ইদানীং ডিজিটাল গ্রেফতারির ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করেছে জালিয়াতেরা। এ বার অনেকটা একই কায়দায় তাদের খপ্পরে পড়ে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা খোয়ালেন কলকাতা পুলিশের এক অফিসার! ওই অফিসারের অভিযোগ, প্রায় আড়াই মাস ধরে ফোনে যোগাযোগ রেখে তিন দফায় তাঁর কাছ থেকে ওই টাকা নেওয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে লালবাজারের সাইবার ক্রাইম থানা। তবে সোমবার পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, হাতিয়ে নেওয়া টাকা ঢুকেছে তিনটি অ্যাকাউন্টে।
সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের ওই অফিসারকে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে ফোন করে বলা হয়, তিনি সাইবার প্রতারণায়
জড়িত এবং তাঁর বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তাঁকে প্রথমে ফোন করে এক ব্যক্তি নিজেকে টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা ট্রাই-এর কর্মকর্তা হিসাবে পরিচয় দেয়। এ-ও বলে, ওই অফিসার দিল্লিতে এবং দেশের অন্যান্য জায়গায় সাইবার অপরাধে জড়িত আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ৬৭টি মামলা রয়েছে।
পুলিশের দাবি, বিশ্বাস অর্জনের জন্য ওয়টস্যাপে ওই অফিসারকে সিবিআই, ইডি, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ছাপ দেওয়া কিছু নথি পাঠানো হয়। এমনকি,
ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। তিনি দেশের বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার নজরদারিতে যে আছেন, সেই প্রমাণও দেয় জালিয়াতেরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতারিত অফিসারকে এক ব্যক্তি ফোন করে নিজেকে আইপিএস অফিসার এবং সিবিআইয়ের রাকেশ কুমার হিসাবে পরিচয় দিয়ে গ্রেফতার করার ভয় দেখায়। আর সেই ফাঁদেই পা দেন অভিযোগকারী। ভয় পেয়ে তিনি প্রতারকদের কথা মতো জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা আরটিজিএসের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেন। পুলিশ জানিয়েছে, প্রথম দফায় সাড়ে ন’লক্ষ, দ্বিতীয় দফায় পাঁচ লক্ষ ও শেষে প্রায় তিন লক্ষ টাকা দিয়ে দেন ওই অফিসার। সেই টাকা প্রতারকেরা রাজস্থান এবং অসমের একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নিয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জেনেছেন তদন্তকারীরা।
এক পুলিশকর্তা জানান, এই ধরনের সাইবার অপরাধের টোপে যাতে কেউ না পড়েন, তার জন্য সচেতনতার প্রচার চালানো হয়। ওই পুলিশ অফিসারকে কখনও গ্রেফতারির ভয় দেখিয়ে, কখনও বিষয়টি আপসে মিটিয়ে নেওয়ার কথা বলে টাকা হাতানো হয়েছে। তদন্তকারীরা গুরুত্ব সহকারে ঘটনাটি খতিয়ে দেখছেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)