Advertisement
E-Paper

রাজ্যে পালাবদলই সার, জীর্ণদশায় ট্রাম কোম্পানি

রাতের নিঝুম কলকাতায় ট্রামে বাড়ি ফিরছিলেন ইনস্পেক্টর সাত্যকি সিংহ ওরফে রানা (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়)। উঠেই ট্রামের সিটে গা এলিয়ে দিলেন তিনি। সারা দিনের পরিশ্রমের পর এই ট্রাম-যাত্রাটুকুই যে শান্তির। শ্রান্ত রানা ট্রামের সিটে গা এলিয়েই এত দিন ধরে ঘটে যাওয়া টুকরো টুকরো ছবিগুলি মনের পর্দায় মেলাচ্ছিলেন। ট্রামের ‘ঢং ঢং’ ঘ্যানঘ্যানে আওয়াজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল রানার চিন্তার স্রোতগুলো।

অত্রি মিত্র ও সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ০২:০৮

রাতের নিঝুম কলকাতায় ট্রামে বাড়ি ফিরছিলেন ইনস্পেক্টর সাত্যকি সিংহ ওরফে রানা (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়)। উঠেই ট্রামের সিটে গা এলিয়ে দিলেন তিনি। সারা দিনের পরিশ্রমের পর এই ট্রাম-যাত্রাটুকুই যে শান্তির। শ্রান্ত রানা ট্রামের সিটে গা এলিয়েই এত দিন ধরে ঘটে যাওয়া টুকরো টুকরো ছবিগুলি মনের পর্দায় মেলাচ্ছিলেন। ট্রামের ‘ঢং ঢং’ ঘ্যানঘ্যানে আওয়াজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল রানার চিন্তার স্রোতগুলো। হঠাৎই সেই স্রোত মিলিয়ে দিল সবগুলি ঘটনাকে। ছবির মতো স্পষ্ট হয়ে উঠল দিল্লি থেকে কাঠখড় পুড়িয়ে কেন কলকাতায় এসেছেন বিদ্যা (বিদ্যা বালন)।

সম্প্রতি বলিউডের ‘কহানি’ সিনেমায় বারবার উঠে এসেছিল কলকাতার এমনই টুকরো টুকরো ছবি। সেখানেই দেখা গিয়েছিল শহরের অফিসফেরতা যাত্রীদের ট্রামযাত্রার সামান্য আরাম ‘চুরি’ করে নেওয়ার দৃশ্য। বর্তমানে কলকাতায় যা একে বারে দুর্লভ। বিশ্বের অন্য শহরের মতো এ শহরও এখন দিনরাত ছুটছে। ট্রামে উঠে ধীরগতিতে শহর দেখতে দেখতে যাওয়ার ফুরসত নেই কারও। সময়ের দাবি মেনে তাই ট্রামের প্রয়োজন কমেছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে ট্রাম-রুটের সংখ্যাও। তার হাত ধরে কমেছে কলকাতা ট্রাম কোম্পানির (সিটিসি) রমরমাও। সিটিসি-র হিসেব বলছে, তাদের হাতে রয়েছে প্রায় ২৭০টি ট্রাম। অথচ, প্রতি দিন রাস্তায় নামে মাত্র ৯০টি। ডিপোয় বসে থাকতে থাকতে জীর্ণ দশা অধিকাংশ ট্রামের।

ঘোড়ায় টানা দিয়ে যাত্রা শুরু করা কলকাতার ট্রাম আর ক’বছর পরে দেড়শোয় পা দেবে। এর মধ্যে ধাপে ধাপে বৈদ্যুতিন ট্রাম পেরিয়ে হালফিলে চালু হয়েছে এসি ট্রামও। কিন্তু ক্রমশ কমেছে সিটিসি-র আয়। কমেছে ট্রাম-রুটও। যার মধ্যে বালিগঞ্জ-ধর্মতলা, বালিগঞ্জ-বিবাদি বাগ, টালিগঞ্জ-ধর্মতলা, খিদিরপুর-বালিগঞ্জ, বেহালা-মোমিনপুরের মতো অনেকগুলি লাভজনক রুটও রয়েছে বলে জানাচ্ছেন ট্রামকর্তারা। নিগমের এক কর্তার কথায়, “ট্রাম থাকা সত্ত্বেও চালানো যাচ্ছে না। শহরে পঁচিশটির বেশি রুটে ট্রাম চলে না।”

ট্রামের প্রয়োজনীয়তা কমার বিষয়টি বুঝেই আশির দশক থেকে সিটিসি-কে বাস পরিষেবায় যুক্ত করেছিল তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকার। কিন্তু সঠিক নীতির অভাবে বাস চালিয়েও লাভের মুখ দেখতে পারেনি ট্রাম কোম্পানি। উল্টে দেনার ভারে ক্রমশই রুগ্ণ হয়েছে।

রুগ্ণ সিটিসি-র হাল আরও খারাপ হয়েছে রাজনৈতিক সুপারিশে কর্মী নিয়োগ করতে গিয়ে। সূত্রের খবর, সিটিসি-তে এখন বাসপিছু কর্মীসংখ্যা অন্তত ১০ জন। পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, “নিয়োগের এই ধারাবাহিকতা এ রাজ্যে পালাবদলের পরেও একই রকম। কলকাতা-নির্ভর হওয়ায় এখানে শাসক দলের প্রভাব বেশি। স্বভাবতই কর্মী নিয়োগের সুপারিশও বেশি।”

পাহাড় প্রমাণ এই নিয়োগের চাপে নিগমের এখন নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা। বাম আমল থেকেই সিটিসি-র কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের কয়েক কোটি টাকা বকেয়া। গত তিন বছরে সেই পরিমাণ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। কমেনি সরকারি ভর্তুকির পরিমাণও।

কথা ছিল, বেশি বাস চালিয়ে সিটিসি-কে চাঙ্গা করে তোলা হবে। কিন্তু ২০১১ সালে এ রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পরে সিটিসি-তে নতুন বাস কেনা হয়েছে মাত্র ১৫টি। সম্প্রতি নিগমগুলির মধ্যে অযথা প্রতিযোগিতা রুখতে রুট পুনর্বিন্যাস করেছে সরকার। সিটিসি-র কর্তাদের অভিযোগ, সেই পুনর্বিন্যাসে কলকাতার বেশির ভাগ রুটই সিটিসি-র হাত থেকে চলে গিয়েছে কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (সিএসটিসি) হাতে। ফলে বাস চালিয়ে আরও লোকসানের মুখোমুখি হতে হচ্ছে দেড়শো বছরের প্রাচীন এই পরিবহণ নিগমকে।

(চলবে)

atri mitra subsidiary subsidy supriyo tarafdar ctc calcutta tram corporation kolkata news online kolkata news state government tmc government poor condition mamata banerjee's government
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy