Advertisement
২৯ মার্চ ২০২৩
Covid 19

মৃত্যু বাড়ছে করোনায়, সময়ে দাহকাজ নিয়েই চিন্তা ধাপায়

গত চার মাসেও ধাপার শ্মশান ছাড়া করোনায় মৃতদের দেহ সৎকারের আর কোনও বিকল্প ব্যবস্থা হয়নি।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২০ ০৩:১৭
Share: Save:

সংক্রমণের পাশাপাশি করোনায় মৃত্যুর সংখ্যাও প্রতিদিন বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এ দিকে, মৃতদেহ সৎকারের জন্য এখনও ভরসা স্রেফ দু’টি চুল্লি। গত চার মাসেও ধাপার শ্মশান ছাড়া করোনায় মৃতদের দেহ সৎকারের আর কোনও বিকল্প ব্যবস্থা হয়নি। মৃতদের পরিজনেদের বড় অংশেরই এখন প্রশ্ন, “মাত্র দু’টি চুল্লিতে এত মৃতদেহ দাহ হচ্ছে কী করে?’’

Advertisement

বিমানবন্দর এলাকার বাসিন্দা এক ব্যক্তি সম্প্রতি মারা গিয়েছেন করোনায়। তাঁর স্ত্রী কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে স্বামীর মৃতদেহ দেখে বেরিয়ে জানিয়েছিলেন, বৃষ্টিতে সাইকেল চালিয়ে কাজ থেকে ফেরার সময়ে পড়ে গিয়ে পায়ে গুরুতর চোট পান তাঁর স্বামী। ভাঙা পা নিয়ে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে সেখানেই করোনা ধরা পড়ে তাঁর। এর পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হলে সেখানে মারা যান।

ওই মহিলা বললেন, “মৃতদেহ দেখে বেরোলাম। কিন্তু হাসপাতালের এক কর্মী জানালেন, রাতের আগে দেহ ধাপায় নিয়ে যাওয়া যায় না। কলকাতাতেই সে দিন নাকি ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই সব দেহের সঙ্গে সল্টলেকের দেহগুলিও নাকি ধাপায় যাবে। রাতের আগে দাহ শুরু না হলে এতগুলি দেহ সৎকার হবে কখন?”

আরও পড়ুন: তিন ব্যাধির জাল কেটে বৃদ্ধ হেঁটেই বাড়িতে​

Advertisement

এই প্রশ্ন করা হয়েছিল নিমতলা শ্মশানের এক কর্মীকে। ১২ বছর ধরে কলকাতা পুরসভার কর্মী হিসেবে শ্মশানে নিযুক্ত ওই ব্যক্তি জানালেন, নিমতলায় প্রতিদিন গড়ে ৪৫টি মৃতদেহ আসে। দু’টি ভিআইপি ছাড়া সেখানে মোট ছ’টি চুল্লি রয়েছে। এক-একটি মৃতদেহ দাহ হতে গড়ে এক ঘণ্টা সময় লাগে। সেই হিসেবে ছ’টি চুল্লি কাজ করলে এক-একটিতে সাত-আটটি করে মৃতদেহের সৎকার করা যায়। দেহগুলি চুল্লির ভিতরে দেওয়া ও বার করার সময় ধরে টানা সাতটি দেহ একটি চুল্লিতে দাহ করতে ১০ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। তাঁর দাবি, “ধাপার বৈদ্যুতিক চুল্লিও নিমতলার মতোই। সেখানেও এ রকমই সময় লাগার কথা।”

কিন্তু কত মৃতদেহ যাচ্ছে ধাপায়? রাজ্য সরকারের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, গত বৃহস্পতি এবং শুক্রবার কলকাতায় ১৩ জন করে করোনায় মারা গিয়েছেন। শনিবার মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। নিমতলার ওই কর্মীর দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, প্রতিদিন যদি গড়ে ১০টি করে দেহ ধাপায় যায়, তা হলে সেখানকার দু’টি চুল্লির এক-একটিতে পাঁচটি করে দেহ সৎকার করতে সাত ঘণ্টার বেশি সময় লাগার কথা নয়। তবে ধাপার শ্মশান যে সাত নম্বর বরোর অন্তর্গত, সেখানকার সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রের খবর, ধাপায় দাহকাজে সব চেয়ে বড় সমস্যা রাতের আগে চুল্লি চালাতে না পারা। সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ধাপায় পুরসভার ডাম্পিং বিভাগের প্রায় দু’হাজার কর্মী কাজ করেন। ওই সময়ের মধ্যে সেখানে যাতায়াত করে হাজার হাজার জঞ্জাল-বোঝাই লরি। ওই কর্মীদের সকলের এবং আশপাশের কয়েকটি বস্তির নিরাপত্তার কথা ভেবেই ধাপায় দাহকাজ রাতে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। হাসপাতালগুলিকেও সেই মতো রাতের দিকে দেহ পাঠাতে বলা আছে বলে ধাপা সূত্রের খবর।

রাত ৮টার পর থেকে ভোরের আলো ফোটার আগে পর্যন্ত কাজ চালিয়ে সামাল দেওয়ার চেষ্টা হলেও সম্প্রতি বিকল হয়ে যাওয়া একটি চুল্লি বিপদ বাড়িয়ে দিয়েছিল বলে জানালেন ওই সাব-রেজিস্ট্রার।

পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য তথা পুর স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতীন ঘোষ বললেন, “শুধু তো কলকাতার করোনা মৃতদেহ নয়, সল্টলেকের করোনার দেহও আমাদের ধাপায় নিতে হচ্ছে। তাতেই চাপ বেড়ে যাচ্ছে।” এই ধরনের দেহ সংরক্ষণ করে রাখার মতো পরিকাঠামোও তো নেই পুরসভার! তা হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে কী করে? এ প্রশ্নের অবশ্য কোনও উত্তর মেলেনি পুর প্রশাসনের কারও কাছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.