Advertisement
E-Paper

নুনের গুণ গাইতে গিয়ে ডেঙ্গি-যুদ্ধে বিভ্রান্তি

স্বাস্থ্য দফতরের তরফে কাউন্সিলরদের বলা হয়েছিল, প্রয়োজনে বাড়িতে রাখা ছোট পাত্রের জমা জলে লার্ভা মারার জন্য নুন মেশানো যেতে পারে। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর এটাও স্পষ্ট জানিয়েছিল যে, ওই পদ্ধতি একটি উপায় মাত্র। একমাত্র উপায় কখনওই নয়।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৮ ০৪:০৮

বিতর্কের ঘোলা জল নয়, নোনা জলে নেমে পড়েছে কলকাতা পুরসভা!

ডেঙ্গি রোধে নুনের গুণ গাইতে গিয়ে ছড়িয়েছে বিভ্রান্তি। যার জেরে তৈরি হয়েছে প্রবল মতপার্থক্য। সেই বিতর্কের এক দিকে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর, অন্য দিকে শহরের কাউন্সিলরদের একটি বড় অংশ।

জমা জলে নুন মেশালে ডেঙ্গির জীবাণুবাহী এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভা মরে যায়, এমনটাই জানিয়েছিল পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর। সেই কথা শুনে পাড়ায় পাড়ায় কাউন্সিলরেরা জলে নুন মেশানোর যে ঢালাও নিদান দিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পুরসভার স্বাস্থ্যকর্তারা। তাঁদের দাবি, জলে নুন মেশানোর যে কথা তাঁরা বলেছিলেন, সেটা একটি পদ্ধতি হলেও তার অর্থ এই নয় যে, যেখানে-সেখানে জল জমিয়ে তাতে নুন ফেলে দিলেই মশার সব লার্ভা মরে যাবে। কাউন্সিলরদের পাল্টা দাবি, পুর স্বাস্থ্য দফতর বলেছিল বলেই তাঁরা নুন-তত্ত্বের কথা জেনেছেন ও প্রচার করছেন। এখন স্বাস্থ্য দফতর অন্য কথা বললে তো মুশকিল। তা ছাড়া, মানুষকে দু’রকম কথা বোঝাতে গেলে আরও বেশি বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে।

পতঙ্গবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, এডিস ইজিপ্টাই প্রধানত স্বাদু জলের মশা। পরিষ্কার, স্বচ্ছ জলেই ওই মশা বংশবিস্তার করে। কিন্তু জলে নোংরা বা নোনতা ভাব থাকলে সেখানে ওই মশার লার্ভা বাঁচতে পারে না। তাই স্বাস্থ্য দফতরের তরফে কাউন্সিলরদের বলা হয়েছিল, প্রয়োজনে বাড়িতে রাখা ছোট পাত্রের জমা জলে লার্ভা মারার জন্য নুন মেশানো যেতে পারে। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর এটাও স্পষ্ট জানিয়েছিল যে, ওই পদ্ধতি একটি উপায় মাত্র। একমাত্র উপায় কখনওই নয়। তা দিয়ে মশা পুরোপুরি নির্মূল করাও সম্ভব নয়। বরং বাড়ির ছোট-বড় কোনও পাত্রেই জল যাতে না জমে, সে দিকেই খেয়াল রাখা উচিত সকলের।

পুরসভার এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা মারার জন্য পাত্রের জলে নুন মেশানো যেতে পারে বটে, কিন্তু তা সম্পূর্ণ প্রয়োজনের ভিত্তিতে। সেটা একমাত্র উপায় নয়। কোথাও যদি পাত্রের জল নিয়মিত ফেলা সম্ভব না হয় এবং তাতে মশার লার্ভা জন্মায়, তখনই ওই পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।’’

কিন্তু কাউন্সিলরদের একাংশ নিজেদের পাড়ায় প্রচার চালিয়ে বলছেন, বাড়ির ছোটখাটো পাত্রের জমা জলে নুন মেশানো হলে তাতে ডেঙ্গির মশা জন্মাবে না। ওই কাউন্সিলরদের দাবি, পুর স্বাস্থ্যকর্তারা যা বলেছেন, প্রচারে তাঁরাও সেটাই বলেছেন। এতে অন্যায়টা কোথায়? ছ’নম্বর বরোর এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর যে ভাবে নির্দেশ দিচ্ছে, সে ভাবেই তো প্রচার করছি। সাধারণ মানুষ তো অত জটিলতা বোঝেন না।’’
আর এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘স্থানীয় পুর স্বাস্থ্য প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেই তো প্রচার করছি। এর মধ্যে ভুলটা কোথায়!’’ ছ’নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সঞ্চিতা মণ্ডল বলেন, ‘‘নুনের কথা যখন ওয়ার্ডের মানুষকে বলছি, তখন সেখানে স্বাস্থ্য অফিসারেরাও তো থাকছেন।’’

যদিও স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, জলে নুন মেশানো নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা করছেন কাউন্সিলরদের একাংশ। তা ছাড়া, ওই পদ্ধতির একটি সমস্যাও রয়েছে। কারণ, কোনও পাত্রের জমা জলে মশার লার্ভা জন্মাচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য ‘প্রশিক্ষিত চোখ’ দরকার। সাধারণ মানুষের পক্ষে তা চেনা সম্ভব না-ও হতে পারে। তাই নুন ব্যবহারের বদলে পাত্রের জল ফেলে দেওয়াই ভাল। আর একটি বিষয় হল, আগে থেকে জলে নুন মিশিয়ে রাখলে কোনও লাভই হয় না। কিন্তু অনেক ওয়ার্ডেই সেই বিভ্রান্তিকর প্রচার চলছে বলে জানান পুরকর্তাদের একাংশ। পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘ডেঙ্গি প্রতিরোধে বাড়িতে রাখা পাত্রের জলে নুন মেশানোটাই একমাত্র উপায় নয়। জল যাতে না জমে, সে দিকেই খেয়াল রাখা উচিত। সেই সঙ্গে বাড়ির কোথায় জল জমে থাকলে তা পরীক্ষার জন্য পুরকর্মীদের সাহায্য করা উচিত।’’

Dengue campaign mosquito borne diseases mosquito Dengue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy