Advertisement
১৬ মে ২০২৪

ছ’দিন পরে গঙ্গা থেকে দেহ মিলল যুগলের

গত ১৮ ডিসেম্বর, মিলেনিয়াম পার্কের কাছ থেকে লঞ্চে উঠে এক যুগল গঙ্গাবক্ষে ঝাঁপ দিয়েছিলেন বলে জানায় পুলিশ। উত্তর বন্দর থানা তদন্ত শুরু করে। জানা যায়, সুজাতা নামে বছর সাতাশের ওই তরুণীর মস্তিষ্কে ক্যানসার হয়েছিল। অবস্থা ছিল শেষ পর্যায়।

সুজাতা বাজপেয়ী ও অভিষেক সাউ

সুজাতা বাজপেয়ী ও অভিষেক সাউ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:২৩
Share: Save:

ছ’দিন বাদে অবশেষে রহস্য কাটল। গঙ্গা থেকেই উদ্ধার হল নিখোঁজ যুগল সুজাতা বাজপেয়ী এবং অভিষেক সাউয়ের মৃতদেহ। সোমবার মেটিয়াবুরুজের কাছে নেতাজি সুভাষ ডকের কাছ থেকে দেহ দু’টি উদ্ধার করে রিভার ট্র্যাফিক। পুলিশ জানিয়েছিল, গত ১৮ ডিসেম্বর ওই দু’জন গঙ্গায় ঝাঁপ দেন। তবে তা নিয়ে রহস্য ছিল। কারণ, তাঁদের জলে ঝাঁপ দেওয়ার সময়ের কোনও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশের কাছেও ছিল না।

গত ১৮ ডিসেম্বর, মিলেনিয়াম পার্কের কাছ থেকে লঞ্চে উঠে এক যুগল গঙ্গাবক্ষে ঝাঁপ দিয়েছিলেন বলে জানায় পুলিশ। উত্তর বন্দর থানা তদন্ত শুরু করে। জানা যায়, সুজাতা নামে বছর সাতাশের ওই তরুণীর মস্তিষ্কে ক্যানসার হয়েছিল। অবস্থা ছিল শেষ পর্যায়। একসঙ্গে বেশি দিন থাকা হবে না বুঝে সুজাতার সঙ্গে জলে ঝাঁপ দেন তাঁর বন্ধু অভিষেকও। লঞ্চে তরুণীর ব্যাগ থেকে পাওয়া প্রেসক্রিপশন দেখে পুলিশ জানতে পারে চিকিৎসার জন্য শহরের বিভিন্ন ক্যানসার হাসপাতালে ঘুরে বেরিয়েছিলেন তাঁরা। শেষে মুম্বইের ক্যানসার হাসপাতালেও গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পরেই গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছিলেন তাঁরা বলে জানতে পারে পুলিশ।

এর পরে গত ছ’দিন ওই যুগলের কোনও খোঁজ মিলছিল না। নেতাজি সুভাষ ডকের কাছে এ দিন দু’টি দেহ ভাসতে দেখেন রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের আধিকারিকেরা। খবর যায় উত্তর বন্দর থানায়। সেখান থেকে খবর যায় অভিষেকের বাবা ওমপ্রকাশ সাউ ও সুজাতার মা অপর্ণা ভারতীর কাছে। পরিবারের সদস্যেরা গিয়ে দেহ দু’টি শনাক্ত করেন। উত্তর বন্দর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বলেন, ‘‘বহু ক্ষেত্রে দেহ পেতে মাসের পর মাস পেরিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি পাওয়া গিয়েছে। ময়না-তদন্ত এবং কিছু আইনি প্রক্রিয়ার পরে দেহ দু’টি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’’

এ দিন ছেলের দেহের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওমপ্রকাশবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ছেলের পরনে এখনও ওই পোশাকই রয়েছে। দেখেই চিনেছি। আর কিছু বলার নেই। ছেলে আমাদের কোনও সুযোগই দিল না।’’ ওমপ্রকাশ আগেই জানিয়েছিলেন, সুজাতার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে সবটা জেনেও ছেলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক মেনে নিয়েছিলেন ওমপ্রকাশবাবুরা। এমনকি, ক্যানসারের চিকিৎসাও করাতে চেয়েছিলেন।

মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধারের কথা শুনে অপর্ণাদেবী মাঝেমধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সুজাতার মামা। তাঁদের অভিযোগ, ক্যানসার ধরা পড়ার পরে সুজাতার স্বামী রাজেশ বাজপেয়ী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। এ দিন তাঁর স্ত্রীর মৃতদেহ উদ্ধারের কথা শুনেও তিনি আসেননি। রাজেশকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি এ সব দেখতে পারব না। তাই যাইনি।’’

এ দিকে সুজাতার মামার চিন্তা সুজাতার তিন বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে। দিদার কাছেই থাকবে সে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাঁদের বাড়ি ভাড়া পাওয়া নিয়ে সমস্যাও। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ওই বাড়ি ছেড়ে পাঁচ দিনের মধ্যে উঠে যেতে হবে অপর্ণাদেবীকে। তিনি ফোন ধরে বলেন, ‘‘যখন শেষ হয়, তখন সব এ ভাবেই হয়। নাতনিটাকে মানুষের মতো মানুষ করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Suicide Ganges Dead Body
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE