Advertisement
E-Paper

কাচ ভেঙে উদ্ধার ১১

উদ্ধারকাজ চলাকালীন পরিদর্শনে যান দমকলমন্ত্রী তথা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, ওই বহুতলে এক জন মহিলা-সহ এগারো জন আটকে ছিলেন। কী করে আগুন লাগল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৭ ০৩:০২
লড়াই: জানলা ভেঙে ধোঁয়া বার করছেন দমকলকর্মীরা। বৃহস্পতিবার , প্রিটোরিয়া স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র

লড়াই: জানলা ভেঙে ধোঁয়া বার করছেন দমকলকর্মীরা। বৃহস্পতিবার , প্রিটোরিয়া স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র

দোতলার বারান্দা থেকে তিনতলার জানলা লক্ষ করে ইট ছুড়ছিলেন দমকলের কর্মীরা। একটা করে কাচ ভাঙছে আর ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছে চারপাশ। আতঙ্কে মুখ কালো হয়ে যাচ্ছে নীচে দাঁড়ানো কর্মীদের। তখনও ভিতরে আটকে জনা দশ সহকর্মী।

বৃহস্পতিবার দুপুর বারোটা নাগাদ ১২ নম্বর প্রিটোরিয়া স্ট্রিটের একটি বহুতলে আগুন লেগে এই আতঙ্ক ছড়ায়। বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ওই বহুতলে আটকে পড়েন কয়েক জন অফিস কর্মী। ওই বহুতলের পাশে একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থাকায় আতঙ্ক আরও ছড়িয়ে প়ড়ে।

দমকলের এগারোটি ইঞ্জিন প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভায়। যাঁরা আটকে ছিলেন তাঁদের উদ্ধার করে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। উদ্ধারকাজ চলাকালীন পরিদর্শনে যান দমকলমন্ত্রী তথা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, ওই বহুতলে এক জন মহিলা-সহ এগারো জন আটকে ছিলেন। কী করে আগুন লাগল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

দমকল সূত্রে খবর, পাঁচতলা ওই বিল্ডিংয়ের তিনতলায় কেন্দ্রীয় সরকারের একটি অফিসের এসি থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ওই বহুতলে অগ্নিনির্বাপক পরিকাঠামো থাকলেও আগুনের সময়ে সেগুলির কোনওটিই কাজ করেনি। বহুতলের পাঁচটি তলায় ১২টি অফিস রয়েছে। সব ক’টি এ দিন খোলা ছিল। সম্প্রতি ওই বহুতলের সম্প্রসারণ হয়েছে। সম্প্রসারিত নতুন তলাগুলিতে কোনও জানলা নেই। পুরোটাই কাচ দিয়ে এমন ভাবে ঘেরা, যার জেরে দ্রুত ধোঁয়ায় ভরে যায়। তাই অফিস কর্মীদের নামতে অসুবিধা হয়। বিশেষত, চার ও পাঁচতলার অফিসের কর্মীরা বহুতলের ছাদে উঠে পড়েন। দমকল গিয়ে আটকে পড়া কর্মীদের উদ্ধার করলেও আগুনের উৎসস্থলে পৌঁছতে বেশ বেগ পেতে হয়।

এ দিন ঘটনাস্থলে দমকলের গাড়ি ঢুকতেও বেশ সমস্যা হয়। ওই গলিতে একাধিক গা়ড়ি দাঁড়িয়ে থাকার জেরে রাস্তা আটকে যায়। ওই সময়ে পার্কিংয়ের কোনও কর্মী ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকায় দমকলকর্মীরা পার্কিংয়ের গাড়ি সরিয়ে দমকলের গাড়ি নিয়ে যান। এ দিকে, বাইরে থেকে জল দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই ওই বহুতলে। তাই ল্যাডার আসার পরে দমকলকর্মীরা বহুতলের কাচ ভেঙে তৃতীয়তলায় ঢোকেন। তার পরে হোসপাইপে জল দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ধোঁয়ায় বেশ কয়েক জন দমকলকর্মী অসুস্থ বোধ করেন। দমকলের একাংশ জানায়, ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে আনতে যে ধরনের মাস্ক এবং অন্যান্য সরঞ্জাম দরকার, তা না থাকার জেরেই এই সমস্যা।

পাঁচতলায় আটকে থাকা শীতল পাণ্ডে নামে এক ব্যক্তি প্রাণ বাঁচাতে দড়ি বেয়ে বারান্দা থেকে পাশের বাড়ির ছাদে পৌঁছন। ওই তলাতেই আটকে পড়েছিলেন গৌতম দুবে নামে আর এক কর্মী। তিনি বলেন, ‘‘বিকট আওয়াজ শুনে তাড়াতাড়ি নামার চেষ্টা করি। কিন্তু সিঁড়িতে খুব ধোঁয়া ছিল, তাই আটকে পড়ি। লিফ্‌টও কাজ করছিল না। ভয় হচ্ছিল, স্টিফেন কোর্টের মতো হবে না তো!’’ তৃতীয় তলায় আটকে প়ড়েছিলেন বিবেক কুমার। দমকলকর্মীরা তাঁকে বাইরে বেরোতে সাহায্য করেছেন। বেরোনোর পরে তিনি বলেন, ‘‘অন্ধকারে সিঁড়িতে আটকে রয়েছি। দমবন্ধ হয়ে আসছিল। এখন ওই বহুতলের দিকে তাকালেই ভয় লাগছে।’’ বহুতলের তৃতীয় তলায় আটকে ছিলেন প্রদীপকুমার মাইতি। আতঙ্কিত হয়ে ফোন করেন ছেলে প্রীতমকে। ওই বহুতলের কাছেই পড়াশোনা করেন প্রীতম। বাবা আটকে রয়েছে জানতে পেরে দমকল আসার আগেই নিজে দৌড়ে উঠে পড়েন বহুতলে। আটকে প়়ড়েন বাবা-ছেলে। দমকলকর্মীরা পরে তাঁদের উদ্ধার করেন।

Fire Pretoria Street প্রিটোরিয়া স্ট্রিট শোভন চট্টোপাধ্যায় Sovan Chatterjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy