E-Paper

খুঁজে পাওয়া ‘বাবা’র পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে ডিএনএ পরীক্ষা

অসমের তেজপুর থেকে ২৪ বছর আগে নিখোঁজ হয়ে যান সেনাকর্মী রাধে চৌরাসিয়া। দিনকয়েক আগে রাধের মতোই এক জনকে ব্যারাকপুর স্টেশন চত্বরে খুঁজে পান হ্যাম রেডিয়োর সংগঠনের সদস্যেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৫:১৮
An image of old man

সেনাকর্মী রাধে চৌরাসিয়া। —নিজস্ব চিত্র।

‘‘রাধে...।’’ ব্যারাকপুর স্টেশন চত্বরে দাঁড়িয়ে এই নাম ধরেই বৃদ্ধকে ডেকেছিলেন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব’-এর সদস্যেরা। সেই ডাক শুনে বৃদ্ধ ঘুরে তাকাতেই অদূরে দাঁড়ানো উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা যুবকের চোখ বেয়ে নেমে এল জলের ধারা। নিচু স্বরে হিন্দিতে ওই যুবক বললেন, ‘‘বাবার মতোই তো মনে হচ্ছে।’’

অসমের তেজপুর থেকে ২৪ বছর আগে নিখোঁজ হয়ে যান সেনাকর্মী রাধে চৌরাসিয়া। দিনকয়েক আগে রাধের মতোই এক জনকে ব্যারাকপুর স্টেশন চত্বরে খুঁজে পান হ্যাম রেডিয়োর সংগঠনের সদস্যেরা। কেউ ওই বৃদ্ধকে কিছু খেতে দিলে তিনি সেনাবাহিনীর কর্মীদের মতো স্যালুট করতেন। এই খবর জানতে পেরেই রাধে চৌরাসিয়া নামে সেই নিখোঁজ সেনাকর্মীর ছেলে রাজকুমার চৌরাসিয়া ব্যারাকপুরে এসে পৌঁছন। ওই বৃদ্ধের সঙ্গে হারানো বাবার দৈহিক সাদৃশ্য দেখে ও বৃদ্ধের মুখে গ্রামের একাধিক বাসিন্দার নাম শুনে রাজকুমার মনে করেছেন, ব্যারাকপুর স্টেশনের ওই ভবঘুরে তাঁরই বাবা রাধে।

কিন্তু আবেগের সঙ্গে যুক্তির সংঘাতও চলছে তাঁর মনের ভিতরে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব’-এর সদস্যদের সঙ্গে মঙ্গলবার সকালে ওই বৃদ্ধকে দেখতে রাজকুমার ব্যারাকপুর স্টেশনে পৌঁছন। দূর থেকে রাধের নাম ধরে ডাকতেই তিনি সাড়া দেন। তাতেই আবেগতাড়িত হয়ে কেঁদে ফেলেন রাজকুমার। বৃদ্ধের সঙ্গে নিজের বাবার শারীরিক গঠনের মিল খুঁজে পান রাজকুমার। এখন নিজের মনের সংশয় দূর করতে বৃদ্ধের ডিএনএ পরীক্ষা করাতে চান তিনি।

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব’-এর সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস জানান, এ দিন রাজকুমার বৃদ্ধের কাছে গিয়ে জানান, তিনি দেউড়িয়া থেকে আসছেন। গ্রামের নাম বলতেই বৃদ্ধ সেখানকার কয়েক জন প্রতিবেশীর নামও বলেন। যা শুনে রাজকুমার আরও অবাক হয়ে যান। রাজকুমার জানান, তিনি বৃদ্ধকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে তাঁর ডিএনএ পরীক্ষা করাতে চান। এ দিন বৃদ্ধকে নিয়ে রাজকুমার উত্তরপ্রদেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।

যদিও শুরুর দিকে ওই বৃদ্ধ কোনও ভাবেই রাজকুমারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চাইছিলেন না। বার বার নাগাল ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। স্টেশনে দাঁড়ানো লোকাল ট্রেনে উঠে পড়ার চেষ্টাও করেন। বৃদ্ধের উদ্ধারকারীদের রাজকুমার জানান, তিনি মোটামুটি নিশ্চিত যে, ওই বৃদ্ধই তাঁর হারিয়ে যাওয়া বাবা। কিন্তু গ্রামের মানুষ জানেন, রাধের মৃত্যু ঘটেছে। যে হেতু সেনাবাহিনীর নিয়ম মেনে পুতুল জ্বালিয়ে রাধের অন্ত্যেষ্টি হয়েছিল তাঁর গ্রামে। রাজকুমার বলেন, ‘‘ধরে নিচ্ছি, উনিই আমার বাবা। ওঁর সঙ্গে বাবার অনেক মিল রয়েছে। তবু পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আমি দেশের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ওঁর চুলদাড়ি কামিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ পরীক্ষা করাব। সেই রিপোর্ট যা-ই আসুক, তাতে কিছু যায়-আসে না। ওঁকে আমি আমার বাড়িতেই রাখব। যে ক’দিন উনি বাঁচবেন, আমার কাছেই থাকবেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ham Radio Club Ham Radio army

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy