প্রতীকী ছবি।
এ বছরের ১৯ এপ্রিল কলকাতা শহরে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য। কিন্তু সেই সংখ্যা যে ফের বাড়তে পারে, চিকিৎসকেরা তখনই সে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত শনিবার শহরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৬ জন। রবিবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০-তে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এখন বাড়ছে। কলকাতায় করোনা পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আক্রান্তের সংখ্যা খানিকটা বাড়ায় চিন্তায় চিকিৎসকেরা। পুর চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, করোনা বিদায় নিয়েছে ধরে নিয়ে ৯০ শতাংশ মানুষই এখন রাস্তাঘাটে মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এই বেপরোয়া মানসিকতাই ফের যে কোনও দিন বিপদ ডেকে আনতে পারে।
মাস্ক পরার ক্ষেত্রে এই ঢিলেমি রুখতে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে বলেই মনে করছেন বক্ষরোগ চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘আজকাল তো মাস্ক পরা উঠেই গিয়েছে। সাধারণ মানুষ মাস্ক পরার বিষয়টিকে খুব হালকা ভাবে নিচ্ছেন। এখন করোনা কম থাকায় মৃত্যুভয় কাজ করছে না কারও মধ্যেই। সরকারি তরফেও প্রচারে ঘাটতি রয়েছে। উৎসব, অনুষ্ঠানে বড্ড বেশি ছাড় দেওয়া হয়েছে। আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যে ভাবে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল, সেই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হোক।’’ ধীমানবাবুর মতে, স্কুল, কলেজ যেমন চলছে, চলুক। কিন্তু সামাজিক ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে সরকার আগের মতো ভিড় নিয়ন্ত্রণ করলে ভাল হয়। না-হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে।
পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন প্রতিদিন প্রতিটি বরো এলাকাতেই কেউ না কেউ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। মাসখানেক আগে পর্যন্ত এই সংখ্যাটা ছিল নগণ্য। বেশির ভাগ বরোতেই আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের সময়ে দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন বরোয় আক্রান্তের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি ছিল। বিশেষত, ১০ নম্বর বরো অন্য সমস্ত বরোকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। রবিবার শুধু ওই বরোতেই ছ’জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর সাত নম্বর বরোয় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল পাঁচ। ১২ নম্বর বরোয় তিন জন আক্রান্ত হন।
গত এক মাসের পরিসংখ্যান বলছে, দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন বরোতেই আক্রান্তের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি। দেশের অন্যান্য শহরেও করোনা রোগীর সংখ্যা ফের বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে কলকাতায় করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মানুষ যে ভাবে কোভিড-বিধি উড়িয়ে চলছেন, তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকেই। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বেশির ভাগ মানুষেরই প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নেওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু অধিকাংশই বুস্টার ডোজ় নিচ্ছেন না। আমরা আবেদন করছি, যাঁদের বুস্টার ডোজ় নেওয়ার সময় এসে গিয়েছে, তাঁরা দয়া করে শীঘ্রই তা নিয়ে নিন।’’
মাস্ক পরা বা দূরত্ব-বিধি মেনে চলার ব্যাপারে মানুষের যে রকম অনীহা দেখা যাচ্ছে, তাতেও চিন্তায় পুর চিকিৎসকেরা। জুলাই-অগস্ট নাগাদ করোনার চতুর্থ ঢেউ আসতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কার কথা আগেই জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞেরা। পুর চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে সকলকেই সতর্ক থাকতে হবে।’’ গত শনিবার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘করোনাকে হালকা ভাবে নিলে বিপদ আমাদেরই। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংক্রমণ বাড়ছে। ট্রেনে ও বিমানে যাতায়াতে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই এই পরিস্থিতিতে সকলকেই মাস্ক পরতে হবে এবং দূরত্ব-বিধি মানতে হবে। এ ব্যাপারে আবার জোরদার প্রচার শুরু করব আমরা। সেই পরিকল্পনাই চলছে এখন।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy