধার বিষয়টা পুরসভাকে বুঝতে হবে!’’ আর এক কাউন্সিলর বলেন, ‘‘কত বাড়িতে কত শরিকি ঝামেলা রয়েছে। বন্ধ বাড়িতে তালা ভেঙে ঢোকা সম্ভব না কি!’’ এক নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহা বলেন, ‘‘বাড়ির মালিকের ফোন নম্বর জোগাড় করে বাড়ি খোলার অনুরোধ করা যেতে পারে। কিন্তু তালা ভাঙাটা সৌজন্য নয়। সে যে যাই বলুন না কেন!’’

প্রসঙ্গত, তালাবন্ধ বাড়ি ও ফাঁকা জমিতে জঞ্জাল রীতিমতো মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুরসভার। তা নিয়ে পুর স্বাস্থ্য দফতরের তরফে দফায়-দফায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার পরেও পরিস্থিতি না বদলানোয় এও বলা হয়েছে, ডেঙ্গি রোখার দায়িত্ব শুধুমাত্র পুর স্বাস্থ্যকর্মীদের একার নয়। এতে সকলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

কিন্তু সেই ‘অংশগ্রহণ’ নিশ্চিত করতে যা বলা হয়েছে তাতেই আপত্তি বহু কাউন্সিলরের। মধ্য কলকাতার এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘তালা ভেঙে পরিষ্কার করার পর বাড়ির মালিক যদি এসে বলেন, বাড়িতে এটা ছিল, ওটা ছিল! তার দায় কে নেবে? চুরির দায়ে পড়ব নাকি?’’ আর এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘বাড়ির মালিকের ফোন নম্বর জোগাড় করে তাঁকে অনুরোধ করাই ভাল। আমরা করছিও। তাতে যতটুকু কাজ হওয়ার, আপাতত সেটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।’’ দুই নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সাধন সাহা বলেন, ‘‘একেবারে তালা ভেঙে দিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢোকার ক্ষেত্রে অসুবিধা তো রয়েছেই। অনেক বাড়ির ক্ষেত্রে হাইকোর্টে কেস চলছে। তবে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর তো আমাদেরই। ফলে দফতর কোনও নির্দেশ দিলেও তার বাস্তব পরিস্থিতি কী, সেটা আমাদের বিচার করতে হবে।’’

পুর স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, ডেঙ্গি হলে তার দায় পুর স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরেই আসে। বলা হয়, তাঁরা ঠিক ভাবে পরিষ্কার করেননি। কিন্তু মশা নিধন অভিযানে বেরিয়ে ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে বন্ধ বাড়ির ভিতরে কী পরিস্থিতি তা তাঁরা জানবেন কী ভাবে? এক কর্তার কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীরা তো আর নিজের দায়িত্বে বন্ধ বাড়ির তালা ভেঙে ঢুকতে পারবেন না। সেখানে কাউন্সিলরের সহযোগিতা জরুরি। তাঁদেরই বিষয়টা দেখা উচিত।’’ এর পাল্টা ছ’নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সঞ্চিতা মণ্ডল বলেন, ‘‘একদিন গেলাম আর তালা ভেঙে বাড়ি পরিষ্কার করে চলে এলাম, ব্যাপারটা কিন্তু তেমন নয়! নোটিস দিতে হবে আগে। তার পরে পুলিশকে জানানোর ব্যাপার আছে। ফলে পুরো প্রক্রিয়াটাই সময়সাপেক্ষ!’’

প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি পুর স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশটাই বাস্তবসম্মত নয়? এ বিষয়ে জানতে মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষকে একাধিক বার ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। উত্তর দেননি এসএমএস-এরও।

Dengue Health Department Locked house
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy