হেলমেটহীন বাইক আরোহীকে থামানোর চেষ্টা এক সিভিক ভলান্টিয়ারের। পার্ক সার্কাসে। ফাইল চিত্র
শুধুই মামলা ঠুকে সাধারণ মানুষকে হয়রান না করে, তাঁদের ভুল শুধরে দিয়ে পুলিশকে ‘মানবিক মুখ’ হয়ে ওঠার নির্দেশ দিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার।
সম্প্রতি দিঘার প্রশাসনিক বৈঠকে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্প ঘিরে তোলাবাজি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। বলেছিলেন, ‘‘গাড়ি ধর, টাকা নাও চলছে কেন? আমাদের মানবিক হতে হবে।’’ তাঁর সেই মন্তব্যের পরেই সিপি-র এমন নির্দেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই।
কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেন, ট্র্যাফিক আইন ভাঙা রুখতে গিয়ে পুলিশি তৎপরতায় যেন মানুষ হয়রানির শিকার না হন। ওই নির্দেশে তিনি জানান, ট্র্যাফিক আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানাগুলিকে কেস দেওয়ার কোনও লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়নি। অতএব জোর করে তা আদায় করতে চাইলে মানুষ বৈষম্যের শিকার হতে পারেন এবং তাঁদের হয়রানি বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
গত কয়েক মাসে বেপরোয়া বাইক চালকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে এ দিন পুলিশের ভূমিকার কথা বলেন কমিশনার। নিয়মিত নজরদারি, নাকা তল্লাশি চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পুলিশি তৎপরতার কারণে যাতে মানুষ হয়রান না হন, তা দেখতে নির্দেশ দেন তিনি। হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো, বাইক রেস, জোরে হর্ন বাজানো-সহ ট্র্যাফিক আইন ভাঙার বিভিন্ন ঘটনায় অভিযুক্তদের বুঝিয়ে সচেতন করা ছাড়াও প্রয়োজনে কঠোর হতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ সজাগ থেকে পুলিশকে ‘মানবিক মুখ’ হয়ে ওঠার উপরে জোর দেন অনুজ শর্মা। পাশাপাশি, সিভিক ভলান্টিয়ারদের দাপট কমাতে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন নগরপাল। তাঁদের কী করতে হবে, তা নির্দিষ্ট সময় অন্তর পুলিশ আধিকারিকদের স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে জানানোর কথাও বলেন সিপি।
এই নির্দেশ জারির আগে মঙ্গলবার দুপুরে লালবাজারে এক বৈঠকে ডাকা হয় বেসরকারি বাসমালিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের। সেখানে জরিমানা আদায়ের নামে পুলিশি জুলুমের কথা ওঠে। বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস, ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতি, মিনিবাস অপারেটর্স কো অর্ডিনেশন কমিটি এবং বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের প্রতিনিধিরা। ছিলেন ডিসি (ট্র্যাফিক) ছাড়াও একাধিক পুলিশ আধিকারিক।
ট্র্যাফিক আইন ভাঙার অভিযোগ তুলে বেসরকারি বাস থেকে যথেচ্ছ জরিমানা আদায় করছে পুলিশ, এমন অভিযোগ করেন প্রতিনিধিরা। এ ছাড়াও পার্কিংয়ের নিয়ম না মানা এবং দূষণ সংক্রান্ত অভিযোগে বেসরকারি বাসকর্মীদের অহরহ জরিমানা করার অভিযোগ ওঠে। এমনকি সিভিক ভলান্টিয়ারেরা বাসের কাগজ দেখার নামে বাসকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন বলেও জানানো হয়। তাঁদের দাবি, মোটর ভেহিক্ল আইনে ট্র্যাফিক আইন (সাইটেশন) ভাঙার জন্য জরিমানার কথা কোথাও বলে নেই। পুলিশকর্তারা অবশ্য ওই সংক্রান্ত মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন বলে জানিয়েছেন।
সূত্রের খবর, সন্ধ্যায় নগরপালের নির্দেশ জারির পরে বাসমালিকদের ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy