সাহসিনী: ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন ললিতাদেবী। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।
রাত তখন সাড়ে তিনটে। ভবানীপুর থানায় ফোন করে এক মহিলা প্রায় ফিসফিস করে জানান, বাড়িতে চার মুখোশ পরা দুষ্কৃতী ঢুকে তাঁর স্বামীর মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে রেখেছে। তিনি কোনও মতে পাশের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। সাহায্য চাই।
ফোন পেয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে ভবানীপুরের গাঁজা পার্ক সংলগ্ন ২৬এ আনন্দ ব্যানার্জি লেনের ওই বহুতলের চার তলার ফ্ল্যাটে পৌঁছয় পুলিশ। যদিও ততক্ষণে চার দুষ্কৃতী পালিয়েছে বলেই দাবি করেন ওই ফ্ল্যাটের মালিক মোহন অগ্রবাল ও তাঁর পরিবার।
পুলিশ জানায়, বুধবার রাতে এমনই এক ঘটনার অভিযোগ জানাল ভবানীপুর থানার আনন্দ ব্যানার্জি লেনের অগ্রবাল পরিবার। পরিবারের কর্তা মোহন অগ্রবালের এলগিন রো়ডে একটি ছবি তোলার স্টুডিও রয়েছে।
অগ্রবাল পরিবার পুলিশকে জানায়, গভীর রাতে কলিং বেলের আওয়াজ শুনে মোহনবাবু ঘুম চোখে দরজা খুলতেই চার জন মুখোশধারী তাঁকে ঠেলে ভিতরে ঢুকে পড়ে। ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে মোহনবাবুকে তারা কিছু বলতে থাকে। এক সময়ে দুষ্কৃতীদের এক জন শোওয়ার ঘরে ঢুকে ফের বেরিয়ে আসে এবং মোহনবাবুর মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে কিছু জানার চেষ্টা করে।
ঘটনার সময়ে শোওয়ার ঘর থেকে মোহনবাবুর দিদি গায়ত্রী এবং স্ত্রী ললিতা বেরিয়ে আসেন। কিন্তু ললিতাদেবীকে ঘরে ঢুকে যেতে বলে দুষ্কৃতীরা। স্বামীর সঙ্গে কেউ দেখা করতে এসেছে ভেবে ঘরে ঢুকেও যান ললিতাদেবী। কিন্তু কিছু ক্ষণ পরে সন্দেহ হওয়ায় তিনি ফের বাইরে বেরিয়ে আসেন এবং দেখেন বসার ঘরের দরজার পাশে স্বামী দাঁড়িয়ে। তাঁর মাথায় ঠেকানো রিভলভার আর চার দুষ্কৃতী মোহনবাবুকে কিছু জিজ্ঞাসা করে চলেছে। অস্ত্র ঠেকানো অবস্থায় স্বামীকে দেখেই শোওয়ার ঘরে ঢুকে স্ত্রী ললিতাদেবী ফোন করেন থানায়।
বৃহস্পতিবার মোহনবাবুর প্রৌঢ়া স্ত্রী জানান, রাতে কলিং বেলের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল তাঁর। তিনি হাসপাতাল থেকে ডায়ালিসিস করে বাড়ি আসায় ক্লান্ত ছিলেন। ওই রাতে মেয়ে এবং বৌমার সঙ্গে তিনি অন্য ঘরে শুয়েছিলেন। আচমকা বেলের আওয়াজ এবং পরে স্বামীর গলার শব্দ পান তিনি। ললিতাদেবীর কথায়, ‘‘আমার ঘরেও কেউ ঢুকে আলো জ্বেলেছিল। আলো দেখে রেগে গিয়ে সেটা বন্ধ করতে বলি। কিছু ক্ষণ পরে স্বামীর সঙ্গে অজ্ঞাতপরিচয় কিছু ছেলের গলার আওয়াজ পেয়ে ওঠে আসি এবং দেখি স্বামীর মাথায় রিভলভার ঠেকানো। আর চার জন মুখোশধারী কিছু বলে চলেছে। বুঝে যাই কোনও অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে। ফোন করে দিই থানায়।’’
আর বাইরে থেকে কোনও ভাবে তা আন্দাজ করতে পেরেই ফ্ল্যাট ছেড়ে চম্পট দেয় চার দুষ্কৃতী। যদিও অগ্রবাল পরিবারের পড়শি ফ্ল্যাটের অনেকেরই দাবি, ঘটনার পর বাইরে থেকে হুড়কো টানা ছিল। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, দুষ্কৃতীরা যাওয়ার সময়ে সম্ভবত এই কাজ করে গিয়েছিল যাতে অগ্রবাল দম্পতি চিৎকার করলে কেউ বেরোতে না পারে! যদিও ফ্ল্যাট থেকে দুষ্কৃতীরা একটি স্টিল ক্যামেরা এবং মোহনবাবুর দিদি গায়ত্রীদেবীর গলার হার ছাড়া কিছু নিয়ে যায়নি বলেই দাবি। পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy