Advertisement
E-Paper

টাকার আকাল, ভোগান্তি অব্যাহত

বাড়িতে বিয়ে থাকলে টাকা তোলার সর্বোচ্চ সীমা শিথিল করা, প্রবীণ নাগরিকদের জন্য আলাদা লাইন থাকা, এ সব ব্যবস্থা অনেক দূর। কোনও গ্রাহককে দিনে সর্বাধিক ২৪ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য কলকাতার বহু ব্যাঙ্কে যথেষ্ট পরিমাণ নোটই ছিল না বুধবার।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৩
অপেক্ষা। বুধবার, শরৎ বসু রোডে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

অপেক্ষা। বুধবার, শরৎ বসু রোডে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

বাড়িতে বিয়ে থাকলে টাকা তোলার সর্বোচ্চ সীমা শিথিল করা, প্রবীণ নাগরিকদের জন্য আলাদা লাইন থাকা, এ সব ব্যবস্থা অনেক দূর। কোনও গ্রাহককে দিনে সর্বাধিক ২৪ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য কলকাতার বহু ব্যাঙ্কে যথেষ্ট পরিমাণ নোটই ছিল না বুধবার। ফলে, এ দিন বিভিন্ন ব্যাঙ্ককে নিজের নিজের মতো রেশনিং করতে হল টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে। যাতে সবাই টাকা পান, কিন্তু অল্প অল্প করে। তার পরেও অনেকেই খালি হাতে ফিরেছেন।

সব মিলিয়ে নোট বাতিলের ঘোষণার পর ১৫ দিন কেটে গেলেও কলকাতায় নিজের টাকা, হকের টাকা পেতে মানুষের ভোগান্তি অব্যাহত।

আবগারি দফতরের কর্মী, শিবপুর এলাকার নরেন বিশ্বাস এ দিন দুপুরে অন্ধ্র ব্যাঙ্কের চৌরঙ্গি শাখা থেকে ২৪ হাজার টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। ডিসেম্বরের গোড়ায় তাঁর ছেলের বিয়ে। নরেনবাবুর কথায়, ‘‘ঠিক করেছিলাম, সপ্তাহে এক দিন ব্যাঙ্কে এসে ২৪ হাজার টাকা তুলে নেব। রোজ এতটা উজিয়ে আসা সম্ভব নয়। কিন্তু সেটাও হল না।’’ এ দিন নরেনবাবুকে ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়, বেশি নোট মজুত নেই, সর্বোচ্চ সাত হাজার টাকা তোলা যাবে।

ধর্মতলার এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী, লেকটাউনের বাসিন্দা পুষ্কর মণ্ডল এ দিন সকালে চাঁদনি চকের সিন্ডিকেট ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়ান। তাঁরও ২৪ হাজার টাকা তোলার দরকার ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাঙ্ক জানিয়ে দেয়, টাকা ফুরিয়ে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ক্যাশ ভ্যান ব্যাঙ্কে পৌঁছল এবং মোট দু’ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর পুষ্করবাবু হাতে পেলেন মাত্র ছ’হাজার টাকা!

কিন্তু একটা টাকাও না পেয়ে এ দিন দুপুরে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের চৌরঙ্গি শাখা থেকে পিকনিক গার্ডেনের বাড়িতে ফিরে যেতে হয়েছে প্রবীণ নাগরিক প্রদীপ রক্ষিতকে। প্রেশার, সুগারের রোগী তিনি। বিকেল তিনটে নাগাদ ব্যাঙ্কের ক্যাশ কাউন্টারে গেলে তাঁকে জানানো হয়, টাকা শেষ। তাঁর কথায়, ‘‘শরীর অসুস্থ, পিকনিক গার্ডেন থেকে রোজ আসা খুব কষ্টকর। কিন্তু কী করব? কাল সকালে ফের আসতে হবে।’’

অথচ ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের ঘোষণা করার সময়ে বলা হয়েছিল, টাকার জোগান ধীরে ধীরে বাড়বে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, টাকার জোগান ধীরে ধীরে কমছে! বাড়ছে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ।

ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার যোধপুর পার্ক শাখা মঙ্গলবার দুপুর ২টোর পর থেকে আর টাকা দিতে পারেনি। এ দিনও ওই ব্যাঙ্কে সকালে প্রথম দিকে টাকা তুলতে পারেননি অনেকে। ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে রোজ গড়ে ২০-২৫ লক্ষ টাকা তাঁরা পাচ্ছিলেন। সেই জায়গায় এখন ১৫ লক্ষ টাকার বেশি আসছে না।

ওই ব্যাঙ্কেরই বাঘা যতীন শাখায় এ দিন এক প্রবীণ নাগরিক নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে ২৪ হাজার ও স্ত্রীর অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা তুলতে যান। ব্যাঙ্ক সবিনয়ে জানিয়ে দেয়, ১০ হাজারের বেশি দেওয়া যাবে না। বলে, ‘‘২৪ হাজার টাকা এক দিনে তুলতে হলে মঙ্গলবার আসুন। তার আগে পারব না।’’

কলকাতায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একটি সূত্রেও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, সিকিওরিটি প্রেস থেকে তাদের কাছেই কম নোট এসে পৌঁছচ্ছে।

ব্যাঙ্কগুলি ৫০০ টাকার নোট না পাওয়া নিয়েও সরব। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তা বলেন, ‘‘নতুন ৫০০ টাকার নোট এখনও দেখতে পেলাম না। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আগে এসবিআই-কে দেবে, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু দু’-একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমেও ৫০০-র নতুন নোট ঢোকানো হয়েছে। অথচ আমরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক হওয়া সত্ত্বেও বাদ!’’ তিনি জানান, গত তিন দিন যাবৎ তাঁদের ব্যাঙ্কে কেবল ২০০০ টাকার নোট আসছে।

চৌরঙ্গির এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের এটিএমের নিরাপত্তারক্ষী বলেন, ‘‘প্রথম দশ দিন ১০০ টাকার নোট বেরোচ্ছিল। গত চার দিন ধরে কেবল দু’হাজার টাকার নোট।’’ এলগিন রোডে এসবিআইয়ের এটিএমে এ দিন সকাল থেকেই টাকা নেই। ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এটিএম চালু ছিল। এখানে নতুন ৫০০ টাকার নোট মিলছে। টাকা ভরার দু’-তিন ঘণ্টার মধ্যেই এটিএম ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।’’

দুপুরে ভিড় কম হবে ভেবে এলগিন রোডের অন্ধ্র ব্যাঙ্কে যান ভবানীপুরের বাসিন্দা, বৃদ্ধ রমাকান্ত মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘ভিড় সত্যিই পাইনি। কিন্তু টাকাও পেলাম না!’’

খুচেরা ১০ টাকার কয়েন নিয়ে অধিকাংশ জায়গায় বিভ্রান্তি বাড়লেও এ দিন এসবিআই-এর চৌরঙ্গি শাখায়

২৪ হাজার টাকা তুলতে এসে এক হাজারটি দশ টাকার কয়েন নিয়ে বাড়ি ফিরতে হল বহু গ্রাহককে। পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা প্রণব পালের কথায়, ‘‘বাজারে দশ টাকার কয়েন কেউ নিতে চাইছে না। অথচ ব্যাঙ্ক থেকে ১০ টাকার কয়েন নিতে বাধ্য হচ্ছি। এ এক আজব দেশে বাস করছি।’’

currency notes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy