Advertisement
E-Paper

কোর্টের পাশে যেন মেলা, প্রশ্নে নিরাপত্তা

নিত্যদিন যেখানে অভিযুক্ত, অভিযোগকারী, উকিল, পুলিশ মিলে কয়েক হাজার মানুষের আনাগোনা। এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় কী ভাবে দোকান-বাজারের পসরা বসতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৪
শিয়ালদহ আদালত চত্বর এ ভাবেই ছেয়ে গিয়েছে দোকানে।

শিয়ালদহ আদালত চত্বর এ ভাবেই ছেয়ে গিয়েছে দোকানে।

দূর থেকে দেখলে মনে হতেই পারে, হাট বসেছে। জামাকাপড়, জুতো, ছোলাভাজা, যৌনতাবর্ধক ওষুধ— কীসের দোকান নেই সেখানে! ঠিক তার গা ঘেঁষে সাদা বাড়িটা বড়ই বেমানান। ওটা শিয়ালদহ আদালত। নিত্যদিন যেখানে অভিযুক্ত, অভিযোগকারী, উকিল, পুলিশ মিলে কয়েক হাজার মানুষের আনাগোনা। এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় কী ভাবে দোকান-বাজারের পসরা বসতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।

শুধু শিয়ালদহ আদালত নয়, অনেকটা একই দৃশ্য আলিপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত চত্বরের। জেলাশাসকের দফতর চত্বরে থাকা এই কোর্টের পাশে শুধু দোকান-বাজারই নয়, গজিয়ে উঠেছে গাড়ি এবং অটো রাখার জায়গাও। আইনজীবীদের অনেকেরই অভিযোগ, সেখানে কারা গাড়ি রাখছেন, কেন রাখছেন, তার কোনও নজরদারি নেই।

সম্প্রতি এ রাজ্যে বাংলাদেশের এবিটি জঙ্গিদের ডেরার খোঁজ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এখনও হন্যে হয়ে খোঁজ চলছে ব্লগার হত্যায় অভিযুক্ত এক জঙ্গি-সহ দু’জনের। এমন পরিস্থিতিতে শহরের আদালতগুলির মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকার নিরাপত্তা কতটা জোরালো, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকেরই। আইনজীবীদের একাংশই বলছেন, এ সব আদালতে জঙ্গিদেরও বিচার হয়। ফলে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের পাশাপাশি প্রমাণ নিকেশ করতেও হামলা হতে পারে কোর্ট চত্বরে।

আলিপুর আদালতে এমন ভাবেই ঠেস দিয়ে রাখা রয়েছে মই, যা দিয়ে যে কেউ উঠে পড়তে পারেন আদালতের ছাদে।

শিয়ালদহ, আলিপুর এবং ব্যাঙ্কশাল— শহরের এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আদালত চত্বর ঘুরে দেখা গেল, তুলনায় ব্যাঙ্কশালেই নিরাপত্তা জোরালো। ব্যাঙ্কশাল চত্বরে কলকাতার নগর দায়রা আদালতে ঢুকতে গেলেই পুলিশি তল্লাশির মুখোমুখি হতে হয়। আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, ব্যাঙ্কশাল আদালতের দোতলা বা তিনতলার এজলাসগুলি তুলনায় অরক্ষিত হলেও আদালত চত্বর এবং কোর্ট লক-আপ এলাকায় পুলিশি নজরদারি রয়েছে। ভিতরে অবাঞ্ছিত লোকজন বা দোকানপাটের ভিড়ও নেই।

কিন্তু শিয়ালদহ আদালতে ঢুকতে গেলেই অবাক হয়ে যেতে হয়। এমনিতেই স্টেশন চত্বরে হকার, দোকানপাটের অভাব নেই। সেই দোকান বাড়তে বাড়তে আদালতের গেটের মুখটাও কার্যত দখল করে নিয়েছে। ওই আদালতের এক প্রবীণ আইনজীবীর মন্তব্য, ‘‘হকারদের দাপট দেখে মনে হয়, কোর্টে আমরাই যেন অবাঞ্ছিত।’’ অসীম কুমার নামে এক আইনজীবী জানান, ২০১৩ সালে শিয়ালদহ আদালত সংলগ্ন বেশ কিছুটা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা নিয়ে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, আদালতের ৫০ গজের মধ্যে দোকানপাট বসবে না। কিন্তু পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের মদতে নিত্যদিনই দোকান বাড়ছে বলে অভিযোগ। আদালত সূত্রের খবর, এক জন বিচারক রোজ লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করেন। তিনি নিজে এই সমস্যার কথা এন্টালি থানাকে ডেকে জানিয়েছিলেন। কিন্ত কাজ হয়নি।

শিয়ালদহের আইনজীবীদের একাংশের দাবি, ওই এলাকায় বেশ কিছু হকার ও অস্থায়ী দোকানদার রয়েছেন, যাঁরা ভিন্ দেশের নাগরিক। কী ভাবে কোনও পরিচয়পত্র ছাড়াই তাঁরা ব্যবসা করছেন, উঠেছে সেই প্রশ্নও।

আলিপুরে মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসের অদূরেই রয়েছে পার্কিং লট। সেখানে বিচারক ও আইনজীবীদের গাড়ি ছাড়াও অটো, ছোট ট্রাক ও মালবাহী গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। থাকে কিছু বাইরের গাড়িও। অভিযোগ, সেই গাড়িগুলি কাদের, তা খতিয়ে দেখা হয় না। নজরদারিও নেই বললেই চলে। আলিপুরের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলেন, ‘‘আমাদের বার-এর নির্দিষ্ট গাড়ির স্টিকার রয়েছে। কিন্তু সাধারণ অ্যাডভোকেট স্টিকার সাঁটানো অনেক গাড়ি এখানে রাখা হয়। নিরাপত্তা বাড়ানো নিয়ে বহু বার কথা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি।’’

ব্যাঙ্কশাল আদালতের ছবিটা তুলনায় ভাল হলেও, সেখানেও অবাধ যাতায়াত।

পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সব ক’টি আদালত চত্বরের নিরাপত্তাই নিয়মিত খতিয়ে দেখা হয়। গুরুত্বপূর্ণ মামলা বা জঙ্গিদের হাজিরার দিন নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া, কোনও খামতি নজরে এলে প্রয়োজন মতো পদক্ষেপও করা হয়। বেআইনি হকার ও দোকান নিয়ে এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘হকার উচ্ছেদ করা হত। কিন্তু প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকেই হকার-বিরোধী অভিযানে রাশ টানা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের চাপও থাকে। কিন্তু আদালত থেকে এ ব্যাপারে নির্দেশ এলে নিশ্চয়ই পদক্ষেপ করা হবে।’’

ছবি: সুমন বল্লভ

Alipore Court Sealdah Court Bankshall Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy