নোটের আকালে ঘর-গেরস্থালি, বাজার-হাটের ছন্দ বিগড়ে গিয়েছে। জনজীবনের অন্তরালে কারাগারের যে সংসার, সেখানেও তা-ই। ছোট নোটের অভাবে রাজ্যের জেলে জেলে কর্তাদের মাথার চুল খাড়া হওয়ার জোগাড়!
এক দিকে নোট বাতিলের ঘোষণার আগে কয়েদিদের পরিবারের তরফে জেল-তহবিলে জমা পড়া পাঁচশো-হাজারের নোট। অন্য দিকে, আকালের বাজারে তহবিলে জমার পরিমাণও কমছে। ফলে বন্দিদের রোজকার চাহিদা মেটানো কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে।
খাওয়া-দাওয়া ছাড়াও জেলবন্দিদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে নানা জিনিস লাগে। যেমন, গামছা, চটি, জামাকাপড় থেকে খাতা-বই, পেন ইত্যাদি। কারা-সূত্রের খবর, এ সবের সংস্থান হয় মূলত দু’উপায়ে। কী রকম?
এক, বন্দির বাড়ির কেউ সেগুলো কিনে দিয়ে যান। দ্বিতীয় উপায়, তাঁরা বন্দির তহবিলে টাকা দিয়ে যান। তা দিয়ে থেকে বন্দি নিজেই দরকারি জিনিসপত্র কিনে নেন। কারা পরিভাষায় যাকে বলা হয়, ‘পিসি (প্রিজনার’স ক্যাশ) বাজার।’ বন্দিরা জেল-ক্যান্টিন থেকেও জিনিস কেনেন, কুপন মারফত। একই ভাবে জেলের পিসিও বুথ থেকে ফোন করার জন্যও বন্দিরা কুপন পান টাকার বিনিময়ে। এই সব খরচা বাবদ সংশ্লিষ্ট বন্দির তহবিল থেকে টাকা কেটে ক্যান্টিন বা ফোন বুথের মালিককে দেওয়া হয়। সশ্রম দণ্ডে দণ্ডিতদের কাজের মজুরি তাঁদের অ্যাকাউন্টে জমা হয়। এর কিছুটা তাঁরা জেলে আনিয়ে খরচ করতে পারেন।
এবং বিচারাধীন হোক বা সাজাপ্রাপ্ত— দু’ধরনের বন্দির ক্ষেত্রেই লেনদেন হয়ে থাকে মূলত নগদে। তাতেই গোল বেধেছে। সাব-জেল, মহকুমা জেল বা জেলা-কারাগারে এই জাতীয় নগদ তহবিলের আকার খুব বড় না-হলেও সেন্ট্রাল জেলে বহরটা নেহাত কম নয়। এক কারা-কর্তার কথায়, ‘‘এক-একটা সেন্ট্রাল জেলে প্রায় রোজই কিছু কয়েদির বাড়ির লোক এসে টাকা দিয়ে যান। গড়ে ছ’সাত লাখ টাকা পর্যন্ত নগদ থাকে। বেশিটাই পাঁচশো-হাজারের নোটে।’’
ফলে সমস্যা তৈরি হয়েছে। ক্যান্টিনে মাল সরবরাহ করে যারা, তারা ওই নোট নিতে চাইছে না। জোগানে টান পড়েছে।
এখানেই শেষ নয়। পাঁচশো-হাজারে লেনদেন নিষিদ্ধ হওয়া ইস্তক কোনও জেলই কয়েদিদের পরিবারের থেকে ওই সব নোট নিচ্ছে না। তাই পরিবারের তরফে জমার হার প্রায় তলানিতে। কাজ চালানোর মতো ছোট নোট জোগাড় করতে কর্তাদের কালঘাম ছুটছে। ‘‘প্রেসিডেন্সি বা আলিপুর সেন্ট্রালে রোজ গড়ে কুড়ি-পঁচিশ হাজার টাকা জমা পড়ত। গত সাত দিনে তা দশ হাজারের নীচে নেমে গিয়েছে!’’— মন্তব্য এক কারাকর্তার।
এমতাবস্থায় ওঁরা কার্যত দিশাহারা। জমে থাকা পাঁচশো-হাজারের বান্ডিল আপাতত অকেজো। কবে সেগুলোর গতি করে সমপরিমাণ নতুন নোট জোগাড় হবে, ঠিক নেই। এ দিকে বন্দি-তহবিলে আমদানিও কমেছে। কয়েদিদের নিত্য দরকারি জিনিসপত্র কী ভাবে জোগানো যাবে, ভেবে তল মিলছে না। কিছু জেল-কর্তৃপক্ষ অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর দিন থেকে কারারক্ষীদের ব্যাঙ্কে পাঠিয়ে পাঠিয়ে পাঁচশো-হাজারের নোট বদলে এনেছেন। কোথাও সাজাপ্রাপ্তদের অ্যাকাউন্টে পাঁচশো-হাজারের নোট জমা দিয়ে খানিক বোঝা হাল্কা করা হয়েছে।
তা সত্ত্বেও সঙ্কটের ছায়া কম-বেশি সব জেলেই বহাল। আশু সমাধানের রাস্তা চোখে পড়ছে না। ‘‘মুশকিল হচ্ছে ঠিকই। তবে টাকা মার যাওয়ার ভয় নেই। এ তো কালো টাকা নয়! ভিড়-ভাট্টা একটু কমলে দেখা যাবে।’’— বলছেন এক সেন্ট্রাল জেলের আধিকারিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy