Advertisement
০৭ মে ২০২৪

‘হুকিং’ করা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু দম্পতির

সরু খালের ও পার থেকে ‘বেআইনি’ ভাবে টানা হয়েছে বিদ্যুতের তার। সেই তার পায়ে জড়িয়ে তড়িদাহত হয়ে মৃত্যু হল এক দম্পতির। রবিবার সকালে বাসন্তী হাইওয়ের ধারে চৌবাগা এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। নিহত দম্পতির নাম দিলীপ কুমার মালিক (৫০) ও অপর্ণা মালিক (৪৫)। পেশায় রাষ্ট্রায়ত্ত (নাবার্ড) ব্যাঙ্কের কর্মচারী দিলীপবাবু স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে ট্যাংরার আবাসনে থাকতেন। পারিবারিক চাষের জমি দেখতেই ছুটির দিনে তিনি চৌবাগা গিয়েছিলেন।

মৃত দম্পতি দিলীপকুমার মালিক ও অপর্ণা মালিক। — নিজস্ব চিত্র।

মৃত দম্পতি দিলীপকুমার মালিক ও অপর্ণা মালিক। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২২
Share: Save:

সরু খালের ও পার থেকে ‘বেআইনি’ ভাবে টানা হয়েছে বিদ্যুতের তার। সেই তার পায়ে জড়িয়ে তড়িদাহত হয়ে মৃত্যু হল এক দম্পতির। রবিবার সকালে বাসন্তী হাইওয়ের ধারে চৌবাগা এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। নিহত দম্পতির নাম দিলীপ কুমার মালিক (৫০) ও অপর্ণা মালিক (৪৫)। পেশায় রাষ্ট্রায়ত্ত (নাবার্ড) ব্যাঙ্কের কর্মচারী দিলীপবাবু স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে ট্যাংরার আবাসনে থাকতেন। পারিবারিক চাষের জমি দেখতেই ছুটির দিনে তিনি চৌবাগা গিয়েছিলেন।

এই ঘটনায় খাস কলকাতার পুর এলাকায় ওই তল্লাটে প্লাস্টিক ও চামড়ার কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে ‘হুকিং’ করে টানা তারে বিদ্যুতের জোগানের রমরমা বেআব্রু হয়ে গিয়েছে।

বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, সারা রাজ্য জুড়েই বেআইনি ভাবে তার টেনে অবাধে বিদ্যুৎ চুরি চলছে। প্রশাসনের তরফে এই হুকিং রোখার জন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলেও বার বার অভিযোগ উঠেছে। সিইএসসি-র এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘তপসিয়া, তিলজলার মতোই চৌবাগায় বিদ্যুৎ চুরিও ঠেকানো যাচ্ছে না। কয়েক বার অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সমস্যার নিষ্পত্তি হচ্ছে না।’’ প্রশাসনের পাল্টা অভিযোগ, এই হুকিং চক্রের পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক মদত। আর তাই কোনও ব্যবস্থা নিতে গেলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পুলিশ জানায়, সকাল ন’টা নাগাদ চৌবাগায় পারিবারিক চাষের জমি দেখতে গিয়েছিলেন ওই দম্পতি। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন অলকা বিশ্বাস নামে এক খেতমজুর। তিনিও গুরুতর জখম হয়ে চিত্তরঞ্জন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনার পরে দু’জনের দেহ আটকে ঘণ্টা দুয়েক ধরে হাইওয়ে অবরোধ করে ক্ষুব্ধ জনতা। পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খায় পুলিশ।

দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, খাল ধারে পর-পর খুপরি কারখানায় প্লাস্টিক ও চামড়ার কাজ চলছে। ঝাঁঝালো গন্ধে নাকে রুমাল চাপা দিতে হয়। খালের ওপারে গৃহস্থ বাড়ি থেকে ‘হুকিং’ করে কারখানায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা হয়েছে। সেই তার যত্র তত্র জট পাকিয়ে। কারখানার পিছনে চাষের জমিতে নেমেছিলেন মালিক দম্পতি। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, কোনওভাবে ছিঁড়ে পড়া তার তাঁদের পায়ে জড়িয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক মদতেই দীর্ঘদিন ধরে হুকিং করা তারে রমরমা বেড়েছে কারখানাগুলোর। এলাকার বাসিন্দা বাবলু মণ্ডল বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছর ধরেই এই বেআইনি কারবার শুরু হয়েছে। এখন ক্রমশ তা বাড়ছে। চাষের জমিও জবরদখল করেই কারখানার সীমানা বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে।’’ শুধু স্থানীয় মানুষই নন, স্থানীয় ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর পার্থ রায়চৌধুরী নিজেও এ ব্যাপারে প্রশাসনের ‘নিষ্ক্রিয়তা’র দিকটা স্বীকার করছেন। এ বার পুরভোটে টিকিট না-পাওয়া পার্থবাবুর অভিযোগ, ‘‘প্রশাসন সক্রিয় থাকলে এ ভাবে হুকিং চলতে পারত না।’’ তবে এ ব্যাপারে তিনি কী ভূমিকা পালন করেছেন, সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে এলাকার মানুষের অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ প্রশাসন সবাই এক সঙ্গে মিলেই এই কারবারে মদত দেয়।

বাস্তবিক, এ দিনের ঘটনার পরেও অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ধরতে পুলিশের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে। দম্পতির দেহ যেখানে পড়েছিল, তার পাশেই একটি গ্যারাজ। সিইএসসি-র অনুমোদন ছাড়াই গ্যারাজে খালের ও-পার থেকে বিদ্যুতের তার টানা হয়েছিল বলে অভিযোগ। সিইএসসি-র এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বেআইনিভাবে বিদ্যুৎ সংযোগের অভিযোগে চৌবাগার ঘটনায় অভিযুক্ত গ্যারাজ মালিক সুভাষ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আনন্দপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি খালের ওপার থেকে অবৈধ ভাবে দুটি মিটার থেকে বিদ্যুৎ টানছিলেন। ওই মিটার দুটি ‘সিল’ করা হয়েছে।’’ দম্পতির বড় ছেলে বি-কম ফাইনাল ইয়ারের পড়ুয়া সৌমিত্রের অভিযোগ, ‘‘আমরা বার বার পুলিশকে সুভাষবাবুর কথা বলা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না। সবার সামনে দিয়ে উনি দিব্যি সরে পড়লেন।’’ স্থানীয় বাসিন্দারাও এ দিন দোষীদের শাস্তির দাবিতে সরব হন। কার গাফিলতিতে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল, তার ঠিকঠাক তদন্তের দাবিতে এলাকার লোকজন পথ অবরোধ করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE