E-Paper

উদাসীনতা এবং অজানা কোমর্বিডিটিই কি তরুণ-মৃত্যুর ফাঁদ

ডেঙ্গিতে কমবয়সিদের মৃত্যুর নেপথ্যে রোগ বা সেটির উপসর্গের প্রতি উদাসীন মনোভাবকেও দায়ী করছেন চিকিৎসকদের বড় অংশ।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:১৫
An image of Dengue Death

—প্রতীকী চিত্র।

রাজ্যে ডেঙ্গিতে একের পর এক মৃত্যু হয়েই চলেছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর তার কোনও পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে না আনলেও বেসরকারি সূত্রের খবর, চলতি মরসুমে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৪৮। তাঁদের মধ্যে ৫০ বছরের কমবয়সিই ৩৮ জন। মৃতের এই তালিকায় রয়েছে ন’মাসের শিশুও!

ডেঙ্গিতে কমবয়সিদের মৃত্যুর নেপথ্যে রোগ বা সেটির উপসর্গের প্রতি উদাসীন মনোভাবকেও দায়ী করছেন চিকিৎসকদের বড় অংশ। আবার চিহ্নিত না হওয়া কোমর্বিডিটিও একটি কারণ বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে শুধরে দিচ্ছেন আরও একটি প্রচলিত ধারণাকে যে, কোমর্বিডিটি শুধুমাত্র বয়স্কদেরই থাকে। কোমর্বিডিটি যে এখন কমবয়সিদের মধ্যেও থাকে, সেটাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তবে সেটাই একমাত্র কারণ বলে ধরে নিয়ে ডেঙ্গির সংক্রমণকে লঘু করতে নারাজ তাঁরা।

জানা যাচ্ছে, চলতি মরসুমে রাজ্যে ৫০ বছরের কমবয়সি যে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে কলকাতা পুর এলাকার বাসিন্দা ১২ জন। যাঁদের মধ্যে আট জনের বয়স ১০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। অন্য দিকে, অন্যান্য জেলা মিলিয়ে ৫০ বছরের কমবয়সি মৃতের সংখ্যা ২৬। যাঁদের মধ্যে ন’জনের বয়স ১০ থেকে ৩০ বছরের ভিতরে। বি সি রায় শিশু হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছিল ন’মাসের এক শিশুর।

চলতি বছরে ডেঙ্গিতে মৃতদের মধ্যে তারুণ্যের আধিক্যের পিছনে কী বিশেষ কারণ রয়েছে? সংক্রামক রোগের চিকিৎসক যোগীরাজ রায় বলছেন, ‘‘কোমর্বিডিটি একটা কারণ। তবে সেটা একমাত্র বা মূল কারণ নয়। ডেঙ্গি হলে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কী রকম প্রতিক্রিয়া হবে, তার উপরে নির্ভর করে, সংক্রমণ তাঁর ক্ষেত্রে কতটা মারাত্মক হবে বা তাঁর কোন কোন অঙ্গ বিকল হবে।’’ তবে বিষয়টি এখনও পুরো জানা যায়নি বলেও জানাচ্ছেন যোগীরাজ। তাঁর কথায়, ‘‘এ বিষয়টি এখনও অনেকাংশে অজানা। তবে বিপজ্জনক উপসর্গ বুঝে সময়ে হাসপাতালে আসা এবং চিকিৎসা ঠিক পদ্ধতিতে শুরু করাটা জরুরি। বহু সময়ে যেটা কমবয়সিদের ক্ষেত্রে অবহেলিত হয়।’’

এই অবহেলার জায়গায় জোর দিচ্ছেন অন্য চিকিৎসকেরাও। তাঁরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি সংক্রমণের ফলে যে জ্বর আসে, তার প্রথম দুই থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত সময় হল ‘ফেব্রাইল-ফেজ়’। ওই সময়ে জ্বরের সঙ্গেই মাথা যন্ত্রণা, হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা, মাংসপেশি এবং গা-হাত-পায়ে ব্যথা, শরীরে র‌্যাশ বেরোনোর মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এই পর্বের শেষের দুই থেকে সাত দিনকে বলা হয় ক্রিটিক্যাল ফেজ়। জ্বর কমে গেলেও সেই সময়েই বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। যেটিকে কমবয়সিরা সাধারণ সমস্যা ভেবে উপেক্ষা করেন।

জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, প্রতি বার জোর দেওয়া হয় যে, জ্বর হলেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষা করাতে হবে। তাতে ডেঙ্গি পজ়িটিভ এলে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে কিছু পরীক্ষা করিয়ে পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘বিশেষ করে কমবয়সিদের মধ্যে দেখা যায়, জ্বর কমলেই তাঁরা নিজেদের সুস্থ ভেবে দৈনন্দিন কাজের পরিসরে ঢুকে যান। এই ভ্রান্ত আত্মবিশ্বাসের ফলে বিপদের প্রাথমিক লক্ষণ উপেক্ষিত হয়।’’

এম আর বাঙুর হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক শুভব্রত পাল জানাচ্ছেন, কমবয়সি যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের বড় অংশের ক্ষেত্রেই অজানা কোমর্বিডিটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ, পঞ্চাশের কম বয়সে অধিকাংশের কোমর্বিডিটি অজানা থাকে। ফলে তাঁদের ওই সংক্রান্ত কোনও চিকিৎসাও হয় না। শুভব্রত বলেন, ‘‘কোভিড ও ডেঙ্গিতে রক্তে শর্করার (সুগার) মাত্রা কমে যায়। কারণ, এই দুই সংক্রমণেই যকৃৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু ডেঙ্গি শকে থাকা রোগীর সুগার লেভেল বেশি, এমনটাও দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ, তিনি আগে থেকেই সুগারের সমস্যায় ভুগছিলেন, কিন্তু সেটা তাঁর অজানা ছিল।’’

পাশাপাশি, খাদ্যাভ্যাস এব‌ং দৈনন্দিন জীবনযাপনের ধরনও কমবয়সিদের শারীরিক অবস্থা দ্রুত সঙ্কটজনক করে দেওয়ার পিছনে একটি কারণ বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Dengue Dengue Fear Dengue fever

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy