E-Paper

ছন্দে চলার থেরাপিতেই সহজ-পাঠ বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের

এ তো বড় শক্ত! মঞ্চে উঠে এত আলো আর শব্দের মধ্যে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে কারও সাহায্য ছাড়াই আমাদের ছেলে-মেয়েরা কি করে উঠতে পারবে? সেই সংশয় কাটিয়ে ছেলে-মেয়েরা শুধু পারলই না, এমন ভাবে সবটা পরিবেশন করল যে হলঘর জুড়ে শোনা গেল শুধুই হাততালি!

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:০২
বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মেতে উঠল মধুসূদন মঞ্চ। শুক্রবার।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মেতে উঠল মধুসূদন মঞ্চ। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

মঞ্চে পর পর হাতে পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে ন’জন। কোনও পোস্টারে লেখা খুশি, কোনওটিতে দুঃখ, কোনওটিতে রাগ, কোনওটিতে লেখা ভয়। লেখা রয়েছে আরও কিছু অভিব্যক্তি। এগুলিই নির্দিষ্ট পোস্টারের সামনে দাঁড়িয়ে অভিব্যক্তি প্রকাশ করে দেখাতে হবে।

এ তো বড় শক্ত! মঞ্চে উঠে এত আলো আর শব্দের মধ্যে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে কারও সাহায্য ছাড়াই আমাদের ছেলে-মেয়েরা কি করে উঠতে পারবে? সেই সংশয় কাটিয়ে ছেলে-মেয়েরা শুধু পারলই না, এমন ভাবে সবটা পরিবেশন করল যে হলঘর জুড়ে শোনা গেল শুধুই হাততালি! দর্শক আসনে বসা অনেকের চোখে তখন জল।

শুক্রবার মধুসূদন মঞ্চে ‘সাম্য ফাউন্ডেশন ফর স্পেশ্যাল নিডস’-এর ডান্স ও মুভমেন্ট থেরাপির অনুষ্ঠান ছিল এমনই কিছু চমকে ভরা। তুলে ধরা হয়, গানের তালে হেঁটে কী ভাবে শেখা যায় ভিড়ের মধ্যে দিয়ে হাঁটার পদ্ধতি। কতটা দূরত্ব রেখে চলতে হবে, কতটা দূরত্বে থামতে হবে ইত্যাদি। ছিল বল নিয়ে নিজের সারা শরীরে ঘোরানোর মতো নানা কাজ।

সাম্য ফাউন্ডেশনের প্রধান তথা ডান্স মুভমেন্ট থেরাপিস্ট, চিকিৎসক অদিতি বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চ থেকেই বললেন, ‘‘অনেক কিছুই অত্যন্ত সাধারণ মনে হয়। কিন্তু এই কাজগুলো করতেই অনেক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যায় আমাদের ছেলেমেয়েরা। আসলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের মধ্যে অনেকেই ভিড়ের সামনে কী ভাবে এগিয়ে যাবেন, বুঝে উঠতে পারেন না। ওঁরা নির্দিষ্ট লয়-তালেরমাধ্যমে নিজেকে জানতে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ করার একটা ধারণা পান। এই থেরাপির প্রধান মাধ্যম ছন্দ (রিদ্‌ম) এবং নড়াচড়া (মুভমেন্ট)। ছন্দ এবং নড়াচড়া বহু কাজকেই সহজ করে দেয়।’’উদাহরণ দিয়ে অদিতি জানান, এক বিশেষ চাহিদাসম্পন্নের মা জানিয়েছিলেন, তাঁর মেয়ে গায়ে সাবান দিতে পারে না। শরীরে হাত চালাতে সমস্যা হয়। কিন্তু বল হাতে নিয়ে নির্দিষ্ট ছন্দে হাত চালাতে চালাতে সাবান মাখাও সেই মেয়ের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। ফের হাততালির ঝড় ওঠে সভাগৃহে।

দর্শকাসনে একই রকম উচ্ছ্বাস দেখা যায় আদিত্য, অনুরাধা, আরাত্রিকাদের গান শুনে। ‘সাম্য সিম্ফনি সিঙ্গার্স’দের গলায় তখন গলা মেলাচ্ছেন ঘরভর্তি দর্শক। সেখানেই ছিলেন ‘অটিজ়ম সোসাইটি, ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর প্রধান ইন্দ্রাণী বসু। পরে তিনি ফোনে বলেন, ‘‘এই ধরনের বহু থেরাপিই অত্যন্ত কার্যকর। ছেলে-মেয়েদের এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, এত আনন্দের সঙ্গে সমস্তটা করতে দেখে খুব ভাল লেগেছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Specially Abled Cultural Program

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy