E-Paper

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও সেই জতুগৃহই হয়ে রইল বড়বাজার

দমকলের এক আধিকারিকের সাফ কথা, ‘‘সর্ষের ভিতরে ভূত তো লুকিয়ে আছেই। মুখ্যমন্ত্রী দেড় বছর আগে বড়বাজার নিয়ে বিহিত চেয়েছিলেন। তার পরেও অবস্থা বিন্দুমাত্র বদলায়নি।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:১০
বিপর্যয়: পুড়ছে আলো এবং বৈদ্যুতিক সামগ্রীর বহু দোকান। শনিবার সকালে, এজ়রা স্ট্রিটে।

বিপর্যয়: পুড়ছে আলো এবং বৈদ্যুতিক সামগ্রীর বহু দোকান। শনিবার সকালে, এজ়রা স্ট্রিটে। ছবি: সুমন বল্লভ।

বছর দেড়েক আগে নবান্নে হকার সমস্যা সংক্রান্ত বৈঠকে বড়বাজারের জতুগৃহ দশা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘‘বড়বাজারের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন? পুলিশ কমিশনারকে বলছি, ব্যবস্থা নিন।’’

ওই বৈঠকের দিনকয়েক আগে এজ়রা স্ট্রিটের টেরিটিবাজারে কাঠের বাক্সের গুদাম ভয়াবহ আগুনে ভস্মীভূত হয়েছিল। সেই ঘটনা প্রসঙ্গে বড়বাজারের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘হয় আপনারা ব্যবস্থা নিন, না হলে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।’’ পরক্ষণেই মুখ্যমন্ত্রী বড়বাজার নিয়ে কলকাতা পুরসভা, পুলিশ ও দমকলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার দেড় বছর পরেও বড়বাজারের সঙ্গিন দশার পরিবর্তন হয়নি। শনিবার এজ়রা স্ট্রিটের আগুন সেটাই দেখিয়ে দিল।

এজ়রা স্ট্রিটের যে বাড়িতে আগুন লেগেছিল, সেটিকে বেআইনি বলছেন স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি সন্তোষ পাঠক। তাঁর অভিযোগ, ‘‘যে বাড়িটিতে আগুন লেগেছে, সেটি বাইরে থেকে দোতলা বলে মনে হলেও ভিতরে বেআইনি ভাবে একাধিক ফ্লোর তৈরি হয়েছে। বছর দুয়েক আগে মেয়র, পুরসভার ডিজি-কে (বিল্ডিং) চিঠি দিয়েও কিছুই হয়নি।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘এই এলাকায় বার বার আগুন লাগে। সেটা যাতে না হয়, সে বিষয়ে দমকলকে বলেও কাজ হয়নি।’’

বেআইনি বাড়ির অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের দাবি, ‘‘এমন অভিযোগ কেউ করেননি। অভিযোগ পেলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব। সমস্যা হল, যখন বেআইনি নির্মাণ হয়, তখন কেউ অভিযোগ করেন না। ঝামেলা হলে তখন তাঁরা বলেন। তবে বেআইনি কিছু হয়ে থাকলে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

সন্তোষের প্রশ্ন, ‘‘বছর দুয়েক আগেও এই বাড়িটিতে আগুন লেগেছিল। দমকলের তরফে এফআইআর করা হয়েছিল। তার পরেও বাড়িটি ব্যবসার জন্য কী ভাবে দমকলের ছাড়পত্র পেল?’’ এ নিয়ে দমকল দফতরের একাধিক কর্মী-আধিকারিকেরাও সরব। দমকল সূত্রের খবর, এজ়রা স্ট্রিটে বহু বার আগুন লেগেছে। দমকলের বিধি মেনে বাড়ি তৈরি করা হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখে ‘টেকনিক্যাল এক্সপার্ট কমিটি’ (টিইসি)। অভিযোগ, টেকনিক্যাল এক্সপার্ট কমিটির তরফেও ঠিকঠাক নিয়ম মানা হচ্ছে না। দমকল দফতরে সপ্তাহে দু’বার ‘টেকনিক্যাল এক্সপার্ট কমিটি’র বৈঠক হয়। বৈঠকে একশোর বেশি ফাইল আলোচনায় উঠে আসে। প্রশ্ন, সে ক্ষেত্রে প্রতিটি ফাইল কি খুঁটিয়ে পর্যালোচনা করা সম্ভব?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দমকলের এক আধিকারিকের সাফ কথা, ‘‘সর্ষের ভিতরে ভূত তো লুকিয়ে আছেই। মুখ্যমন্ত্রী দেড় বছর আগে বড়বাজার নিয়ে বিহিত চেয়েছিলেন। তার পরেও অবস্থা বিন্দুমাত্র বদলায়নি।’’

যদিও টেকনিক্যাল এক্সপার্ট কমিটির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নস্যাৎ করে দমকলের ডিজি রণবীর কুমার বলেন, ‘‘শনিবার যেখানে আগুন লেগেছে, আগে সেখানে লাগেনি। পাশে লেগেছিল। এ দিন যেখানে আগুন লেগেছে, সেখানে দমকলের ছাড়পত্র আছে কিনা, দেখা হবে।’’ ডিজি জানান, যত পুরনোজায়গা আছে, তারা দমকলে আবেদনই করে না। বরং ফায়ার অডিট করে একাধিক বার নোটিস পাঠানো হয়। তবে বড়বাজার যে সেই তিমিরেই রয়েছে, পরোক্ষে মানছেন দমকলের ডিজি। তিনি বলেন, ‘‘অনেক লোক আছেন, অনুমতি ছাড়া ব্যবসা করছেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Firebreak Fire Mamata Banerjee

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy