Advertisement
E-Paper

পেঁয়াজ আগুন, তবু গরম পেঁয়াজি দু’টাকায়

অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি! উল্টোডাঙা মেন রোডে প্রতিদিন ২০০-২৫০টি পেঁয়াজি বানিয়ে বিক্রি করছেন বিমল রায়।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১০:৩০
দোকানে পেঁয়াজি ভাজছেন বিমল রায়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

দোকানে পেঁয়াজি ভাজছেন বিমল রায়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

পেঁয়াজির দাম দু’টাকা!

সপ্তাহ দুয়েক ধরে তেতে রয়েছে পেঁয়াজের বাজার। কেজি প্রতি ১৪০-১৫০ টাকার আশপাশে ঘোরাফেরা করছে দাম। শহরের বহু জায়গাতেই তেলেভাজার দোকানে পেঁয়াজি ভাজা বন্ধ। কোথাও পেঁয়াজি বিক্রি হলেও একটি পেঁয়াজির যা দাম ছিল, তার থেকে দু’-তিন টাকা করে বেড়েছে। এমনই যেখানে অবস্থা, সেখানে শহরের বুকেই এক জায়গায় মাত্র দু’টাকায় মিলছে একটি পেঁয়াজি!

অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি! উল্টোডাঙা মেন রোডে প্রতিদিন ২০০-২৫০টি পেঁয়াজি বানিয়ে বিক্রি করছেন বিমল রায়। উল্টোডাঙা মেন রোডের মুচিবাজারে রাস্তার ধারে নীল-সাদা টিনের বোর্ড ঘেরা একচিলতে দোকান। সামনে কাঠ ও কাচের তৈরি বাক্সে হরেক রকমের তেলেভাজার সঙ্গে রাখা পেঁয়াজিও। বাক্সের পাশেই কড়াইয়ে ফুটছে তেল। বেসনে পেঁয়াজকুচি ডুবিয়ে তাতে ছাড়ার ফাঁকেই দোকানি বললেন, ‘‘সব চপ দু’টাকা। পেঁয়াজির দামও তা-ই। শুধু শুধু দাম বাড়াব কেন!’’

উল্টোডাঙার করবাগানে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে থাকেন বিমলবাবু। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আগে কাজ করতেন সোদপুরের একটি কারখানায়। ১৯৮০ সালে সেটির ঝাঁপ বন্ধ হতেই পেটের তাগিদে মুচিবাজার মোড়ে উনুন, কড়াই আর ঝুড়ি নিয়ে বসে পড়েন। মাত্র ১০ পয়সায় বিক্রি করতে শুরু করেন পেঁয়াজি। এর পরে ওই জায়গাতেই দরমার ছোট্ট দোকান বানিয়ে সেখানে আলু, কাশ্মীরি লঙ্কা, ভেজিটেবল চপ, টোম্যাটোর চপ ও ধোকা বিক্রি শুরু। দাম অবশ্য একই থাকে সব তেলেভাজারই।

সময়ের সঙ্গে অবশ্য ‘বিমলদার চপের দোকান’-এর তেলেভাজার দামও বদলেছে। ১০ পয়সা থেকে ৫০ পয়সা। পরে এক টাকা। আর শেষ এক বছর কয়লার উনুন ছেড়ে গ্যাসের ওভেন ব্যবহার শুরু করতেই সব চপের দাম হয়েছে দু’টাকা। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ভাজেন প্রায় ১২০০ চপ। কিন্তু চড়া দামের পেঁয়াজের বাজারে এত কম দামে পেঁয়াজি বিক্রি কী ভাবে সম্ভব?

‘‘ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। আমি নিজেই কারিগর, নিজেই কর্মচারী। তাই লোকসান হয় না। শুধু শুধু দাম বাড়িয়ে পেঁয়াজির খদ্দের নষ্ট করব কেন?’’ পাল্টা প্রশ্ন বিমলবাবুর। জানালেন, প্রথম থেকেই স্থানীয় এক পাইকারি ব্যবসায়ীর থেকে পেঁয়াজ কিনছেন তিনি। এখনও তাঁর কাছ থেকেই ৫০ টাকা কেজি দরে প্রতিদিন আড়াই-তিন কেজি করে পেঁয়াজ কেনেন। বিমলবাবু বলেন, ‘‘পেঁয়াজের বস্তা নামানোর সময়ে হুকের মতো আংটা দিয়ে টানা হয়। তখন কিছু পেঁয়াজে চোট লাগে। আবার কিছু পেঁয়াজের খোসা খুলে যায়। ওই পেঁয়াজগুলি এত বছর ধরে উনি আমাকেই দিচ্ছেন।’’

দাগ লাগা পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি পেঁয়াজির গুণগত মান ঠিক থাকে কি? ‘‘নিশ্চয়ই থাকে। খদ্দেরদেরই জিজ্ঞাসা করুন। পেঁয়াজের সামান্য খারাপ অংশটা ফেলে দিই। আর অনেকে তো পেঁয়াজের সঙ্গে বাঁধাকপিও মিশিয়ে দেন। আমি তা করি না। ১০-১৫ গ্রাম পেঁয়াজের পেঁয়াজি বানাই।’’ প্রতিদিন দুপুর আড়াইটে থেকে দোকানে এসে চপ ভাজার প্রস্তুতি শুরু করেন বিমলবাবু ও তাঁর দাদা কানুবাবু। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ওই দোকানে ভিড় জমান স্থানীয় লোকজন ও পথচারীরা। তাঁদেরই এক জন দেবাশিস বসু বলেন, ‘‘প্রায় তিরিশ বছর ধরে এই দোকানের চপ খাচ্ছি। পেঁয়াজি তো সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। এমন কম দামে এমন স্বাদের চপ কোথাও পাওয়া যায় কি না, জানি না।’’ বিমলবাবুর ধোকা বাড়িতে রান্না করার জন্য কিনে নিয়ে যান স্থানীয় বাসিন্দারা। সকালে ওই দোকানেই বিক্রি হয় এক টাকা ও দু’টাকার কচুরি।

স্থানীয় কাউন্সিলর অনিন্দ্যকিশোর রাউত বলেন, ‘‘বিমলদার দোকানের চা আমি রোজই খাই। অফিসে কোনও অতিথি এলে ওই দোকান থেকেই চা, পেঁয়াজি, চপ এনে খাওয়াই।’’ ছোট্ট দোকানের একপাশে চা বিক্রি করেন বিমলাবুর ছোট ভাই শ্যামল। তিনি অমিতাভ বচ্চনের ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র ভক্ত। যদিও বিমল ও শ্যামল দু’জনেরই একটাই কথা, ‘বেশি টাকা চাই না। ডাল-ভাত খেয়েই যেন দিন কাটাতে পারি।’

Snacks Stall Ultadanga Onion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy