Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Russia Ukraine War

Ukraine-Russia Conflict: ইউক্রেনের বন্দরে নদিয়ার যুবক-সহ জাহাজে আটকে ২১ ভারতীয়, ‘ঠাকুর’ ভরসা-বলছে পরিবার

গম আনার জন্য ২৩ তারিখ পৌঁছেছিলেন ইউক্রেনের নিকোলেভ বন্দরে। গম বোঝাই কার্গো নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল ইতালিতে। কিন্তু রুশ হামলার জেরে আর সমুদ্রে পাড়ি দেওয়া সম্ভব হয়নি। দিবস বললেন,‘‘২৪ তারিখ সকালেই গম নেওয়া হয়ে গিয়েছিল, রাতে আমাদের কার্গো নিয়ে রওনা দেওয়ার কথা থাকলেও যুদ্ধের জন্য আটকে গেলাম। আর এক-দু’দিন সময় পেলেই আমরা বেরিয়ে যেতে পারতাম।’’ 

বামদিকে ইউক্রেনের নিকোলেভ বন্দর আটকে থাকা জাহাজ থেকে তোলা দৃশ্য। ডানদিকে দিবস সরকার।

বামদিকে ইউক্রেনের নিকোলেভ বন্দর আটকে থাকা জাহাজ থেকে তোলা দৃশ্য। ডানদিকে দিবস সরকার।

সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২২ ২১:২১
Share: Save:

রুশ হামলার জেরে বিপদে পড়েছেন ইউক্রেনে থাকা হাজার হাজার ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু বাস্তবিক অথৈ জলে পড়েছেন ওই দেশের নিকোলেভ বন্দরে আটকে পড়া সান অ্যাকোয়ামেরিন জাহাজের ২১ জন ভারতীয় কর্মচারী। যার মধ্যে রয়েছেন নদিয়ার বছর ৩৩-এর দিবস সরকার। ইউক্রেন থেকে ফোনে জানালেন, সমুদ্রপথে কোথায় কী মাইন লুকানো আছে বোঝা মুশকিল। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে জাহাজ নিয়ে এখান থেকে পালানো অসম্ভব। তাই স্থলপথেই ইউক্রেন থেকে বেরনোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

গম আনার জন্য ২৩ তারিখ পৌঁছেছিলেন ইউক্রেনের নিকোলেভ বন্দরে। গম বোঝাই কার্গো নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল ইতালিতে। কিন্তু রুশ হামলার জেরে আর সমুদ্রে পাড়ি দেওয়া সম্ভব হয়নি। দিবস বললেন,‘‘২৪ তারিখ সকালেই গম নেওয়া হয়ে গিয়েছিল, রাতে আমাদের কার্গো নিয়ে রওনা দেওয়ার কথা থাকলেও যুদ্ধের জন্য আটকে গেলাম। আর এক-দু’দিন সময় পেলেই আমরা বেরিয়ে যেতে পারতাম।’’

মাঝে মধ্যেই বোমার আওয়াজ এবং জাহাজ থেকেই যে পরিমাণ আগুন আর ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে তাতে দিবস মনে করছেন নিকোলেভ বন্দরের দু-চার কিলোমিটারের মধ্যেই আক্রমণ চলছে। ইউক্রেনের বন্দরে রুশ হামলায় এক বাংলাদেশি জাহাজ ক্ষতি হয়েছে বলে জানালেন শঙ্কিত দিবস। ‘‘ওই খবর জানতে পেরে ক্যাপ্টেন বাংলাদেশি জাহাজের অবস্থান স্যাটেলাইটে দেখলেন। আমাদের জাহাজ থেকে মাত্র ৭.৫ মাইল দূরেই ছিল ওই জাহাজটা।’’বললেন তিনি।

ইউক্রেনের রাজধানী কিভ থেকে প্রায় ৪৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সমুদ্র বন্দর নিকোলেভ। এখানেই গত আটদিন ধরে আটকে রয়েছেন দিবসরা। দিবস ছাড়াও ওড়িশা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশেরও বাসিন্দারা আটকে রয়েছেন বলে জানালেন তিনি। বাড়ি ফেরা নিয়ে সকলেই উদ্বিগ্ন। ওই কার্গোর মুম্বইয়ের দফতরে থেকে দূতাবাসে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানালেন দিবস। তিনি বলেন, ‘‘অফিস থেকে আমাদের নামের তালিকা দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি। আমাদের সুরক্ষিত রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানানো হয়ছে অফিস থেকে। কিন্তু আমাদের কী ভাবে উদ্ধার করা হবে সেটা বুঝতে পারছি না। অফিস থেকে বলছে আমাদের কিভে যেতে হবে। সেখানে গেলে আমাদের ফেরার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’’ বললেন দিবস।

ইউক্রেনের নিকোলেভ বন্দর

ইউক্রেনের নিকোলেভ বন্দর

গুগল ম্যাপ বলছে নিকোলেভ বন্দর থেকে গাড়িতে কিভ যেতে ছ’ঘন্টার উপর সময় লাগবে। দিবসের কথায়,‘‘যেখানে আমাদের যেতে বলা হচ্ছে সেখানে পৌঁছতে ৪-৫ ঘন্টা সময় লেগে যাবে। তারপর এই ঠান্ডায় কোনও বাঙ্কারে জায়গা পাবো কি না, খাবার বা জল পাবো কি না তাও অনিশ্চিত। তবে দূতাবাসে পৌঁছে গেলে আর কোনও সমস্যা হবে না বলছে।’’ যদিও ইউক্রেন থেকে অনেকেই জানাচ্ছেন বর্তমান অবস্থায় গাড়ি পাওয়াই যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে হাঁটা পথে নিকোলেভ থেকে কিভ ৯৫ ঘন্টার রাস্তা।

২০২১ সালের ৬ অগস্ট চাকদহের বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন দিবস। মা, স্ত্রী, তিন বছরের ছেলে এবং অসুস্থ দাদা রয়েছেন বাড়িতে। দিবসের রোজগারেই সংসার চলে বলে জানালেন দিবসের স্ত্রী ঝর্ণা সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছি। কিন্তু কবে ফিরবে এখনও জানি না। কখনও কাঁদছি, কখনও ঠাকুরকে ডাকছি। কী করলে যে ও বাড়ি ফিরবে বুঝতে পারছি না।’’

কার্গোর চাকরিতে একবার সমুদ্রে পাড়ি দিলে আট-নয় মাস সমুদ্রেই কেটে যায় বলে জানালেন দিবস। আটকে থাকা কার্গোতে প্রধান রাঁধুনি দিবস বললেন, ‘‘২৪ তারিখ ফিরতে না পেরে ২৫ তারিখ আমরা খাবার মজুত করি। শাক সব্জির অভাব হলেও ভাত-ডাল-রুটি খেলে ২৫দিন মতো চালিয়ে দিতে পারব।’’ মাস ছয়েক আগে কানাডা থেকে সমুদ্রে পাড়ি দিয়ে ছিলেন দিবসরা। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইতালি-সহ একাধিক দেশে মালপত্তর ওঠানো নামানো হয়েছে। ইউক্রেন থেকে ইতালিতেই ফেরার কথা ছিল। আপাতত নিকোলেভ থেকে নদিয়া ফেরার রাস্তা খুঁজছেন দিবস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Russia Ukraine War Russia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE