ছুটির ভিড়ের দেখা নেই আনোয়ার শাহ রোডের এক মলে। — নিজস্ব চিত্র
সপ্তাহভর অফিসের পরে ছুটির দিনে বাড়িতেই থাকতে ভালবাসেন। এমনকী, বাড়ির খুদে সদস্যের অনুরোধেও বেড়াতে যান না। এ সপ্তাহে গেলেন। কিন্তু এক জায়গায় নয়, একাধিক জায়গায় ঘুরেও ইচ্ছেপূরণ হল না।
পেশায় বহুজাতিক সংস্থার কর্মী, বালিগঞ্জের বাসিন্দা তন্ময় চৌধুরী সংবাদমাধ্যমে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নতুন নির্দেশের কথা শুনে রবিবার ছুটেছিলেন শহরের বড় দোকানগুলিতে। কিন্তু কোথাওই কেউ তাঁর মুখে হাসি ফোটাতে পারেনি। বরং দিনভর সঙ্গী স্রেফ বিরক্তি। এক দিকে নোট বাতিল, অন্য দিকে প্রতিদিন নোট সংক্রান্ত নিত্যনতুন নির্দেশ— সব মিলিয়ে নোটের চোটে জেরবার তিনি।
তন্ময়বাবু একা নন। শহরের একাধিক জায়গায় এমন বিভ্রান্তির শিকার অনেকেই।
সংবাদমাধ্যম থেকে অনেকেই জেনে ছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নতুন নির্দেশ। তাতে বলা হয়েছিল— পেট্রোল পাম্পের কায়দায় বড় শহরের বড় দোকানেও ডেবিট কার্ড সোয়াইপ করে টাকা মিলবে। কিন্তু নির্দেশই সার। কলকাতার অধিকাংশ শপিং মলে কার্ড সোয়াইপ করে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকেই টাকার আশায় দোকানে গেলেও মল কর্তৃপক্ষ ফিরিয়ে দিচ্ছেন। তাঁদের দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই ধরনের কোনও নির্দেশ তাঁদের কাছে নেই। সুতরাং তাঁরা কোনও নগদ টাকা দেবেন না। বাধ্য হয়ে আমজনতা ফের অমূল্য রতনের সন্ধানে এক এটিএম থেকে অন্য এটিএম চষে ফেলছেন।
ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা পাওয়ার আশায় এ দিন প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি শপিং মলে হাজির হয়েছিলেন অনেকেই। লেক গার্ডেন্সের বাসিন্দা সঙ্গীতা মজুমদার যেমন। তিনি জানান, টাকা মিলবে জেনে সকালে মলে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অসফল হয়েই ফিরতে হয়। সঙ্গীতাদেবীর কথায়, ‘‘রোজ নতুন নতুন নির্দেশ শুনছি। তাতেই আরও সমস্যা হচ্ছে। এই শুনলাম, বড় শহরের বড় দোকানে ডেবিট কার্ড থেকে টাকা তোলা যাবে। কই, পাওয়া যাচ্ছে না তো? দোকানিরা বলছেন, তাঁরা নাকি এ সব কিছু জানেনই না।’’
রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের একটি শপিং মলেও বিফল হয়ে ফিরেছেন অর্থ-সন্ধানীরা। অল্প কিছু কেনাকাটার হাত ধরে টাকা পাওয়ার উদ্দেশ্যে বড় দোকানে হাজির হয়েছিলেন অধিকাংশই। কালীঘাটের বাসিন্দা সোহিনী সরকারের কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম অল্প কিছু কেনাকাটাও হবে আর টাকাও মিলবে। কিন্তু কোনও দোকান টাকা দিতে চাইছে না। নিয়ম যত বাড়ছে, তত বেশি নাজেহাল হচ্ছি।’’
অধিকাংশ সময়ে টাকা না থাকায় শহরের বহু এটিএম পরিষেবা দিতে পারছে না। ব্যাঙ্ক থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা তোলা যাচ্ছে। তাই বড্ড বেশি হিসেব কষেই দিন কাটাতে হচ্ছে আমজনতাকে। যেখানেই টাকা পাওয়ার ইঙ্গিত মিলছে, সেখানেই দৌড়চ্ছে আমজনতা। কিন্তু সেই আশায় শহরের পেট্রোল পাম্পের মতোই জল ঢেলে দিল বড় দোকানগুলোও।
সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ের এক শপিং মলে গিয়েছিলেন সেলিম আহমেদ নামে এক যুবক। দু’দিন ধরে শহরের একাধিক পেট্রোল পাম্পে ঘুরেও টাকা পাননি তিনি। টাকার আশায় এ দিন দোকানে দোকানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু অধরাই থেকে গিয়েছে লক্ষ্মী। সেলিম জানান, এ দিন ওই শপিং মলে কেনাকাটা সেরে পেট্রোল পাম্পের কায়দায় দোকান থেকে ডেবিট কার্ডে টাকা নিতে চেয়েছিলেন তিনি। ম্যানেজার বলে দেন, এ বিষয়ে তাঁরা কিছু জানেন না। তাঁদের কাছে কোনও লিখিত নির্দেশও নেই। সেলিমের কথায়, ‘‘নির্দেশ জারির পরে এতটা সময় কেটে গেলেও কেন কোথাও সেই নির্দেশ লিখিত ভাবে আসছে না, সেটা তো সরকারের দেখা দরকার। কত দিন এই ঝামেলা পোয়াতে হবে!’’
এ নিয়ে বিভ্রান্তির আর এক শিকার টালিগঞ্জের অনুপমা হাজরা। তাঁর কথায়, ‘‘এখন যা অবস্থা দেখছি, তাতে তো বোধহয় সারাক্ষণ খবরের চ্যানেলের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে হবে! কখন যে কী হবে বুঝেই উঠতে পারছি না। সংবাদমাধ্যমে এক কথা শুনছি, আর বাজারে গেলে তারা বলছে কিছুই জানে না।’’ অনুপমার সঙ্গে একমত কলেজপড়ুয়া নীলাঞ্জনও। জানালেন, শনিবার দিনভর দাদার সঙ্গে শহরের পেট্রোল পাম্পগুলো চষে বেরিয়েছিলেন। এ দিন একাই শহরের বড় বড় দোকানগুলো ঘুরেছেন। কিন্তু সর্বত্রই হতাশ হতে হয়েছে। নীলাঞ্জনের কথায়, ‘‘একেই ব্যাঙ্কের হিসেব বড্ড জটিল। তার উপরে যদি রোজ নতুন নিয়ম তৈরি হয়, তা হলে তো পাগল হয়ে যাব! যা যা নিয়ম আছে, তা সাধারণ জনগণের জন্য এক বারে লিখে ওয়েবসাইটে দিয়ে দিলে সুবিধা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy