Advertisement
E-Paper

‘সবার রঙে রং মিশিয়ে স্বাধীনতার স্বাদ’

সদ্যপ্রয়াত কবি রাহত ইন্দওরির স্মরণ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে স্বাধীনতা দিবসের অনেকটা কেটেছে নওশিনের।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২০ ০২:৪০
দুরত্ব-বিধি মেনে স্বাধীনতা দিবস পালন। বাইপাসের ধারে পঞ্চান্নগ্রাম এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

দুরত্ব-বিধি মেনে স্বাধীনতা দিবস পালন। বাইপাসের ধারে পঞ্চান্নগ্রাম এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

শহর জুড়ে তেরঙা মিছিল। সঙ্গে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ভগৎ সিংহের ছবি। আর সংবিধান রক্ষার তাগিদে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথে নামা বিনি সুতোর বাঁধনে গাঁথা আত্মীয়তার স্বাদ।

এ দেশের ৭৪তম স্বাধীনতা দিবসে অনিবার্য ভাবে এ ছবি উঠে আসা স্বাভাবিক ছিল কয়েক মাস আগেও। নাগরিকত্ব আইনবিরোধী আন্দোলনটাকেই তখন ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের’ আখ্যা দিয়েছিল নাগরিক সমাজের একাংশ। তবে অতিমারির পটভূমিতে ১৫ অগস্ট নিচু তারে বাঁধা থাকলেও শহরের সিএএ বিরোধী আন্দোলনের মুখগুলিকে ফের মিলিয়ে দিল এই স্বাধীনতা দিবস।

‘ইনক্লাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানের রূপকার স্বাধীনতা সংগ্রামী কবি হসরত মোহানির নাতি, কলকাতাবাসী ইউনিস মোহানির সঙ্গে মুশায়েরার ডিজিটাল আসরে সে দিন বসেছিলেন বেড়াচাঁপার মেয়ে, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের গবেষক স্বপ্না রায়। যাঁর ‘কাগজ দেখতে চাও?’ কবিতায় কোনও কাগজে কখনও না-লেখা বস্তির ক্ষুধার্ত চাঁদ, তৃতীয় লিঙ্গের প্রান্তিকতা থেকে দেশের রেললাইনে ঘরে ফিরতে চাওয়া শ্রমিকের রক্তের ছিটেও উঠে এল।

‘‘লকডাউন পর্বেও গরিবের প্রতি অবিচার, সমাজকর্মীদের উপরে জুলুম কমেনি। এই স্বাধীনতা দিবসে পথের নামার কারণের অভাব ছিল না। তবু সংযত থেকেছি।’’ —বলছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে গবেষণারত নওশিন বাবা খান। পার্ক সার্কাসের ধর্না মঞ্চই মিলিয়ে দিয়েছিল নওশিন-স্বপ্নাদের। নওশিনের কথায়, ‘‘স্বাধীনতা দিবসেও দূরত্ব-বিধির প্রশ্নে আপস করিনি। তাই আমরা টেনেটুনে পাঁচ জন বাইপাসের কাছে ভিড় এড়িয়ে পতাকা তুলি।’’ বন্ধুদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সেই ছবি দেখে গালে তেরঙা লেপে নিজস্বী পাঠিয়েছেন নাসরিন হাবিব। হাসতে হাসতে বলেছেন, ‘‘গেরুয়া রং বাড়িতে ছিল না। বিরিয়ানির জাফরান মেখেছি। রংটা মন্দ আসেনি কিন্তু!’’ খিদিরপুরের বধূ, মেক্সিকোর একটি সংস্থায় অনলাইন কর্মরত লুমাহ ইয়াসিন আন্দোলনের সময়ে পার্ক সার্কাসের মাঠে প্রায়ই আসতেন। তাঁর ছেলে মাঠে রাত জেগে পড়েই নবম শ্রেণির পরীক্ষা দিল। লকডাউন পর্বে এখন তিনি সিএএ বিরোধী বার্তা দিতে #আইরেজিস্টফ্রমহোম (বাড়ি থেকে প্রতিরোধ করছি) ডাক দিয়ে নানা ডিজিটাল আসরে সরব। বলছিলেন, ‘‘মনটা খারাপ, করোনার দাপট না-থাকলে পার্ক সার্কাসের মাঠের বন্ধু সোহিনীর সঙ্গে ঠিক দেখা হত।’’

সদ্যপ্রয়াত কবি রাহত ইন্দওরির স্মরণ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে স্বাধীনতা দিবসের অনেকটা কেটেছে নওশিনের। পার্ক সার্কাসের ধর্নার নিয়মিত মুখ ওষুধ ব্যবসায়ী মহম্মদ ইমরান, বারাসতের নার্সিং শিক্ষিকা নাসরিন নাজমা, কলেজপড়ুয়া শুভদীপ চক্রবর্তীরা ডিজিটাল আসরেই গান-গল্প-ইতিহাস চর্চায় প্রতিবাদের সঙ্কল্প বহন করছেন। ইমরান বলছিলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে মিল-অমিল দু’টোই আছে। এই সবার রঙে রং মিশিয়েই স্বাধীনতার আসল স্বাদ!’’

কয়েক দিন আগে রামমন্দির ভূমিপুজোর অনুষ্ঠানের দিনটিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে তুলনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তা কিন্তু বিঁধছে সিএএ-এনআরসি বিরোধী প্রতিবাদীদের অনেককে। ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায়ের মতে, ‘‘নাগরিকত্ব আইনবিরোধী লড়াইটাই সংবিধান রক্ষার লড়াই। তার সঙ্গেই বরং স্বাধীনতার সংগ্রামের মিল।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘রামমন্দিরে সঙ্ঘ প্রভাবিত একাংশের স্বপ্নপূরণ হলেও সব হিন্দু রামমন্দির চান, তা বলা যায় না। স্বাধীনতার লড়াইয়ের সঙ্গে তার ফারাক আকাশ-পাতাল। সংবিধান রক্ষা মানে সকলের অধিকারের লড়াই। তা স্বাধীনতার লড়াইয়ের সঙ্গে অবশ্য তুলনীয়।’’

Independence Day 2020 Independence Day Celebration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy