ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের অধীনে দু’টি মেলা এ বার স্থগিত রাখল রাজ্য সরকার। বাম আমল থেকেই প্রতি বছর কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে ক্রেতা সুরক্ষা মেলা হয়ে আসছে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে মেলার জাঁকজমক আরও বাড়ে। আগামী ২৩-২৫ ডিসেম্বর নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে ক্রেতা সুরক্ষা মেলা হওয়ার কথা ছিল। তার দু’সপ্তাহ পরেই বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে তিন দিন ধরে ওই মেলা করার পরিকল্পনা হয়েছিল।
দফতর সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের সচিব তথা প্রিন্সিপাল সচিব নীলম মিনাকে ফোন করে জানান, রাজ্যের তিন জায়গায় ক্রেতা সুরক্ষা মেলা এ বার বন্ধ করতে হবে। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো উত্তর দিনাজপুরের হরিরামপুর, নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম এবং বিষ্ণুপুরে মেলা স্থগিত রাখতে হবে। নীলম তখন মুখ্যসচিবকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, হরিরামপুরের মেলা পুরোপুরি প্রস্তুত। দফতরের মন্ত্রীও মেলার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলেছেন। কলকাতা থেকে একাধিক আধিকারিকও মেলার জন্য রওনা দিয়েছেন! সব শুনে মুখ্যসচিব জানান, তা হলে বাকি দু’টি, অর্থাৎ, নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম এবং বিষ্ণুপুরের মেলা বন্ধ রাখতে হবে। এর পরেই নীলম ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্রকে ফোনে পুরো বিষয়টি জানান।
প্রসঙ্গত, বিপ্লব হরিরামপুরের বিধায়ক। শুক্রবার রাতে এ বিষয়ে বিপ্লব বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার প্রিন্সিপাল সচিব ফোনে জানান, নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম ও বিষ্ণুপুরের মেলা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। হরিরামপুরের মেলাও বন্ধ রাখতে বলেছিলেন। কিন্তু মেলার সমস্ত কিছু প্রস্তুত হয়ে যাওয়ায় তিনি ওই মেলায় সবুজ সঙ্কেত দেন।’’ উল্লেখ্য, শনিবার উত্তর দিনাজপুরের হরিরামপুরে মেলার উদ্বোধন হয়েছে।
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে জনসংযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি, জিনিসপত্র কেনার ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে নেতাজি ইনডোরে ওই ক্রেতা সুরক্ষা মেলা করে আসছিল। পাশাপাশি, জেলাতেও হয় ওই মেলা। কিন্তু এ বার সেই মেলা বন্ধের কারণ কী? তা হলে কি মেলা নিয়ে কোথাও দুর্নীতি হয়েছে? না কি আর্থিক বোঝা কমাতেই রাজ্যের মেলা স্থগিতের সিদ্ধান্ত?
মন্ত্রী বলেন, ‘‘মেলা নিয়ে কোথাও দুর্নীতি হয়নি। আর্থিক সমস্যাটাই কারণ হতে পারে। কেন্দ্র বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হয়তো বুঝেছেন, এ সময়ে মেলার অতিরিক্ত খরচের বোঝা কমানো দরকার।’’ মন্ত্রী জানান, নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামের মেলার বাজেট দু’কোটি টাকার বেশি। হরিরামপুর ও বিষ্ণুপুরে মেলার বাজেট যথাক্রমে এক কোটি দশ লক্ষ এবং এক কোটি টাকার বেশি। মন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘ক্রেতা সুরক্ষা মেলায় প্রচুর মানুষ আসেন।
হরিরামপুরের মেলায় তিন দিনে কমপক্ষে তিন লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। নেতাজি ইনডোর ও বিষ্ণুপুরের মেলাতেও প্রচুর ভিড় হয়। বড় কোনও কারণ ছাড়া এমন মেলা বন্ধ হওয়ার কথা নয়।’’
রাজ্যের শাসকদলের প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রাক্তন আইএএস অফিসার জহর সরকার মনে করেন, ‘‘মেলা হঠাৎ করে বন্ধ করার সিদ্ধান্তের পিছনে অন্যতম কারণ আর্থিক সমস্যা হতে পারে। তবে, তা হলে আগে থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাতারাতি মেলা বন্ধ করে দেওয়ার পিছনে বড় কোনও কারণ থাকতে পারে।’’ প্রাক্তন মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেনের পর্যবেক্ষণ, ‘‘ক্রেতা সুরক্ষা মেলা আচমকা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের পিছনে প্রথম কারণ আর্থিক বোঝা তো বটেই। বাকি কারণগুলির উত্তর খুঁজতে হবে।’’
বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তথা বিধানসভার দলীয় সচেতক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘খেলা-মেলার সরকার যখন মেলা বন্ধ করছে, তখন বুঝতে হবে, এই সরকারের কাছে টাকা নেই। যাদের পাড়ায় সমাধানের টাকা নেই, তারা মেলা করবে কী করে? এই সরকার যে ২০২৬ সালে চলে যাচ্ছে, তা এই ক্রেতা সুরক্ষা মেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)