Advertisement
১১ মে ২০২৪

প্রতিবাদী মিছিলে মিশেছে ফেলুদা থেকে টিনটিন

বৃহস্পতিবার কলকাতার পার্ক সার্কাস থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলে দেখা গিয়েছিল ব্যানার— “মোদী, শাহ, আপনারা কি ভারতের মন কি বাত শুনতে পাচ্ছেন?”

সৃষ্টিশীল: বৃহস্পতিবার কলকাতার নাগরিক মিছিলে পোস্টার, পথলিখন, পোশাকে প্রতিবাদ। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী, দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

সৃষ্টিশীল: বৃহস্পতিবার কলকাতার নাগরিক মিছিলে পোস্টার, পথলিখন, পোশাকে প্রতিবাদ। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী, দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

সুজিষ্ণু মাহাতো
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:১৭
Share: Save:

সালভাদর দালি থেকে টিনটিন, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ থেকে ‘রং দে বসন্তী’— রাজনীতির রং ছাড়া মিছিলে মিশে গিয়েছে সবই। নাগরিক সমাজের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী শক্তিই মিলিয়ে দিল কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, আরও অনেক শহরকে। মিছিলের এমন নানা সৃষ্টিশীল মুহূর্তই ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে, মন কেড়েছে নেটিজেনদের।

বৃহস্পতিবার কলকাতার পার্ক সার্কাস থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলে দেখা গিয়েছিল ব্যানার— “মোদী, শাহ, আপনারা কি ভারতের মন কি বাত শুনতে পাচ্ছেন?” রক্তিম পতাকায় লেখা হয়েছে— “খেটে খাওয়া মানুষের কোনও কাঁটাতার নেই, পেট আছে।” স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী দালির মুখের আদলে মুখোশ পরে একঝাঁক তরুণের ছবি ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। দালি যে ভাবে তাঁর ছবির মাধ্যমে প্রচলিত সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, মিছিলে যোগদানকারী তরুণেরাও হয়তো সেই বার্তা দিতে চেয়েছেন।

কোনও রাজনীতির রং ছাড়াই রঙিন এ দিনের নাগরিক মিছিলে হেঁটেছেন এক ব্যক্তি। মাথায় সান্তা ক্লজের টুপি, পরনে গেরুয়া পাঞ্জাবি এবং নীল লুঙ্গি। বুকের পোস্টারে ইংরেজিতে লেখা, ‘আমি কে?’ ফেসবুকে ছড়ানো একটি ভিডিয়োয় তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন পোশাক দেখে বোঝা যায় সে কে, তা হলে আমি কে? আমার নাম জোসেফ নরেন্দ্র মহম্মদ।”

শুধু বৃহস্পতিবারের মিছিলই নয়, আজ, শনিবারের মিছিলের প্রচারেও রয়েছে অভিনবত্ব। ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ সিনেমার মছলিবাবার ছদ্মবেশে ফেলুদার ছবি দেওয়া হয়েছে মিছিলের ডাক দেওয়া সেই পোস্টারে। সঙ্গে লেখা মগনলাল মেঘরাজকে বলা ফেলুদার কথা— ‘শুধু ঘুঘুই দেখেছ, ফাঁদ তো দ্যাখোনি!’ টিনটিন-ক্যাপ্টেন হ্যাডক-প্রফেসর ক্যালকুলাসের মজার কমিক স্ট্রিপ ব্যবহার করেও চলছে
ওই কর্মসূচির প্রচার।

স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে করা এই প্রতিবাদই এমন অভিনব ভাষার জন্ম দিয়েছে বলে মনে করছেন প্রাক্তন নকশাল ছাত্রনেতা অসীম চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “যখনই মানুষ স্বাধীন ভাবে কোনও কিছুতে শামিল হয়, তখনই তার সৃষ্টিশীল প্রবৃত্তিগুলি জেগে ওঠে। কোনও রাজনৈতিক দলের
অধীনে প্রতিবাদ হলেই সেখানে কিছু বাঁধা-ধরা স্লোগান চলে আসে। এখানে তা হচ্ছে না।” আবার বিজ্ঞাপন স্রষ্টা শৌভিক মিশ্রের মতে, কঠিন, তাত্ত্বিক কথার বদলে সহজ, আকর্ষক বক্তব্যের মাধ্যমে জনসংযোগের কাজ অনেক সহজে হয়। ঠিক যেমনটা হয় বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে। তাই প্রতিবাদী মিছিলের স্লোগানেও এমন সহজ ভাষার ব্যবহার মন কাড়ছে মানুষের। শৌভিকের মতে, “অভিনব স্লোগান বা বার্তা অনেক বেশি মানুষের কাছে নিজের কথা পৌঁছে দিতে পারে।”

কলকাতার মতো এমন টুকরো টুকরো অসংখ্য সৃজনশীল মুহূর্ত দেখা গিয়েছে দিল্লির জমায়েতেও। যন্তর মন্তরে এক পুলিশকর্মীর দিকে হাসিমুখে গোলাপ বাড়িয়ে দেওয়া তরুণীর হাতের পোস্টারে ইংরেজিতে লেখা, ‘বাবা ভাবছে আমি ইতিহাস পড়ছি। জানে না আমি নিজেই ইতিহাস তৈরি করছি।’ সেই ছবি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। আদতে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসেরই ছাত্রী ওই তরুণী শ্রেয়া প্রিয়ম রায়। পড়ুয়াদের উপরে পুলিশি হামলার প্রতিবাদ হিসেবেই মিছিলে পুলিশের দিকে গোলাপ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বলে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের ছাত্রী শ্রেয়া। তাঁর কথায়, “আমার বাড়ি পটনায়। বিজেপির সমর্থনে ভোট দিলেও বুঝেছি, বিজেপির নীতি ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে ধর্ম ও জাতের ভিত্তিতে বিভাজন করছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।”

প্রতিবাদের সঙ্গে ব্যঙ্গের সুরও মিশেছে দিল্লির রাজপথে। ভাইরাল হয়েছে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে লেখা একটি পোস্টার— ‘রাফালের ফাইল যে চুরি করেছে, সেই চোরই আমার নথি চুরি করেছে’। মুম্বইয়ে নাগরিকত্বের নথিকে প্রশ্ন করে লেখা হয়েছে স্লোগান, ‘আমি আমার নথি দেখাব, আগে তুমি তোমার ডিগ্রি দেখাও’। মুম্বইয়ের মিছিলে ‘প্রেম ভাগ করো, দেশ নয়’ লেখা পোস্টারটির ছবিও মন কেড়েছে নেটিজেনদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CAA Protest Netizens
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE